ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর পরে এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সরকারি নথিতে বদলে গেল তাদের পদের পরিচয়লিপি। তবে ‘তাৎপর্যপূর্ণভাবে’ সরকারি ঘোষণাপত্রে নয়, শাসকদল বিজেপির দেয়া ‘সরকারি তথ্যে’! সংবাদ সংস্থা পিটিআই তা প্রকাশ করেছে। বিজেপি নেতা সম্বিত পাত্র মঙ্গলবার তার এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) প্রধানমন্ত্রী মোদির আসন্ন ইন্দোনেশিয়া সফরের ঘোষণা সংক্রান্ত একটি সরকারি নথি প্রকাশ করেছেন। সেখানে মোদির পদ লেখা হয়েছে, ‘প্রাইম মিনিস্টার অফ ভারত’। যদিও সরকারি প্রথা অনুযায়ী তার পদটিকে ‘প্রাইম মিনিস্টার অফ ইন্ডিয়া’ লেখা হয়। আগামী ৭ সেপ্টেম্বর মোদি ইন্দোনেশিয়ায় যাবেন ২০তম ‘আশিয়ান-ইন্ডিয়া শীর্ষ সম্মেলনে’ যোগ দিতে। সরকারি নথিতে অবশ্য ওই সম্মেলনের নামের ক্ষেত্রে ‘ইন্ডিয়া’ শব্দটি রাখা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কূটনৈতিক বিভ্রাট এড়াতেই এই পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও সরকারিভাবে এখনও এ বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার জি২০ শীর্ষবৈঠকে অংশ নেয়া বিদেশী রাষ্ট্রনেতাদের কাছে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর নৈশভোজের আমন্ত্রণপত্র প্রকাশ্যে আসার পরেই জল্পনা শুরু হয়, পার্লামেন্ট তথা লোকসভা ভোটের আগে দেশের নাম শুধুই ‘ভারত’ করতে চলেছে মোদি সরকার। এ সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনী বিল পাশের জন্যই আগামী ১৮-২২ ডিসেম্বর সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছে বলেও জল্পনা দানা বেঁধেছে। রাষ্ট্রপতির ওই আমন্ত্রণপত্রে লেখা হয়েছে লেখা হয়েছে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ভারত’। কিন্তু রাষ্ট্রপতি ভারতের রাষ্ট্রপতি কাউকে কোনো চিঠি লিখলে তাতে চিরাচরিতভাবে লেখা থাকে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ইন্ডিয়া’ কথাটি। এবার প্রধানমন্ত্রীর পদের ক্ষেত্রেও ঠিক একই বদল ঘটায় দেশের নামবদলের জল্পনা আরো দানা বাঁধবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সংসদের বিশেষ অধিবেশনে পাস হতে পারে প্রস্তাব! দেশের নাম বদলে ফেলতে পারে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। সেই হিসেবে দেশটির নাম করা হতে পারে ‘ইন্ডিয়া’ থেকে ‘ভারত’। চলতি মাসের ১৮ থেকে ২২ তারিখ সংসদে বসতে চলেছে বিশেষ অধিবেশন। সেই অধিবেশনেই এ নিয়ে রেজুলেশন পাস করানো হতে পারে বলে সরকারের একটি সূত্র থেকে জানা গেছে। মঙ্গলবার ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যম বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনগুলোতে জানানো হচ্ছে- নাম বদলানোর বিষয়টি সামনে আসতেই হইচই শুরু হয়েছে গোটা ভারতজুড়ে। কংগ্রেসের তরফ থেকে কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করা হয়েছে।
