সম্প্রতি দেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশনে ‘অপরাজিতা’ নামে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির এক সংবাদ উপস্থাপিকা সংবাদ পড়ে হতবাক করেছে সবাইকে। কিছুদিন আগে ভারতেও একজন এআই সংবাদ উপস্থাপিকা ‘সানা’ কে দেখা যায় খবর উপস্থাপনা করতে। ২০১৮ সালে চীনের শিনহুয়া বার্তা সংস্থা চালু করেছিল বিশ্বের প্রথম এআই পরিচালিত সংবাদপাঠক। এতে ব্যবহার করা হয়েছিল কম্পিউটার গ্রাফিকস। কিন্তু চলতি বছর সংস্থাটি প্রকাশ্যে এনেছে তাদের প্রথম এআই-পরিচালিত সংবাদপাঠিকা। গত মাসে রাশিয়ার সভয়ে টিভি তাদের প্রথম ভার্চুয়াল আবহাওয়া উপস্থাপক হিসেবে ‘স্নেজানা তুমানোয়া’কে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে।
প্রযুক্তির অন্যতম আবিষ্কার এআই বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের মস্তিষ্কের মতো করে কাজ করে। চিন্তাশক্তি, বুদ্ধি কিংবা বিশ্লেষণ ক্ষমতা মানুষের সহজাত। কিন্তু একটি যন্ত্রকে মানুষের মতো বুদ্ধিমত্তা দিয়ে, সেটিকে চিন্তা করানো কিংবা বিশ্লেষণ করানোর ক্ষমতা দেওয়ার ধারণাটিকে সাধারণভাবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলা হয়।
সব জায়গাতেই এখন ব্যবহার হচ্ছে এআই। এআই ব্যবহারে রয়েছে অনেক সুবিধা। এআই যদি সংবাদ উপস্থাপক হন তাহলে বেশ কিছু সুবিধা পাবেন সংস্থাটি। জেনে নেওয়া যাক মিডিয়া হাউজগুলোর এআই সংবাদ উপস্থাক হলে কী সুবিধা পাওয়া যাবে-
ক্রমাগত সংবাদ কভারেজ: এআই সংবাদপাঠকরা মানুষের মতো ক্লান্তি বা শিডিউল জটিলতা ছাড়াই দিনরাত ২৪ ঘণ্টা সংবাদপাঠ করতে পারে। এটি সার্বক্ষণিক কভারেজ এবং দর্শকদের কাছে তথ্যের সময়মতো প্রচার নিশ্চিত করে।
ভাষাগত দক্ষতা: এআই সংবাদপাঠকদের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বা আ লিক একাধিক ভাষায় সংবাদ প্রচার সম্ভব। ফলে কার্যকরভাবে এটি বিস্তৃত শ্রোতা শ্রেণির কাছে পৌঁছাতে এবং সামগ্রিক প্রচারণায় সাহায্য করে।
ধারাবাহিকতা এবং নির্ভরযোগ্যতা: এআই সংবাদপাঠকরা পূর্বনির্ধারিত শৈলী ও মানদ- মেনে ধারাবাহিকভাবে সংবাদ সরবরাহ করতে পারে। এটি মানবিক ত্রুটির (হিউম্যান এরর) আশঙ্কা কমায় এবং দর্শকদের কাছে নির্ভরযোগ্য সংবাদ সরবরাহ নিশ্চিত করে।
রিয়েল-টাইম ডেটা প্রসেসিং: এআই সংবাদপাঠকদের রিয়েল-টাইমে প্রচুর পরিমাণে ডেটা প্রক্রিয়াজাত করার ক্ষমতা রয়েছে, যা দ্রুত বিশ্লেষণ ও জটিল তথ্য উপস্থাপনে সক্ষম। যেমন- লাইভ নির্বাচনের ফলাফল, আর্থিক আপডেট বা খেলাধুলার স্কোর সম্প্রচার।
চ্যালেঞ্জ ও উদ্বেগ:এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এআই সংবাদপাঠ মিডিয়ার জন্য বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ ও উদ্বেগ তৈরি করেছে। এর মধ্যে রয়েছে-
১. মানবিক উপাদানের অভাব: এআই সংবাদপাঠ সম্পর্কিত প্রাথমিক উদ্বেগগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মানুষের আবেগ, অন্তর্দৃষ্টি ও সমালোচনামূলক চিন্তা করার ক্ষমতার অনুপস্থিতি। সাংবাদিকরা প্রায়ই তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি, অনুসঙ্গ এবং বিচার সংবাদ প্রতিবেদনে নিয়ে আসেন, যা এআই’র ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।
২. নৈতিক বিবেচনা: স্বচ্ছতা এবং প্রকাশের বিষয়ে নৈতিকতার প্রশ্ন উত্থাপন করে এআই সংবাদপাঠকরা। শ্রোতাদের জানার অধিকার রয়েছে, তারা কোনো মানুষের সংযুক্ত হচ্ছেন নাকি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে। এক্ষেত্রে আস্থা ও নৈতিকতার মান বজায় রাখতে স্পষ্ট যোগাযোগ এবং স্বচ্ছতা অপরিহার্য।
৩. বিশ্বাসযোগ্যতা ও পক্ষপাত: এআই সংবাদপাঠকরা অ্যালগরিদম ও প্রি-প্রোগ্রামড ডেটার ওপর নির্ভরশীল। এটি পক্ষপাত বা ভুল তথ্য সম্পর্কিত উদ্বেগ বাড়িয়ে দেয়। নির্ভুলতা, ন্যায্যতা এবং নিরপেক্ষ প্রতিবেদন নিশ্চিত করা এআই সিস্টেমের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
৪. প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা: মানবিক আচরণ, সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট বোঝা বা অলিখিত পরিস্থিতি পরিচালনার ক্ষেত্রে সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে এআই সংবাদপাঠকরা। অপ্রত্যাশিত ঘটনা বা ব্রেকিং নিউজের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া এআই সিস্টেমের জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে। সূত্র: কাউন্টার কারেন্টস