জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে চার বছরেও শেষ হয়নি দেওয়ানগঞ্জ-মোশাররফগঞ্জ স্টেশনের মধ্যবর্তী দিঘলকান্দি এলাকার ৩১নং রেল সেতুর নির্মাণ কাজ। ষাট ফিটের এ সেতুর কাজ নয় মাসে শেষ করার কথা থাকলেও দুই দফায় সময় বাড়িয়ে চার বছরেও শেষ হয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবহেলায় নির্ধারিত সময়ে সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন দেওয়ানগঞ্জ ঢাকা রুটে যাতায়াতকারী হাজার হাজার রেল যাত্রী। রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, দেওয়ানগঞ্জ ঢাকা রেলপথের দীঘলকান্দি ৩১নং রেল সেতুটি ২০২০ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেতুটি পুনর্র্নিমাণের জন্য সেবছরই রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয় দরপত্র আহ্বান করে। ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এস এস ইঞ্জিনিয়ারিং ট্রেড সেন্টার সেতু নির্মাণের কাজ পায়। এ কাজের ব্যয় ধরা হয় দুই কোটি ২৭ লাখ। ২০২১ সালের শুরুতে কাজ শুরু করে সে বছরের শেষের দিকে সেতুর কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদারের গাফিলতি ও দায়সারা ভাবের কারণে চার বছরেও শেষ হয়নি নয় মাসের কাজ। বুধবার সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুর কাজে কোন শ্রমিক নেই। ভাঙা সেতুতে শুধু ষাট ফিট দুরত্বে দুটি পিলার উঠেছে। ব্রিজের লাইনে স্লিপারে কাঠের বিটের পাত লাগানো হয়েছে। সেটাও নড়বড়ে। আন্তঃনগর তিস্তা ও কমিউটার চলাচলের সময় ব্রিজ জাম্পিং লক্ষ্য করা গেছে। এখনও দুই পিলারের উপর গাডার বসানো, ওয়াল ক্যাপ, দুই পাশের ওয়াল, দুই সাইডের ব্লক, মাটিকাটা, ঢালাইয়ের কাজসহ অনেক কাজ বাকি রয়েছে। এদিকে গুরুত্বপূর্ণ এ রেল সেতুর কাজ দীর্ঘদিনেও শেষ না হওয়ায় ভোগান্তি, নিরাপত্তা আশংকায় রয়েছে রেলের হাজার হাজার যাত্রী। দেওয়ানগঞ্জ রেলওয়ে ষ্টেশন সূত্রে জানা গেছে, প্রারম্ভিক এ স্টেশন থেকে গন্তব্যস্থল ঢাকায় আন্তঃনগর তিস্তা এক্সপ্রেস, ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস, ভাওয়াল এক্সপ্রেস, কমিউটার মেইল লোকালসহ সাত জোড়া ট্রেন চলাচল করে। যাওয়া আসার সময় প্রত্যেকবার ট্রেনগুলো ওই ভাঙা ব্রীজে দাঁড়িয়ে ব্রীজের মেরামতের কাজে নিয়োজিত কর্মীর থেকে অনুমতি পত্র নিয়ে ঝুঁকি নিয়ে ব্রীজ পার হয়। দীর্ঘদিনেও সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় আক্ষেপ প্রকাশ করেন পৌর শহরের কালিকাপুর এলাকার বাসিন্দা রেল যাত্রী শিক্ষক মাজম মাহমুদ। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ভাঙা সেতুর আগে ট্রেন দাড়ায়। এতে যেমন যাত্রার সময় বেশি লাগছে তেমনি ঝুঁকিপূর্ণ সেতু পার হওয়ার ভয়ও থাকছে। চার বছর পেরিয়ে গেলেও কেন সেতুর কাজ আদৌ শেষ হয়নি তা বোধগম্য নয়। রেল যাত্রী স্বাগতম দাস বলেন, ব্রম্মপূত্র এক্সপ্রেস ট্রেনটি প্রায়ই দিনই গভীর রাতে দেওয়ানগঞ্জ স্টেশন এসে পৌছায়। শেষ গন্তব্যস্থল হওয়ার সে সময় ট্রেনে যাত্রী কম থাকে। স্টেশনের অদূরে ৩১নং ভাঙা সেতুর কাছে ট্রেন একেবারে থেমে যায়। তখন ভয়ে গা ছমছম করে। ইতিপূর্বে ওই জায়গায় ছিনতাই সহ রেলের যাত্রীদের মালামাল নিয়ে ছিনতাইকারীদের নেমে যাওয়ার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আরও বড় ঘটনা ঘটানোর সুযোগ খূজবে দুষ্কৃতকারীরা। সেতু সংলগ্ন দিঘলকান্দী এলাকার বাসিন্দা সোহাগ গাজী বলেন, এক মাস কাজ চললে তিন মাস কাজ বন্ধ থাকে। এভাবেই খুড়িয়ে খুড়িয়ে চার বছর ধরে কাজ চলছে। তবে গত ছয়- সাত মাস থেকে কাজ একেবারে বন্ধ রয়েছে। ঠিকাদার পক্ষের কিংবা রেলওয়ে পক্ষের কাউকেই এই সময়ে দেখা যায়নি। এ বিষয়ে সেতুর ঠিকাদার সোহাগ জানান, সেতুতে স্থাপনের জন্য ষ্টীলের গাডার সরবরাহ করার কথা রেলওয়ের তারা গাডার সরবরাহ করতে বিলম্ব করায় সেতুর কাজ শেষ করতে বিলম্ব হচ্ছে। এ বিষয়ে রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় প্রকৌশলী সিরাজ জিন্নাত দৈনিক খবর পত্র প্রতিবেদককে বলেন, সেতুটির কাজ সম্পন্ন করতে ষাট ফিট গাডার প্রয়োজন যেটা দেশের অন্য প্রান্ত থেকে আনা সম্ভব হচ্ছে না, গাডারটি ষাট ফিট পিলারের উপর স্থাপন করে তার উপর রেলপাত বসাতে হবে। সেতুতে গাডার স্থাপন করার জন্য ঈদের আগেই দরপত্র আহ্বান করা হবে। আশা করছি এ বছর জুনের মধ্যেই গাডার স্থাপন করে সেতুটি সচল করা যাবে।