আমাদের সুখের সংজ্ঞা আর অনুভূতি আটকে গেছে ভোগের মাঝে। ভোগবাদী ও পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা আমাদের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে। আমরা অবলীলায় তাদের সংস্কৃতি গ্রহণ করছি, আর দিন দিন তাদের মতো হয়ে যাচ্ছি। তাদের মোহনীয় কথায় প্রতারিত হয়ে নিজেদের জীবন-যৌবন, শান্তি-স্বস্তি, পবিত্রতা ও নির্মলতা সবকিছুই বিকিয়ে দিচ্ছি। ভোগ করতে পারছি, মনচাহি জীবন চালাতে পারছি, ব্যস, আমরা সুখী আছি বলে বিশ্বাস করছি। ভোগ আর অবাধ স্বাধীনতাই আমাদের কাছে সুখের প্রধান অবলম্বন হয়ে গেছে। দুনিয়াবি সফলতা আমাদের প্রধান কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ভোগ, স্বাধীনতা আর দুনিয়াবি সফলতায় প্রকৃত সুখ নেই। যতক্ষণ না মানুষ আত্মতৃপ্ত হবে। ইসলামের সাজে সজ্জিত হবে। কারণ দুনিয়াবি চাওয়া পাওয়ার কোনো সীমা নেই, শেষ নেই। এগুলো ছায়ার মতো। ছায়ার পেছনে অনন্তকাল দৌড়ানো যাবে; কিন্তু ছায়ার শেষ সীমানায় পা রাখা যাবে না। এ জন্য দুনিয়ার জীবনে মানুষ যত সম্পদশালীই হোক না, তার চাওয়ার শেষ হয় না। একধরনের অপূর্ণতা তাকে সুখী ও তৃপ্ত হতে দেয় না।
আমাদের প্রিয় নবীজী বলে গেছেন, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রা: বলেন, নবী কারিম সা: বলেছেন, আদম সন্তানকে ধনসম্পদে পরিপূর্ণ দু’টি উপত্যকাও যদি দেয়া হয়, সে তৃতীয়টির আকাক্সক্ষা করবে। আদম সন্তানের পেট মাটি ব্যতীত অন্য কিছু পূর্ণ করতে পারবে না’। (মিশকাত : ৫২৭৩) এ জন্য মানবজাতিকে সুখ-শান্তির জীবন ভোগ করতে হলে ইসলামের রঙে নিজেকে রাঙাতে হবে। কারণ ইসলামই শান্তি ও মানবতার ধর্ম। ইসলামই ন্যায় ও নীতির ধর্ম। তাই প্রকৃত সফলতা ও সুখ পেতে হলে ইসলামের দিকেই ফিরে আসতে হবে। ভোগ, বিলাসিতা, দুনিয়ার পেছনে ছোটা কোনো মু’মিনের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। একজন মু’মিন দুনিয়ার তুচ্ছ সফলতায় আখেরাতকে বেমালুম ভুলে যেতে পারে না। কারণ মু’মিনের জীবনের প্রকৃত সফলতা আর সুখ সেটিই, যার মাধ্যমে সে দুনিয়া ও আখেরাতে আল্লাহ তায়ালার রহমত ও সন্তুষ্টি লাভ করে। ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার জীবন পাড়ি দিয়ে চিরস্থায়ী আখিরাতের জীবনে সুখ ও শান্তি লাভ করে। আল্লাহ তায়ালার নাজ ও নিয়ামতপূর্ণ জান্নাত লাভ করে। আজাব ও গজবের জাহান্নাম থেকে চিরমুক্তি লাভ করে।
দুনিয়ার ভোগবিলাসে গা ভাসিয়ে দিতে পারা, সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করতে পারা প্রকৃত সফলতা হতে পারে না। প্রকৃত সফল কারা, কুরআন মাজিদে উঠে এসেছে তাদের আলোচনা, আল্লাহ তায়ালা বলেন, প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে এবং তোমাদের সবাইকে কিয়ামতের দিন (তোমাদের কর্মের) পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে। তখন যাকেই জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সে-ই প্রকৃত অর্থে সফলকাম। আর এই পার্থিব জীবন তো প্রতারণার উপকরণ ছাড়া কিছু নয়। সূরা (আলে ইমরান : ১৮৫) অতএব যে সফলতা কুরআন মাজিদের আয়াত দ্বারা প্রমাণিত, যে সফলতা হাদিসে নববীর বক্তব্য দ্বারা সাব্যস্ত এবং বিবেকবান প্রত্যেক মুসলমানের চিন্তা ও ভাবনায় যা সুপ্রতিষ্ঠিত, সেই সফলতা অর্জনের জন্য যেকোনো ধরনের ত্যাগ ও সাধনাকে গ্রহণ করা উচিত। এর জন্য জীবন-প্রাণ বিলিয়ে কাজ করা উচিত। আর এ সফলতা অর্জনের জন্যই আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজিদে আমাদের উদ্বুদ্ধ করেছেন, বর্ণিত হয়েছে, নিশ্চয় এটাই প্রকৃত অর্থে মহাসফলতা। এমন সফলতার জন্যই আমলকারীদের আমল করা উচিত। (সূরা সাফফাত : ৬০-৬১) । লেখক : শিক্ষার্থী, উচ্চতর গবেষণা বিভাগ, শায়েখ জাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার ঢাকা