ডেমোক্রেসি, হিউম্যান রাইটস এন্ড দ্য রুল অব ল ইন বাংলাদেশ” শীর্ষক সেমিনারে আব্দুর রউফ
বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের উদ্যোগে “ডেমোক্রেসি, হিউম্যান রাইটস এন্ড দ্য রুল অব ল ইন বাংলাদেশ” শীর্ষক সেমিনারে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচাপতি আব্দুর রউফ বলেন , দেশে প্রতিমুহূর্তে গণতন্ত্র হরন ও আইনের শাসন লংঘন হচ্ছে। মানুষের মৌলিক মানবাধিকার নাই। মানুষের ভোটের অধিকার নাই। দেশের মানুষ গণতন্ত্রের নমুনা দেখেছে ঢাকা ১৭ আসনের উপ নির্বাচনে, কিভাবে একজন নির্বাচনের প্রার্থীকে রাস্তায় ফেলে পিটানো হয়েছে। এতেই প্রমানিত হয়েছে বর্তমান আওয়ামী সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সরকার প্রকাশ্যে রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ করছে অথচ জামায়াত সহ বিরোধী দলকে সমাবেশ করতে দিচ্ছে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে মানুষকে মিথ্যা মামলায় হয়রানি করা হচ্ছে। এজন্য আওয়ামী লীগকে একদিন জনতার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের উদ্যোগে গত ১৯ জুলাই’ জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম মিলনায়তনে “ডেমোক্রেসি, হিউম্যান রাইটস এন্ড দ্য রুল অব ল ইন বাংলাদেশ” শীর্ষক এক সেমিনারের তিনি একথা বলেন। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আব্দুর রউফ। বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সভাপতি এডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকারের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের অধ্যাপক নকীব মোহাম্মদ নাসরুল্লাহ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডীন অধ্যাপক মু. আব্দুল হান্নান, প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ।
এডভোকেট আব্দুর রাজ্জাকের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য প্রদান করেন, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি এডভোকেট এস এম কামাল উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট ইউসুফ আলী, বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট ড. গোলাম রহমান ভুইয়া, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সিনিয়র সহ-সম্পাদক এডভোকেট মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ-সম্পাদক এডভোকেট সাইফুর রহমান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি এডভোকেট আব্দুল বাতেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ-সম্পাদক এডভোকেট রেজাউল করিম খন্দকার, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক ট্রেজারার এডভোকেট আবু বকর সিদ্দিক, বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় মানবাধিকার সম্পাদক এডভোকেট শফিকুর রহমান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি এডভোকেট জালাল উদ্দীন ভুইয়া। এছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন এডভোকেট লুৎফর রহমান, এডভোকেট মইন উদ্দিন ফারুকী, এডভোকেট আব্দুল করিম সহ দেশবরেণ্য আইনজীবীবৃন্দ।
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আব্দুর রউফ বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে একই সাথে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র ঢুকানো হয়েছে। একটার সাথে আরেকটি সম্পর্ক তেল আর পানির মতো। এটাই এখন রাষ্ট্রে সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্র দুটি বিপরীত জিনিস। ইংল্যান্ডে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয় প্রকাশ্যে। আমেরিকায় ২ মাস আগেই ব্যালট পেপার ছাপানো হয়ে ভোটারদের কাছে পৌঁছানো হয়। দেশে আজ আইনের শাসন ও মানবাধিকার নাই বলেই সর্বত্র সমস্যা দেখা দিচ্ছে। খারাপ আইন দিয়ে ভালো সমাজ প্রতিষ্ঠা করা যায় না। তিনি সবাইকে হিউম্যান ডিউটি যথাযথভাবে পালন করার আহবান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সভাপতি সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার বলেন, আমরা যদি উন্নত চরিত্রের অধিকারী ও ন্যায়পরায়ন হয় তবে আমরা সমাজ উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবো। বর্তমান রাষ্ট্র ব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রাম করতে হবে।
