২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ ভোট দেয়নি, আগের রাতে ‘চারটি বাটন’ ভোট দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। গতকাল শুক্রবার (২৫ আগস্ট) বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজার প্রাঙ্গণে সাংবাদিকরা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের একটি বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি এ মন্তব্য করেন।
জাতিসঙ্ঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর সাথে বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) বৈঠকে আওয়ামী লীগের বক্তব্য কী ছিল- এ প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আমরা বলেছি, আমরা একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন চাই। সেখানে বিএনপি একটা বড় দল হিসেবে অংশগ্রহণ করবে, সেটা আমরা চাই। কারণ, নির্বাচনটা যত বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে, তা তত বেশি গ্রহণযোগ্য হবে। সে কারণে আমরা আমাদের ইচ্ছাটা বলেছি যে আমরা একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন করতে চাই। যেটা সারা বিশ্বে প্রশংসিত হবে।’ এর জবাবে ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘কথা ও কাজের যদি মিল না থাকে তবে সে কথার কোনো মূল্য নেই। বিরোধী দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে ২০১৮ সালে (নির্বাচনের আগে) এই সরকারের সাথে (গণভবনে) আলোচনায় বসেছিলাম। সেখানে (প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে) বলা হয়েছিল, আপনারা নির্বাচনে আসেন আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করে দেখিয়ে দেব। আমরা সেই কথা বিশ্বাস করেছিলাম, নির্বাচনে এসেছিলাম। কিন্তু পরে আপনারা দেখেছেন, সেই নির্বাচনের প্রচারণা যেদিন শুরু হয়, প্রথম আমার ওপরে ও আমার মিছিলে আক্রমণ করা হয়েছিল। মহাসচিবের (মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর) মিছিলে আক্রমণ করা হয়েছিল। সারা বাংলাদেশে (বিরোধী প্রার্থী) মিছিলে আক্রমণ করা হয়েছিল। সেই আক্রমণ নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত চলেছিল। এ বিষয়ে আমরা নির্বাচন কমিশনেও লিখিত বক্তব্য দিয়েছিলাম।’
তিনি আরো বলেন, ‘এমন একটি নির্বাচন হয়েছে সেখানে বাংলাদেশের কোনো মানুষ ভোট দেয়নি। সেখানে দিনের ভোট রাতে হয়েছে। ভোট দিয়েছে ‘কম্পিউটারের’ চার বাটন। বাটন চারটি হচ্ছে- ডিসি, এসপি, টিএনও ও থানার ওসি। ঢাকা থেকে বাটনে টেপা হয়েছে। আর প্রতিটি আসনে নির্বাচনের ফলাফল বের হয়ে গেছে।’
আওয়ামী লীগ ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে ড. মঈন খান বলেন, ‘আমরা চাই আওয়ামী লীগ কথা ও কাজে মিল রাখুক, তারা গণতন্ত্রকে শ্রদ্ধা করুক। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তর হতে পারে, সেই প্রক্রিয়ায় ফিরে আসুক- নিশ্চয়ই এদেশের মঙ্গল হবে।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দেশের গণতন্ত্র ও দেশের মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে নিয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির সিনিয়র এ নেতা বলেন, ‘আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা যে কর্মসূচি দিয়েছি, সেই কর্মসূচির মাধ্যমে পুনরায় বাংলাদেশে সতের কোটি মানুষের কাছে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেব, তাদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেব। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক মামলায় বন্দী করে রাখা হয়েছে, তাকে মুক্ত করব। বিএনপি গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সুশাসন এবং দেশের মানুষের ভোটাধিকারে বিশ্বাস করে। আমরা চলমান আন্দোলনের মধ্যদিয়ে মানুষের মৌলিক অধিকার তাদের কাছে ফিরিয়ে দেব।’ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক খানসহ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান মঈন খান। এ সময় জিয়াউর রহমানের রূহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক কর্ণেল (অব.) জয়নাল আবেদিনসহ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।