মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

দখল হচ্ছে খাল দূষণ হচ্ছে নদী

শামীম আহমেদ বরিশাল প্রতিনিধি :
  • আপডেট সময় রবিবার, ৩০ জুলাই, ২০২৩

প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দখল ও দূষণে নাব্যতা হারিয়ে ক্রমেই অস্তিত্ব হারাতে বসেছে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের এক সময়ের খরস্রোতা নদী ও খাল। দখলকারীদের রাক্ষুসে থাবা এখনই থামানো না গেলে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে নদী মাতৃক এ অঞ্চলের অধিকাংশ নদী ও খাল। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কীর্তনখোলা নদীকে ঘিরে গোড়াপত্তন হয়েছিল বরিশাল শহরের। আজ দখল-দূষণে জৌলুস হারাচ্ছে সেই কীর্তনখোলা। নদীর দুই তীরে ডকইয়ার্ড, গোডাউন, কারখানাসহ বিভিন্ন স্থাপনার কারণে ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে নদী। এতে নদী তার স্বাভাবিক গতি-প্রকৃতি হারাতে বসেছে। অপরদিকে নগরবাসীর উন্মুক্ত জায়গায় ফেলা বর্জ্য ড্রেন, নালা হয়ে খালের পানিতে গিয়ে মিশছে। সেই খালের পানি যাচ্ছে কীর্তনখোলায়। এতে নদীর পানিও দূষিত হচ্ছে। এছাড়াও নগরীর খালগুলোর অবস্থাও খারাপ। ময়লা-আবর্জনা ফেলা ও সংস্কারের অভাবে ক্রমশ সরু হয়ে গেছে এসব খাল। বিশ্লেষকরা বলছে, এসব থেকে সহজেই ধারণা করা যায়, ধান-নদী-খালের দেশ বরিশালের সামনে বড় বিপদ আসছে। জলবায়ু পরিবর্তনে যে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে, তা যদি সত্যি হয় তাহলে বরিশালের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে। এ বিপর্যয় মোকাবেলা করতে হলে খাল-নদী দখল ও দূষণের বিরুদ্ধে সরকারী এবং বেসরকারী সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি বরিশালকে বাঁচাতে দখলদারদের প্রতিরোধ এবং দূষণকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী ব্যবস্থা নিতে হবে। সূত্রমতে, কীর্তনখোলা নদীবিধৌত বরিশাল নগরীতে ইতোমধ্যে ২২টি খাল দখল-দূষণে মরে গেছে। যে কয়েকটি টিকে আছে, তাও স্থানীয়রা নর্দমা হিসেবে ব্যবহার করছে। ফলে ক্রমেই নদী মরে গিয়ে পরিবেশ হুমকির মুখে পরেছে। শুধু নগরীর মধ্যদিয়ে প্রবাহিত খালগুলো নয়, এবার পরিবেশ বিপর্যয়ের হুমকিতে পরেছে খোঁদ কীর্তনখোলা নদী। নগরীর পাশ ঘেঁষে বহমান এ নদী পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে আসছে। কিন্তু নদীর তলদেশে পলিথিন ও প্লাস্টিক বজ্যের আস্তরণ পরার কারণে নদীর ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। নদী ড্রেজিংয়ের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা জানিয়েছেন, নদীর তলদেশের বেশ কয়েকটিস্থানে পলিব্যাগের আস্তরণ পরেছে। মূলত নগরীর ভেতরকার খাল থেকে এসব পলিথিন ও ময়লা-আবর্জনা কীর্তনখোলায় নির্গত হয়। এছাড়া বড় একটি অংশ বিলাস বহুল নৌযান কর্তৃপক্ষ ও যাত্রীদের অসচেতনার কারণে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে বুড়িগঙ্গার মতো করুণ পরিণতি হতে পারে শান্ত-স্নিগ্ধ রূপবতী কীর্তনখোলার। একইভাবে জেলার গৌরনদী উপজেলার মধ্যদিয়ে বহমান খরস্রোতা পালরদী নদী দখল ও দূষণে এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। অস্তিত্ব হারাতে বসেছে গৌরনদীর ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ আড়িয়াল খাঁ নদীর শাখা পালরদী নদী। নাব্যতা হ্রাসের কারণে নদীর কোথাও এখন হাঁটু পানি। ঢাকা থেকে যাত্রীবাহী লঞ্চ এখন আর গৌরনদী হয়ে তার শেষ গন্তব্যস্থল দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ ব্যবসায়ীক বন্দর টরকীতে যেতে পারছেনা। সরেজমিনে দেখা গেছে, নদীর উভয় তীরে জেগে ওঠা চর দখল করে প্রভাবশালীরা গড়ে তুলেছেন ঘর-বাড়ী, দোকান-পাটসহ বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা। তারা জাল কাগজপত্র তৈরী করে সরকারি খাস জমির মালিকানা দাবি করছেন। এমনকি কয়েকজন প্রভাবশালীরা গৌরনদী, টরকী বন্দরসহ বিভিন্নস্থানে নদী দখল করে পাকা দালান তৈরী করেছেন। ময়লা আবর্জনা ফেলে নদী দূষণ করা হচ্ছে। সবকিছু দেখেও না দেখার ভান করছেন স্থানীয় প্রশাসন। এ কারণে জনসাধারণের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে বিভাগের ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়া উপজেলায় অর্ধশতাধিক কৃষক গণস্বাক্ষর দিয়েও রক্ষা করতে পারছে তাদের