মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০১ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

আবাসিক এলাকায় মানারাত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস চায় না গুলশানবাসী

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই, ২০২৩
মানারাতের স্থায়ী ক্যাম্পাস আশুলিয়া রাখার দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

রাজধানীর গুলশানে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস করার প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেছে গুলশানবাসী। গতকাল বুধবার বেলা ১১টায় গুলশানের মানারাত স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাস সংলগ্ন লেক রোডে গুলশান সোসাইটির প্রবীণ মুরুব্বি হানিফ মুন্সীর সভাপতিত্বে এই মানববন্ধন করেন তারা। এতে অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সমাজ সেবক আবুল কাশেম মজুমদার, সাংবাদিক নাহিদ হোসাইন, শিক্ষক মো. ইবরাহীম, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো.মিনহাজ। এছাড়াও স্থানীয় এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন
মানববন্ধনে বক্তরা দাবি করেন, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস গুলশানে আনা হলে স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পাশ্ববর্তী আবাসিক এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপত্তা চরম হুমকির মধ্যে পড়বে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস করার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা গুলশান-২ এলাকায় নেই। বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস আশুলিয়ায় স্থানান্তরের জন্য আমরা প্রশাসনে কাছে সহযোগিতা চেয়েছিলাম। কিন্তু সহযোগিতা না করার আজ বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নেমেছি। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আলাদা জায়গা আছে সেহেতু তাদেরকে সেখানে যেতে হবে। স্থানান্তরে কোনো জটিলতা নেই। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গড়িমসি করছে। আবাসিক এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় রাখা যাবে না। আমরা যে কোনো মূল্যে তাদেরকে এই আবাসিক এলাকা থেকে উচ্ছেদ করব।
মানববন্ধনে বক্তারা আরও অভিযোগ করে বলেন, ২০০১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদন পাওয়ার জন্য ভাড়া বাড়ি হিসেবে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করেছিল গুলশানে। তখনি গুলশানবাসীর আপত্তির প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় আশ্বস্ত করেছিল যে এটি অস্থায়ী ভিত্তিক। কিন্তু আজ তারা স্থায়ী করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আশুলিয়া মডেল টাউনে ২০১২ সালে প্রায় তিন দশমিক ৩ একর বা ১০ বিঘা জমি কিনে ১০ তলা ভবন নির্মাণ করে ক্যাম্পাস করা হয়েছে। যা ইউজিসিকেও অবহিত করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় মন্জুরি কমিশন স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করার জন্য বিভিন্ন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়কে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। ২০১৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মন্জুরি কমিশন চুড়ান্তভাবে আল্টিমেটাম দিলে ২০১৭ সালের ২৯ জানুয়ারি সরকারের প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে অনেকগুলো ফ্যাকাল্টির শিক্ষা কার্যক্রম চালু করে। ইউজিসির নির্দেশনা মোতাবেক সকল শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম আশুলিয়ার স্থায়ী ক্যাম্পাসে পরিচালিত হওয়ার কথা। কিন্তু তারা বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও ইউজিসির নির্দেশনা উপেক্ষা করে গুলশানে আবারও ক্যাম্পাস আনার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে একটি অসাধু চক্র।
তারা বলেন, গুলশান এলাকাবাসী অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করছে যে চক্রটি অজানা কারণে গুলশানে ক্যাম্পাস রাখতে তৎপর রয়েছে য এলাকাবাসীর জন্য খুবই দঃখজনক। আবাসিক এলাকার পরিবেশকে ঠিক রাখার জন্য এলাকাবাসী বিভন্ন সময়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে চাইলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুরোধে তা হয়ে উঠেনি। তবে অসাধু চক্রটি রাতের আধারে মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী এ ক্যাম্পাসে ‘স্থায়ী ক্যাম্পাস’ শিরোনামে সাইনবোর্ড দেয়া হয়েছে যা কোনভাবেই আইনসিদ্ধ নয় এবং গুলশান এলাকাবাসীকে বৃদ্ধাংগুলি প্রদর্শনের নামান্তর।