প্রবন্ধ উপস্থাপক এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, বিগত প্রায় ১৫ বছর যাবৎ বাংলাদেশের জনগণ নির্বাহী বিভাগের ভয়াবহ ক্ষমতার অপব্যবহারের শিকার হয়েছে। দুঃশাসন ও সর্বগ্রাসী মনোভাব শাসন ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যে রূপান্তরিত হয়েছে। ক্রমবর্ধমান দায়মুক্তির সংস্কৃতি কর্তৃত্ববাদী শাসক গোষ্ঠীর রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন ও নিপীড়ন ত্বরান্বিত করেছে। বাংলাদেশের সংবিধানে নাগরিকদের অধিকার রক্ষায় প্রসিদ্ধ বিধানসমূহ থাকা সত্বেও এদেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন একটি দূরবর্তী বিষয়। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এখন অনেক দূরের স্বপ্ন যা বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
তিনি আরও বলেন,বাংলাদেশের বৃহত্তম ইসলামী দল অতীতে প্রায় সকল সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বিগত ১৪ বছরে তিন দফায় ২৬ মাস কারাগারে বন্দি আছেন এবং ৫৫ দিন পুলিশ রিমান্ডে ছিলেন। নায়েবে আমীর, সাবেক এমপি মাওলানা আনম শামছুল ইসলাম বিগত ১৪ বছরে চার দফায় ২৬ মাস কারাগারে বন্দি আছেন এবং ১২ দিন পুলিশ রিমান্ডে ছিলেন। সেক্রেটারী জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পারওয়ার বিগত ১৪ বছরে ৭ বছর ৫ মাস কারান্তরীণ রয়েছেন এবং ৩৩ দিন পুলিশ রিমান্ডে থেকেছেন। তাকে একটির পর একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারান্তরীণ রাখা হয়েছে। এটি বাংলাদেশের পুলিশি ক্ষমতার অপব্যবহার ও বে-আইনি আটক দীর্ঘায়িত করার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। পুলিশ হেফাজতে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা শুধু শারীরিক নির্যাতন নয়, মানসিক নির্যাতন ও লাঞ্ছনার শিকার হন। আসন্ন নির্বাচনে বিরোধী দলীয় রাজনীতিবিদদের অংশগ্রহণে বাধা দিতে তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও হয়রানিমূলক কার্যক্রম চালানো হবে তা সহজেই অনুমেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রফেসর নকীব মুহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, দেশে প্রতিনিয়ত আইন লংঘনের ঘটনা ঘটছে। বিশ্ব পরিসংখ্যানে যদি আমরা দেখি তবে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসনে আমরা সবচেয়ে পিছনে রয়েছি। বাংলাদেশে কোনো মানবাধিকার নেই, বাক-স্বাধীনতা নেই। নির্বাচন কমিশন দুটি দলকে নিবন্ধন দিয়েছে যাদের কোনো অফিস আছে কিনা সন্দেহ। অথচ রাজপথে আন্দোলন করা গণমুখী দলগুলোকে নিবন্ধন দেওয়া হয়নি। দেশে গণতন্ত্র নাই বলেই হিরো আলমরা প্রতিবাদ করে। সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন প্রফেসর আব্দুল হান্নান বলেন, দেশে আইনের শাসন নাই। মানুষ বিচার পাচ্ছে নাই। সাধারণ নাগরিকদেরকে যখন তখন পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। থানায় জিডি করতে গেলে জিডি নেয়া হচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে ঐ ব্যাক্তির খোঁজ পাই না পরিবার। বিচার ব্যবস্থা শক্তিশালী হলেই রাষ্ট্র শক্তিশালী হয়।
সেমিনারে অন্যান্য বক্তারা বলেন, দেশে প্রতিমুহূর্তে গণতন্ত্র হরন ও আইনের শাসন লংঘন হচ্ছে। মানুষের মৌলিক মানবাধিকার নাই। মানুষের ভোটের অধিকার নাই। দেশের মানুষ গণতন্ত্রের নমুনা দেখেছে ঢাকা ১৭ আসনের উপ নির্বাচনে। কিভাবে একজন নির্বাচনের প্রার্থীকে রাস্তায় ফেলে পিটানো হয়েছে। এতেই প্রমানিত হয়েছে বর্তমান ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সরকার প্রকাশ্যে রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ করছে অথচ জামায়াত সহ বিরোধী দলকে সমাবেশ করতে দিচ্ছে না। সকল মামলায় জামিন পাওয়ার পরও সরকার জামায়াত নেতাদের মুক্তি দিচ্ছে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে মানুষকে মিথ্যা মামলায় হয়রানি করা হচ্ছে। যাদেরকে গুম করা হয়েছে তাদের পরিবার তাদের খোঁজ চায়। এজন্য আওয়ামী লীগকে একদিন জনতার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। রাষ্ট্র মেরামতের জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটাতে হবে।