কৃষি কাজে ব্যবহারিত হওয়া একটি খাল। প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে খালটি দখল করে স্থাপনা নির্মান করছে উপজেলা কৃষি অফিসের এক উপ-সহকারী কর্মকর্তা। সরেজমিনে দেখাগেছে, উপজেলার আমুয়া ইউনিয়নের বটতলা বাজারে শতবছরের পুরাতন একটি খাল দখল করে স্থাপনা নির্মান করছে কাঠালিয়া উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান খোকন। যদিও তার দবি একটি ঘর এখানে অর্ধশত বছর আগ থেকে ছিলো, এখন সেটি মেরামত করা হচ্ছে। তবে স্থানীয় কৃষকদের দাবি খালটি দখল করার ফলে তাদের কৃষিকাজ বাঁধাগ্রস্থ হবে। এদিকে দখলের বিষয়ে স্থানীয় ভূমি অফিস বাঁধা দিলেও তা মানেননি খোকন। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে হুমকির মুখে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। সম্প্রতি ঐ এলাকার ৪২ জন কৃষক উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা বরাবর গণস্বাক্ষর দিয়ে খালটি রক্ষার জন্য একটি লিখিত অভিযোগ করছে। অভিযোগে জানাগেছে, বটতলা এলাকার শতবছরের পুরাতন খালের একাংশ দখল করে ঘর নির্মান করছে কৃষি অফিসের উপ-সহকারী আসাদুজ্জামান খোকন। খাল দখলের ফলে শত শত একর জমির চাষাবাদ হুমকির মুখে পড়ছে। স্থানীয় কৃষকরা জানান, শুধু খাল দখলই নয় প্রভাব দেখিয়ে সাধারণ মানুষের জমিজমা মিথ্যা দলিলপত্র তৈরি করে দখল করারও অভিযোগ রয়েছে তার (খোকন) বিরুদ্ধে। বর্তমানে সরকারী খালটি নিজেদের দাবি করে খালের মধ্যে পাকা স্থাপনা করেছেন তিনি। খালের পানি চলাচলের গতিপথ নষ্ট করে দিনে দুপুরে অতিরিক্ত লোক নিয়ে দ্রুত নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন খোকন ও তার সহযোগীরা। কৃষক মিলন, সেলিম,জামাল, আলআমিন,তপন শীল ও মোঃ ফারুকসহ একাধিক ভুক্তভোগী বলেন, তার হুমকি ও দাপটে কেউ মুখ আছেন। আমরা প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা কামনা করছি। এবিষয়ে কাঠালিয়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মিজানুর রহমান চঞ্চল বলেন, সরেজমিনে তদন্ত করে শিগ্রই ব্যবস্থা নেয়া হবে। খাল দখলকারীদের কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা। একই উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর আউরা (গুদিকাটা) হয়ে কাঠালিয়া থানার সম্মূখ দিয়ে ফকির বাড়ি হয়ে বড় কাঠালিয়ার সাথে মিলিত হয়েছে ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি খাল। এক সময়ের খরস্রোতা এই খালটি আজ দখল ও দূষণে মরা খালে পরিণত হয়েছে। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দখল ও দূষণে নাব্যতা হারিয়ে ক্রমেই অস্তিত্ব হারাতে বসেছে কাঠালিয়া থানা সম্মূখের এক সময়ের খরস্রোতা খালটি। এখনই দখলকারীদের রাক্ষুসে থাবা এখনই থামানো না গেলে কাঠালিয়া উপজেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে খালটি। খালের উভয় তীর দখল করে প্রভাবশালীরা গড়ে তুলেছেন ঘর-বাড়ী, দোকান-পাটসহ বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা। পাশাপাশি খালটি ময়লা আবর্জনা ফেলে দূষণ করা হচ্ছে। খালের মধ্যে ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে এখন ময়লার ভাগাড় হয়ে দাঁড়িয়েছে অধিকাংশ খাল। সেই সাথে বাসাবাড়ির বাথরুমের মলমূত্রের ট্যাংকি খালের মধ্যে দেয়ায় পানির সঙ্গে মলমূত্র মিসে দূষিত হচ্ছে খালের পানি। তবে অধ্যাবদি সবকিছু দেখেও না দেখার ভান করছেন স্থানীয় প্রশাসন। ফলে জনসাধারণের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। খাল দখলকারীরা যতো বড়ই প্রভাবশালী হোক না কেন অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি সচেতন মহলের। অপরদিকে বরিশাল নগরীর ঐতিহ্যবাহী জেল খালসহ অধিকাংশ খাল কতিপয় প্রভাবশালীর আগ্রাসী থাবায় দখল হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া খালের মধ্যে ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে এখন ময়লার ভাগাড় হয়ে দাঁড়িয়েছে অধিকাংশ খাল। নদী-খাল বাঁচাও আন্দোলন কমিটির নেতারা বলেন, নদী ও খাল দখলকারীরা যতো বড়ই প্রভাবশালী হোক না কেন অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। নতুবা খুব শীঘ্রই নদী ও খালের জেলা বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ নদী ও খাল মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com