ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের জোরারগঞ্জ থানার সোনাপাহাড় ফেবো ফিলিং স্টেশনের সামনে সম্প্রতি ০২ জুন ২০২৩ ইং রাত ৩ ঘটিকার সময় সৌদিয়া বাস ও ট্রাকের সংঘর্ষে ‘পা’ হারিয়ে বিছানায় চটপট করছেন ৩৫ বছরের মোহাম্মদ নূরুল আলাল। নুরুল আলালের বাড়ি কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার বড় মহেশখালী এলাকার বড় মিয়াজি পড়ায়। সে মোঃ শফি’র বড় ছেলে। বাবা-মা এবং দুই ভাই- দুই বোন নিয়ে পরিবারের হাল ধরে ছিলেন বড় ছেলে আলাল। বর্তমানে তার ঘরে দুই বছরের মেয়ে তাসনিয়া আলাল, দশ মাসের পুত্র তাসনিম আলাল রয়েছে। আলাল, বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয় হতে আইন বিষয়ে স্নাতক এবং সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পারিবারের আর্থিক অনটনের কারণে আইন পেশায় নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য দীর্ঘ কয়েক বছর অপেক্ষা করতে পারেননি। জীবন-জীবিকার তাগিদে বেসরকারি সংস্থায় চাকরিতে যোগদান করেন। ফিরে এনেছেন পরিবারে স্বচ্ছলতা। আলাল যখন তিল তিল করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং দুই অবুঝ শিশুর ভবিষ্যত গড়ার লক্ষ্যে স্বপ্নে বিভোর। তখনি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সৌদিয়া বাস ও ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষের পর সবকিছু ওলোটপালোট হয়ে যায় তার স্বপ্ন। ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনায় সৌদিয়া বাসে থাকা এক যাত্রীর প্রাণ যায়। আলাল প্রাণে বাঁচলেও এখন দুঃসহ যন্ত্রণার জীবন কাটাচ্ছেন। চিকিৎসাধীন স্বামীকে নিয়ে হাসপাতালেই দিন কাটছে আলালের স্ত্রীর। এদের সাথে আছেন দুই অবুঝ শিশু। সেদিন কী ঘটেছিল- জানতে চাইলে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আলাল বলেন, “নতুন চাকুরির সুবাদে ঢাকায় বউ বাচ্ছাকে নিয়ে আসার জন্য ফ্যামিলি বাসা ভাড়া করেছেন। পহেলা জুন থেকে উঠতে হবে ফ্যামিলিসহ বাসায়। তাই পহেলা ২৩ই জুন ইং বৃহস্পতিবার অফিস শেষে রাত ১১:১৫ ঘটিকায় সৌদিয়া পরিবহন বাস, যাহার রেজিঃ- চট্র মেট্রো ব-১১-০৬৯৮, কোচ নং-৪৬২ (এস.সি.এস) এর সিট নং- বি-৪ এ বসে ঢাকা হতে মহেশখালীর উদ্দ্যশ্যে রওয়ানা দিই। পথিমধ্যে মধ্য রাতে মাত্র কয়েক মিনিটে, সম্পূর্ণ সৌদিয়া বাসের ড্রাইভারের অবহেলায় বাসসহ দুমড়েমুচড়ে যায় একটি পরিবারের স্বপ্ন। আর অনিশ্চয়তায় পড়ে যায় ছোট ছোট দুটি মাসুম বাচ্ছার ভবিষ্যৎ। তখন রাত প্রায় ৩.৩০ মিনিট। অধিকাংশ যাত্রী ঘুমাচ্ছিল। আমিও কিছুটা ঘুমের মধ্যেই ছিলাম। আমাদের সৌদিয়া গাড়ি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে ছুটছিল। আমার ঘুম ভাঙ্গে। দেখি বেপরোয়া গতিতে বাস চলছে। তখনি হঠাৎ চট্টগ্রাম গামী একটি ট্রাকের পিছনে ধাক্কা দিলে আমাদের সৌদিয়া পরিবহনের বাসের সামনের অংশ দুমড়েমুচড়ে যায়। এসময় আমার পা গাড়িতে আটকা পড়ে। এখন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ভয়াবহ সেই অভিজ্ঞতার কথাই মনে করছেন আলাল। কয়েক দফা অস্ত্রপচারের পর ডান পা হাঁটুর উপর পর্যন্ত কেটে ফেলেছেন চিকিৎসকেরা। বাম পায়ের আঘাত এখনও ভালো হয়নি। তিনি বলেন, গুরুতর আহত হয়ে বেঁচে গেছি- আলহামদুলিল্লাহ। কয়েক দফা অস্ত্রপচারের পর ডান পা হাঁটুর উপর পর্যন্ত কেটে ফেলে দেন চিকিৎসকেরা। এখন পুরোপুরি পরনির্ভরশীল হয়ে বেঁচে আছি। আহত আলাল প্রতিবেদকে জানান, সরকার থেকে শুরু করে যানবাহনের মালিক সমিতি বা ইউনিয়নগুলো কেউই দুর্ঘটনায় আমার পাশে দাঁড়ায় নি। নেই ক্ষতিপূরণের কোনো ব্যবস্থা করেনি। সৌদিয়া পরিবহনের সাথে যোগাযোগ করলেও কোনা সাড়া প্রদান করেননি তারা। পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম লোক দুর্ঘটনায় প্রথম পঙ্গু হয়ে উপার্জন হারান। এরপর তার চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত প্রায় তিন লাখের অধিক টাকা খরচ করতে গিয়ে পরিবারটিও নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। বন্ধু এবং সহকর্মীদের সহযোগিতায় এখনো চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছে। অবুঝ ১০ মাস ও দুই বছরের শিশু দুটির দিকে থাকাতেই আলালের চোখে অশ্রু টলটল করছে। দুই বছরের মেয়ে তাসনিয়া আলালের জিজ্ঞাসা- বাবা তুমি হাঁটবেনা? আলালের প্রত্যাশা বাচ্ছা দু’টির জন্য সে হাঁটতে চায়। হোক সেটি কৃত্রিম পা লাগিয়ে। এ জন্য সে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণ প্রত্যাশা করছে। দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং আইনজীবীদের নিকট সহযোগিতার নিবেদন করেন। দূর্ঘটনার বিষয়ে খবর নিয়ে জানতে পেরেছি, ঘটনার বিষয়ে সৌদিয়া পরিবহনকে অভিযুক্ত করে জোরারগঞ্জ থানায় এস.আই মাফুজের রহমান, সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর ৯৮/১০৫ ধারায় মামলা দায়ের করেন। যাহা জোরারগঞ্জ থানার মামলা নং- ৩(০৬)২৩ ইং হয়। উক্ত মামলা মূলে সৌদিয়া পরিবহনের বাস এবং ট্রাক জব্দ করলেও সৌদিয়া পরিবহনের ড্রাইভারকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি। আলাল এ প্রতিবেদককে বলেন, রাষ্ট্রের কাছে সে জরমযঃ ঃড় ষরভব এর পাশাপাশি জরমযঃ ঃড় হধঃঁৎধষ ফবধঃয এর নিশ্চয়তা আশা করেন।