গুমের মতো ঘটনা মানবতার শত্রুদের দ্বারাই করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আজ বুধবার, গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেশন ফর প্রোটেকশন অব অল পার্সনস এগেইনস্ট এনফোর্স ডিসএ্যাপিয়ারেন্স’ সম্মেলনে যে আন্তর্জাতিক সনদ কার্যকর হয় তাতে ৩০ আগস্টকে গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ইতোমধ্যে প্রায় ৬০০-এর অধিক মানুষ গুমের শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন- জনপ্রতিনিধি, তরুণ, যুবক, ছাত্র, সাংবাদিক ও অধিকার গ্রুপের লোকজন। গুম হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ১০০ জনের মতো মানুষের লাশ উদ্ধার হয়েছে এবং বহুদিন পর অনেককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ দীর্ঘদিন পর ফেরত এসেছেন। এখনো অসংখ্য গুম হওয়া ব্যক্তির সন্ধান মেলেনি। এক্ষেত্রে প্রায় সকলেই দাবি করেছেন যে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়েই তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। গুম হওয়া অনেককেই নিজ বাসায় পরিবারের সদস্যদের সামনে থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, অথবা আশেপাশের পাড়া—প্রতিবেশী বা দোকানপাটে দাঁড়ানো লোকজন স্বচক্ষে দেখেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজনদেরকেই তুলে নিয়ে যেতে। গুমের মতো ঘটনা মানবতার শত্রুদের দ্বারাই করা সম্ভব।
রিজভী বলেন, বাংলাদেশ এখন বিবেকবর্জিত অরণ্যচারী নরপিশাচদের দ্বারাই অধিকৃত। গুমের মতো কাজ কেবল পশুদের দ্বারাই সম্ভব। সভ্যতার কোনো মাপকাঠি এখানে বিদ্যমান নেই। ক্ষমতাসীনরা সর্বযুগের পৈশাচিক দুঃশাসনের অনুসারী। এদের মন ও মননে বাসা বেঁধেছে হিটলার—মুসোলিনি—নমরুদ—ফেরাউনের হিংস্রতা। বাংলাদেশ থেকে গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য এরা দখল করা রাষ্ট্রকে কাজে লাগাচ্ছে। শেখ হাসিনা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে গুমের সংস্কৃতি চালু করেছে। এক্ষেত্রে তিনি আর কতদূর অগ্রসর হবেন সেটি নিয়ে গোটা জাতি শঙ্কিত। নিশিরাতে সরকারের গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাহীন স্পর্ধার পরিণতিই হচ্ছে জোরপূর্বক গুম। একক ক্ষমতার অপ্রতিদ্বন্দ্বীহীন প্রধানমন্ত্রী থাকার জন্য এম ইলিয়াস আলী, সাইফুল ইসলাম হিরু, চৌধুরী আলম, হুমায়ুন কবির পারভেজ, সাজেদুল ইসলাম সুমন, জাকিরসহ শত শত নেতা, ভিন্নমতের মানুষ ও অধিকার গ্রুপের মানুষদের অদৃশ্য করা হয়েছে। আরেকটি ভয়ানক গুমের ঘটনা বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য জনাব সালাহ উদ্দিন আহমেদের, তাকে ৬২ দিন গুম করে রাখার পর পাশের দেশে চালান দেয়া হয়। গুমের মতো মানবতাবিরোধী কাজ করেও নিষ্ঠুর শাসকগোষ্ঠী নিজেদেরকে নিরাপদ মনে করেনি। তাই দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বন্দী রেখেছে এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়ার পাশাপাশি আদালতকে দিয়ে তার বক্তব্য প্রচারে বাধা সৃষ্টির অপচেষ্টা চলছে। তবে শেখ হাসিনার অপচেষ্টা ব্যর্থ হবে। আদালতকে দিয়ে দেশনায়ক তারেক রহমানের কণ্ঠরোধ করা যাবে না।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক চাপ থাকলেও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে অবৈধ সরকার গুমের মতো মনুষ্যত্বহীন কাজ এখনো অব্যাহত রেখেছে। যে সরকার নিজ জাতিসত্বার সীমানায় বিভাজনের বীজ বপন করে তারা যে নির্দয় মনোবৃত্তি নিয়ে চালিত হয়ে মনুষ্যত্বহীন কাজ করবে, এটাই স্বাভাবিক। ছাত্র—যুবকদের তুলে নিয়ে যাওয়ার পর অস্বীকার করাটা এখন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর রুটিন ওয়ার্কে পরিণত হয়েছে। গুমের শিকার ব্যক্তিদের তাদের পরিবারের কাছে আজও ফিরিয়ে দেয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রী ইন্সট্যান্ট কান্নায় পারদর্শী, কিন্তু গুম হওয়া স্বজনদের কান্না দেখে তার মন গলে না। সন্তান হারিয়েছে প্রিয় বাবাকে, মা হারিয়েছে প্রিয় সন্তানকে, স্ত্রী হারিয়েছে স্বামীকে। বছরের পর বছর চলে গেলেও প্রিয় মানুষটির অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হচ্ছে না। গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের বুকে হাহাকার চলছে। দেশের মানুষ আজ অসহায নিরুপায় অশ্র¤œসিক্ত চোখে স্বজনদের ফিরে পাওয়ার আকুতি জানাচ্ছে। বিএনপির পক্ষ থেকে গুম হওয়া ব্যক্তিদের জন্য গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। তাদের পরিবারের প্রতি গভীর সহানুভূতি জ্ঞাপন করছি। গুম দিবসে গুম হওয়া ব্যক্তিদের অবিলম্বে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জোর আহ্বান জানাই।