বক্তারা বলেন, এলাকাবাসী বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ইউজিসিসহ কম্পিটেন্ট অথরিটির সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। এতে অনেকটা কেচো খুড়তে সাপ বেরিয়ে আসে। তারা জানতে পারে যে ইউজিসির যে পত্রের বরাতে সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে সে পত্রে গুলশান ক্যাম্পাসকে স্থায়ী ক্যাম্পাস ঘোষণার কোন আলোচনাই নেই। সেখানে ইউজিসি জানিয়েছে ৩ মাসের মধ্যে গুলশান ক্যাম্পাসের জমির কাগজপত্র রাজউক থেকে সংগ্রহ করে ইউজিসিতে সাবমিট করতে হবে (এটাও ইউজিসিকে বাধ্য করে লিখিয়ে নেয়া হয়েছে, আইনত ইউজিসি এটা বিশ্ববিদ্যালয়কে বলতে পারে না)। তারপর তারা আবেদন করতে বলেছেন জমির শর্তপুরণ সাপেক্ষে।
তাহলে রাতারাতি কেন এই সাইনবোর্ড টানানো হলো? যা বিশ্ববিদ্যালয় মন্জুরি কমিশন দ্বারা স্বীকৃত নয় এবং আইনগত কোন বৈধতা নেই সেখানে স্থায়ী ক্যাম্পাসের সাইনবোর্ড টানানো ছাত্র ছাত্রীদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার শামিল। বর্তমান ট্রাস্টিবোর্ডকে প্রতিনিয়ত কেউ বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছে এবং তাদেরকে মিসগাইড করে আশুলিয়া ক্যাম্পাস সম্পর্কে একটা নেতিবাচক ধারণা দিয়ে রেখেছে যাতে করে ট্রাস্টি বোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আসল চিত্র বুঝতে না পারে। সে কারণে তাদেরকে এ পর্যন্ত আশুলিয়া ক্যাম্পাসে যেতে দেয়া হয়নি। আশুলিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দৃষ্টিনন্দন ক্যাম্পাস রয়েছে। ইউজিসি কর্তৃপক্ষ সেই ক্যাম্পাস পরিদর্শন করে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
এখানে উল্লেখ্য যে ইতোপূর্বে ২০০৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন কর্তৃপক্ষ অস্থায়ী ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য রাজউকে আবেদন করে। তা জানতে পেরে এলাকাবাসী প্রতিবাদ জানায়, পরবর্তীতে রাজউক কর্তৃপক্ষও জানিয়ে দেয় যে স্কুলের জন্য বরাদ্দকৃত জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন আইনসিদ্ধ নয়। ফলশ্রুতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন কর্তৃপক্ষ এলাকাবাসীর অনুরোধকে সম্মান দেখিয়ে তাদের ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাতিল করে।
যেসব কারণে আবাসিক এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস চায় না গুলশানবাসী- ১. গুলশান একটি আবাসিক এলাকা এবং এই এলাকায় রাষ্ট্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা বসবাস করেন। এখানে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থাকলে তা অনেকটা বিষফোড়ার মত হয়ে থাকবে এলাকাবাসীর জন্য। তাই আবাসিক এলাকার নিরিবিলি পরিবেশের বিঘœ ঘটিয়ে কোনভাবেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস রাখা যাবে না। ২. গুলশান এলাকা একটি কুটনৈতিক অ ল হিসেবে সমাদৃত। এলাকা সংলগ্ন অনেক দেশের দূতাবাস রয়েছে যা সুচারুরুপে চলার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস একটা বড় ধরনের প্রতিবন্ধক হবে। ৩. বিশ্ববিদ্যালয় মানেই সেখানে পরিবহনের আধিক্য থাকবে, এলাকাবাসী এবং সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন চলাচলে মারাতœক বিঘœ ঘটবে এবং যানজট লেগেই থাকবে। ৪. আবাসিক এলাকার স্বাভাবিক পরিবেশ টিকিয়ে রাখা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না, কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের অবাধ চলাফেরা এবং উশৃঙ্খল জীবনযাপনের মারাতœক একটি খারাপ প্রভাব পড়বে এলাকাবাসীর জীবনে।
৫. বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে রাজনীতি করার একটা প্রবণতা অবশ্যই থাকবে ফলশ্রুতিতে রাজনৈতিক দ্বন্দ সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠবে যা এলাকাবাসীর স্বাভাবিক জীবনকে মারাতœকভাবে ব্যাহত করবে।
গুলশানবাসীর দাবি-আমাদের দাবি একটাই কালক্ষেপন না করে অনতি বিলম্বে আবাসিক এই এলাকা থেকে মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস সরিয়ে ফেলতে হবে।
মানারাতের স্থায়ী ক্যাম্পাস আশুলিয়া রাখার দাবিতে মানববন্ধন: মানারাতের ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস আশুলিয়া রাখার দাবিতে গুলশান ক্যাম্পাসের সামনে গত ১৯ জুলাই দুপুরে মানববন্ধন করেছে “সচেতন গুলশানবাসী” ব্যানারে এলাকাবাসী। মানববন্ধন থেকে তারা দাবি করেন, অনুমোদন পাওয়ার নিমিত্তে অস্থায়ী ভিত্তিতে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস পরিচালিত হয়ে আসছিল। ২০০১ সালে আবাসিক এলাকায় এমন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সময় এলাকাবাসী অনীহা প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চূড়ান্ত আল্টিমেটাম এর ভিত্তিতে ২০১২ সালে ৩.৩ একর জমি ক্রয় করে আশুলিয়াতে মানারাত ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করে এবং অল্প সময়ের ব্যাবধানে তা শেষ হয়। এবং বর্তমানে আশুলিয়া ক্যাম্পাসে ইউনিভার্সিটির কার্যক্রম পরিচালনা চলমান রয়েছে। বেশ কিছু দিন হলো গুলশানে অস্থায়ী ক্যাম্পাসের সাইনবোর্ড সরিয়ে স্থায়ী ক্যাম্পাসের সাইনবোর্ড লাগানো হয় যা এলাকাবাসীর নজরে আসে।
মানববন্ধনে এলাকাবাসী:যা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন দ্বারা স্বীকৃত নয় এবং আইনগত কোন বৈধতা নেই বলে সচেতন নাগরিক সমাজ দাবি করেন। তারা আরো বলেন ইউনিভার্সিটির বর্তমান ট্রাস্টি বোর্ডকে একটি স্বার্থসন্ধানী মহল বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে আশুলিয়া ক্যাম্পাস সর্ম্পকে নেতিবাচক ধারনা দিয়ে রেখেছে। এমন অবস্থায় এলাকাবাসী মনে করেন গুলশানের মত একটি কুটনৈতিক এলাকা, দৈনন্দিন চলাফেরা ও যানজটমুক্ত নিরাপদ চলাচলের জন্য অনতিবিলম্বে আবাসিক এই এলাকা থেকে মানারাত ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস সরিয়ে ফেলার জোর দাবি জানান।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com