মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

লক্ষ্মীপুর-৩ সরগরম হয়ে ওঠেছে নির্বাচনী মাঠ

হাবিবুর রহমান সবুজ লক্ষ্মীপুর
  • আপডেট সময় শনিবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৩

১২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে লক্ষ্মীপুর-৩ সংসদীয় আসন। এ আসনে আওয়ামীলীগের প্রবীন নেতা একেএম শাহজাহান কামাল এমপির মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শূণ্য হয় এই সংসদীয় আসনটি। এ আসনে উপনির্বাচন আগামী ৫ই নভেম্বর। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার সাথে সাথে এ আসনে সরগরম হয়ে ওঠেছে নির্বাচনী মাঠ। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সম্ভ্যাব্য প্রাার্থীদের মধ্যে চলছে নির্বাচনী প্রচার প্রচারনা। সম্ভাব্য প্রার্থীদের ছবি সম্বলিত পোস্টার-ব্যানারে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। লক্ষ্মীপুর-৩ সদর এই আসনটি দীর্ঘদিন থেকেই বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত থাকলেও এখন আওয়ামীলীগের দখলে রয়েছে। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামীলীগের একেএম শাহজাহান কামাল। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রথমে মাঠে থাকলেও পরে নির্বাচন বর্জন করায় আওয়ামীলীগের প্রার্থী একেএম শাহজাহান কামাল পুনরায় এমপি নির্বাচিত হন। প্রবীণ এ রাজনীতিক প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জয়লাভ করেন। ২০১৪ সাল বাদে নব্বইয়ের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এ আসনে যতগুলো ভোট হয়েছে তার সবগুলোতেই জয়লাভ করেছে বিএনপি। আগামী নির্বাচনে বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন দুই বারের এমপি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী। আওয়ামীলীগ ও বিএনপির একাধিক নেতা যোগ দিচ্ছেন সভা-সমাবেশ ও ধর্মীয় নানা অনুষ্ঠানে। তবে বিএনপির দীর্ঘ অনুপস্থিতিতে তাদের ঘরে দখল নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এজন্য আসনটি ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রমে সোচ্চার হয়েছে আওয়ামী লীগ। টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগের দাপুটে রাজনীতি, ব্যাপক উন্নয়ন, সাংগঠনিক দক্ষতা ও শৃঙ্খলা বৃদ্ধি এবং তরুণ ভোটারদের আগ্রহে বিএনপির সেই ভোট ব্যাংকে হানা দিয়েছে জামায়াত ইসলামী। এর মধ্যে বিএনপির নারী ভোটারদের বিশাল একটি অংশে জামায়াতে ইসলামীর কার্যক্রমে দ্বাবিত হচ্ছে। বিগত নির্বাচনগুলোতে এ আসনের নারী ভোটারদের প্রতি বিএনপির একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ থাকলেও জামায়াতের কারণে এখন তা নড়বড়ে অবস্থায় এসে ঠেকেছে। গত দুদিন নির্বাচনী এলাকার ভোটার, সাধারণ জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে। এ আসনে একবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন জামায়াত ইসলামীর মাস্টার শফিক উল্যাহ। এছাড়া এ আসনে প্রথম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ বাদে পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে বিএনপি। পঞ্চম ও সপ্তম সংসদে ধানের শীর্ষ প্রতীক নিয়ে এমপি হন অ্যাডভোকেট খায়রুল এনাম। ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে এমপি হন নুরুল আমিন। অষ্টম ও নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বিপুল ভোটে এমপি হন। আগামী নির্বাচনে শহীদ উদ্দিন এ্যানী ছাড়া জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও সাবেক পৌর মেয়র সাহাবুদ্দিন সাবুও বিএনপির শক্ত প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন-জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু, ডেলিকেট গ্রুপের চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন,সজিব কর্পোরেশনের স্বত্বাধিকারী এমএ হাসেম, আওয়ামীলীগ নেতা এমএ সাত্তার ও সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হুমায়ুন কবির পাটওয়ারী. আওয়ামীলীগ নেতা ও সাংস্কৃতিক কর্মী জাকির হোসেন ভূঁইয়া আজাদ। এ ছাড়া জাতীয় পাটির জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এমআর মাসুদ ও নাম শোনা যাচ্ছে। এদিকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা ড. রেজাউল করিম জামায়াতের পক্ষ থেকে একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। এদিকে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপি তার ঘাঁটিকে পাকাপোক্ত করে রাখতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে। বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী শুধু, তার নির্বাচনী এলাকায় দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম এগিয়ে নিতে নেতাকর্মীদের উদ্বুদ্ধ করছেন। হামলা-মামলার শিকার, ক্ষতিগস্ত নেতাকর্মী ও তাদের পরিবার, স্বজনদের নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন। এ ছাড়া নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের সঙ্গে মতবিনিময় ও যোগাযোগ রক্ষা করছেন। তিনি দেশের রাজনীতিতে জনপ্রিয় একটি মুখ। এদিকে সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হুমায়ুন কবির পাটওয়ারী বলেন,আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় লক্ষ্মীপুরসহ সারা দেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামোসহ সর্বক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগ সরকারের বিকল্প নেই। