সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ন

রৌমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদে আবারও ভাঙ্গন, হতাশায় এলাকাবাসী

রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি :
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৩

কয়েকদিন বৃষ্টিতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের তান্ডবের সাথে সাথে তীব্র ¯্রােতে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গন দেখা দিয়ে। এতে ১ সপ্তাহে উপজেলার ৯টি গ্রামের ৩৬ বসতবাড়ি ও ৫৪টি পরিবার নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে। এছাড়া কয়েক একর ফসলী জমি ও রাস্তাঘাট নদের গর্ভে বিলিন হয়েছে। গ্রামগুলি হলো, গেন্দারআলগা, সুখেরবাতি, ঘুঘুমারী, খেদাইমারী, ফলুয়ারচর, দিগলাপাড়া, ধনারচর, পালেরচর, ও চরখেদাইমারী এলাকা জুড়েই ভয়াবহ ভাঙ্গনের রুপ ধারন করেছে। ঘরবাড়ি বিলিনের পর নিঃস্ব হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে, ৫৪টি পরিবার। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো বর্তমানে কোথাও স্থান না পেয়ে নদের কিনারের পাশেই পাটের শোলা ও টিন দিয়ে ছাপড়া ঘর উঠিয়ে স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। নদের ভাঙ্গনের শিকার পরিবার গুলোর পাশে দাড়ায়নি সরকারি বা বেসরকারিসহ কোন জনপ্রতিনিধিরা। ব্রম্মপুত্র বামতীর ভাঙ্গন রোধে গ্রামবাসীর উদ্দ্যোগে দফায় দফায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অব্যাহত রাখছে। এতে কোন প্রতিকার পাচ্ছেনা তারা। এ নিয়ে একাধিক বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলেও সরকারের কোন পদক্ষেপ নেই বলে জানান বিক্ষোভকারিরা। কিছুদিন আগে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এমপিসহ কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ হাসান খাঁন ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেন। কিন্তু নামকেওয়াস্তে হাতে গোনা কয়েকটি শুকনা খাবারের প্যাকেট বিতরণ করা হলেও তাদের ভাগ্যের কোন উন্নতি হয়নি। এছাড়া শুধু মাত্র ৬ হাজার জিও ব্যাগ ও কিছু টাকা ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে দেওয়া হয়েছে। এরপর আর কোন খবর নেই। অপরদিকে তাদের খাদ্যের জন্য একেএম সাইদুর রহমান দুলাল একাধিকবার উপজেলা মাসিক সভায় উথ্যাপন করেন। বলাবাহুল্য এক শ্রেণীর স্বার্থান্বেষী মহল ও ঠিকাদারের যোগসাজসে নদী ভাঙ্গনকে পুজি করে বারবার বরাদ্দ আনলেও কামের কাম কিছুই হচ্ছে না। ঘুঘুমারী গ্রামের ময়না খাতুন বলেন, কয়েকদিনের মাথায় আমার বাড়িটি নদীতে ভেঙ্গে গেছে। আমি সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। বাচ্চাদের নিয়ে খুবই কষ্টে আছি। আমরা রিলিফ চাইনা নদী ভাঙ্গন বন্ধ চাই। একই গ্রামের কমেলা খাতুন বলেন, আমার ঘরবাড়ি ও গাছপালা সব নদীতে ভেঙ্গে গেছে। নিজের জায়গা না থাকায় নদীর পাশেই ছাপড়া তোলে কোন মতো ঠাই করে আছি। সরকারের কাছে দাবী, নদীটা যেন বানদি দেয়। ইউনিয়নের ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গত মাসে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী নদী ভাঙ্গন এলাকা দেখে গেছেন। আপাতত ভাঙ্গনরোধে ৫০ হাজার জিও ব্যাগ দেওয়ার কথা থাকলেও মাত্র দিয়েছে ৬ হাজার ব্যাগ। এই ব্যাগ দিয়ে প্রায় ৩০০ হাত নদী ভাঙ্গনরোধ করা সম্ভব হয়েছে। অন্যদিকে ব্যাগ না দেওয়ায় ইতোমধ্যে ৪০টি বাড়ি নদী গর্ভে চলে গেছে। তাদের পূনর্বাসন করা না হলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে খুব বিপদে পড়বে। আর যাতে নদী না ভাঙ্গে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি। রহিজ উদ্দিন মাস্টার বলেন, প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকায় নদীর ভাঙ্গন ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। এখনই নদী ভাঙ্গন রোধকরা না হলে ঘুঘুমারীসহ কয়েকটি গ্রাম নদীতে বিলিন হয়ে যাবে। অনেক পরিবার তাদের ঘরবাড়ি নদীতে বিলিন হওয়ায় অসহায় হয়ে পড়েছে। তাদের পূণর্বাসন করা জরুরী। কুড়িগ্রাম জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, বন্দবেড় ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গন রোধে প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। তবে চরশৌলমারী ইউনিয়নের ঘুঘুমারী খেয়াঘাট, চরগেন্দার আলগা এলাকায় ভাঙ্গনরোধের কোন প্রকল্প নেই। চলমান প্রকল্পে যুক্ত করে আগামীতে বাস্তবায়ন করা হবে। আপাতত জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ হাসান খান বলেন, এর আগেও আমি পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। উপজেলা প্রশাসন থেকে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের জন্য কিছু সহযোগিতা করা হয়েছিল। এবিষয়ে নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com