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের দাবি, জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজিত নৈশভোজের আমন্ত্রণে রাষ্ট্রপতি ভবনের তরফ থেকে লেখা হয়েছে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ভারত’। সাধারণত এই ধরনের আমন্ত্রণে লেখা হয় ‘প্রেসিডেন্ট অফ ইন্ডিয়া’। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে হারাতে একজোট হয়েছে বিরোধীরা। ২৬টি দল একছাতার তলায় এসে নতুন জোট তৈরি করেছে। যে জোটের নাম দেয়া হয়েছে ‘ইন্ডিয়া’। এই নিয়ে বিরোধীদের সমালোচনাও করেছে বিজেপি। এখন দেশের নাম বদলের বিষয়টি আসায় বিরোধীরা দাবি করছে যে ইন্ডিয়া জোটকে ভয় পেয়েই এই সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদির সরকার।
বিজেপি অবশ্য এখন থেকেই এই নিয়ে আসরে নেমে পড়েছে। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা থেকে বিজেপির একাধিক নেতা দেশের নাম ইন্ডিয়া থেকে বদলে ভারত করার পক্ষেই সায় দিয়েছেন। বিজেপি সংসদ সদস্য হরনাথ সিং যাদব সবাইকে ইন্ডিয়ার বদলে ভারত ব্যবহার করার আবেদন করেছেন। তিনি বলেছেন, এই নাম দেশের সংস্কৃতির পরিচায়ক। সারা দেশ চাইছে ভারত নাম হোক। সামাজিক যোগাযোগম্যধ্যমে তিনি লিখেছেন, পুরো দেশ দাবি করছে যে আমাদের ‘ইন্ডিয়া’ শব্দের পরিবর্তে ‘ভারত’ শব্দটি ব্যবহার করা উচিত। ‘ইন্ডিয়া’ শব্দটি ব্রিটিশরা কটূক্তি হিসেবে আমাদের দিয়ে গেছে। অথচ ‘ভারত’ শব্দটি আমাদের সংস্কৃতির প্রতীক। আমি চাই আমাদের সংবিধানে পরিবর্তন হওয়া উচিত এবং তাতে ‘ভারত’ শব্দটি যুক্ত করা উচিত।
ইন্ডিয়া-ভারত বিতর্কে ২০১৬ সালে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট কী রায় দিয়েছিলো? ১৮ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর সংসদের বিশেষ অধিবেশনে ঘোষিত সূচির বাইরে বিল এনে ইন্ডিয়ার নাম পরিবর্তন করে সার্বিকভাবে ভারত নামটি করার চেষ্টা করবে বিজেপি সরকার। এই খবরে এখন দেশজুড়ে আলোড়ন। বিতর্ক চায়ের দোকান থেকে অভিজাত ক্লাবের অন্দরমহলে। ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট কিন্তু এই ব্যাপারে স্পষ্ট রায় দিয়ে রেখেছে। ২০১৬ সালে একটি জনস্বার্থ মামলার রায় দিতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্ট ভারতীয় সংবিধানের ওয়ান/ওয়ান-এ ধারাটির উল্লেখ করে। এই ধারায় ইন্ডিয়া এবং ভারত দুটি নামই সিদ্ধ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিরোধী জোট ইন্ডিয়া নামটি নেয়ায় বিভ্রান্তি এড়াতে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ভারত নামটিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর নামাঙ্কিত জি টোয়েন্টি সামিটের নৈশভোজের আমন্ত্রণপত্রে দ্রৌপদী মুর্মুর নামের নীচে প্রেসিডেন্ট অব ভারত লেখা হয়েছে। জি টোয়েন্টির পুস্তকেও ভারত নামটি ব্যবহার করা হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী দুটি নামই অবশ্য গ্রহণযোগ্য। ভারত নামটি গৃহীত হলে পাকিস্তান তাদের নামের সঙ্গে ইন্ডিয়া নামটি জুড়তে পারে বলে একটি মহলের আশংকা। দীর্ঘদিন ধরেই পাকিস্তান ইন্ডিয়া নামটি নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছে। তাদের দাবি, ইন্ডাস ভ্যালি যেহেতু পাকিস্তানে তাই ইন্ডাস ভ্যালি সম্পর্কিত নাম ভারত গ্রহণ করতে পারে না। অনেকেই মনে করছেন, ইন্ডিয়া নামটি ছাড়লেই পাকিস্তান তা গ্রহণ করবে এবং পাকিস্তান পরিচিত হবে পাকিস্তান ইন্ডিয়া নামে। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা, ইন্টারনেট