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে ফের নৌকায় ভোট দিয়ে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করতে হবে। তবেই বাংলাদেশ সুখী, সমৃদ্ধ ও আরও উন্নত হবে। মানুষ থাকবে শান্তিতে। আমি এই সদর আসন থেকে মনোনয়ন চাইব। আমাদের প্রিয় নেত্রী চাইলে আমি নির্বাচন করব। কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও জেলা বিএনপির আহবায়ক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে গিয়ে খালেদা জিয়া এখন কারাবন্দি। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুন উদ্ধাার ও ভোটাধিকার ফিরে পেতে নেতাকর্মীদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমিও অধিকার আদায়ের আন্দোলন করতে গিয়ে রাজপথে রক্ত দিয়েছি। বিভিন্ন সময় প্রতিহিংসা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় কারাবরণ করেছি। বর্তমান সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে যাবেনা বিএনপি। এখন যে আন্দোলন চলছে। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। ভোট নিয়ে আপাতত কোন চিন্তা নেই। পরিস্থিতিই বলে দিবে কি করব। তারপরও বিএনপি নির্বাচনে গেলে এখানে আওয়ামী লীগের নির্মম পরাজয় হবে। জনগণ ধানের শীষে ভোট দিয়ে বিএনপিকে বিজয়ী করবে। আমি এই আসন থেকে বিপুল ভোটে দু’বার এমপি হয়েছি। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাহাবুদ্দিন সাবু বলেন, গত ১৭ বছর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদে থেকে শক্তহাতে দলকে নেতৃত্বে দিয়েছিলাম। এখন সদস্য সচিব ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সমাজকল্যান বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। দলের সব আন্দোলনে নেতাকর্মীদের নিয়ে আমি মাঠে ছিলাম। গণতন্ত্র রক্ষার্থে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির সব আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখছি। সামনের সকল আন্দোলন সংগ্রামে নিয়োজিত রয়েছি। অবাধ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তখন দেখব। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক এডভোকেট নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন বলেন, আগামী নির্বাচনের জন্য দলীয়ভাবে নেতাকর্মীরা সক্রিয় রয়েছে। দল অনেক সুসংগঠিত ও শক্তিশালী। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সদরসহ চারটি আসন থেকে দল যাকে মনোনয়ন দিবে, তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থেকে সবাই কাজ করবে। এই আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থীরা বিজয় হবে। কারন বর্তমান সরকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। এই কারনে মানুষ আওয়ামীলীগের পক্ষে আছে এবং রায় দিবে। নির্বাচনে কে আসলে বা না আসলে সেটা দেখার বিষয় নয়। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ও সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচন হবে। জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু বলেন, বর্তমান সরকার ব্যাপক উন্নয়ন করছে। পাশাপাশি লক্ষ্মীপুর-৩ সদর আসনে আগে আওয়ামীলীগ থেকে আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। পরে দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে দলীয় প্রার্থীর পক্ষ কাজ করছি। সামনের উপ নির্বাচনে এই আসন থেকে মনোনয়ন চাইব। দল আমাকে মূল্যায়ন করবে। পাশাপাশি মনোনয়ন দিবে বলেও আশা করছি। প্রতিনিয়ত তৃনমূল থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়ে সভা-সমাবেশসহ সকল কর্মসুচি পালন করছি। আগের চেয়ে বর্তমানে আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম অনেক শক্তিশালী। বিপুল ভোটের ব্যবধানে আওয়ামীলীেেগর প্রার্থী বিজয়ী হবে বলে আশা করেন তিনি। সাবেক জেলা আওয়ামীলীগের শিল্প বিষয়ক সম্পাদক ও ডেলিকেট গ্রুপের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বলেন, বর্তমান সরকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। এই কারনে মানুষ আওয়ামীলীগের পক্ষে আছে এবং আওয়ামীলীগের পক্ষেই রায় দিবে। দেলোয়ার হোসেন বলেন, সামনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর সদর আসন থেকে মনোনয়ন চাইব। দল আমাকে মূল্যায়ন করবে। পাশাপাশি মনোনয়ন দিবে বলেও আশা করছি। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা ও লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী ড. রেজাউল করিম বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ছাড়া আমরা কোনো নির্বাচনে যাবো না। এরপরও খালি মাঠে কাউকে এককভাবে গোল দিতেও দেওয়া হবে না। এজন্য আমরা সবরকমের প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের দলও আগের চেয়ে এখন সাংগঠনিকভাবে সুসংগঠিত। এই আসন থেকে জামায়াত ইসলাম আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে, সে অনুপাতে কাজ করছি। সবার কাছে যাচ্ছি। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা এম আর মাসুদ বলেন, পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরর নেতৃত্বে দল সুসংগঠিত ও শক্তিশালী। জনপ্রিয় এ সংগঠন দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করে আসছে। আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইব। সেটাই আশা করছি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com