মানবজীবনের অনেকগুলো সমস্যার মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন সমস্যাটি অন্যতম। দিনদিন তা প্রকট আকার ধারণ করছে। জলবায়ুর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার দরুণ মানুষসহ প্রাণীকূলের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। সাধারণত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এপ্রিল-মে মাস বছরের সবচেয়ে উষ্ণতম মাস। কিন্তু এই বছর এসময় পেরিয়ে জুলাই মাসেও যে পরিমাণ তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে তা সত্যিই বিরল। ওয়ার্ল্ড ওয়েদার আ্যান্ট্রিবিউশন (ডব্লিউ ডব্লিউ এ) এর প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, প্রচন্ড দাবদাহের তীব্রতা গত ২০০ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। তীব্র গরমে একদিকে দেশে বিদ্যুৎ বিভ্রাট, অন্যদিকে রাস্তাঘাটে যানজট থাকার ফলে মানুষ প্রচন্ড গরমে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। সম্প্রতি প্রচন্ড গরমে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার এক বিদ্যালয়ে ২ শিক্ষার্থী মৃত্যুবরণ করে। তাদের দেখে অসুস্থ হয়ে পড়ে আরো ২০ শিক্ষার্থী। জলবায়ুর পরিবর্তনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বাস্তুতন্ত্রের প্রতিটা প্রাণীর উপর ও ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ডব্লিউএমও’র পেটেরি তালাস বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্ট এই চরম আবহাওয়া ২০৬০ সাল পর্যন্ত চলতে পারে। বিশ্বের ৪০টি হিমবাহ থেকে গড়ে ১.৩ মিটার পর্যন্ত বরফ গলে যেতে দেখেছেন গবেষকরা, যা গত দশকের চেয়েও অনেক বেশি। বায়ুমন্ডলে কার্বনডাই-অক্সাইডের ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ার ফলে গত গ্রীষ্মে আল্পসে ৬.২ শতাংশ হিমবাহ গলেছে, যা এখন পর্যন্ত রেকর্ড। বর্তমানের এই জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তনের ফলে প্রকৃতপক্ষে আমার দায়ী। কারণ, আমরা অপরিকল্পিত নগরায়ন, জ্বালানির অপব্যবহার, বৃক্ষ নিধন, কলকারখানা অপরিশোধিত কালো ধোঁয়া, বাতাসে কার্বনডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া, শিল্প কারখানার বায়ুতে বিষাক্ত ও ক্ষতিকর গ্যাসগুলো নির্গমন করে চলছি, যা বাতাসকে ভারী করে দূষিত করে তুলছে। এছাড়াও মানব সৃষ্ট বহু অসামাজিক কার্যকলাপই দায়ী জলবায়ু পরিবর্তনে, যার জন্য অস্বাভাবিক কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে আমাদের। আমাদের কর্মকান্ডের ফলেই আবহাওয়ার চেনাজানা ধরন বদলে গিয়ে পৃথিবী গরম হয়ে পড়েছে। জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণে রেখে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে হলে আগে আমাদের নিজেদের ভুলগুলোকে শুধরে সচেতন হতে হবে। বেশি বেশি করে বৃক্ষরোপণ, প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারে সাশ্রয়ী, শিল্প কারখানা থেকে নিঃসৃত ক্ষতিকর গ্যাসগুলো নির্গমন বন্ধ করে দিতে হবে। পরিবেশের প্রতিটি জিনিস ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। তাহলেই আশা করা যায়, পৃথিবীর জলবায়ু কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়