দশ বছরেও পুণনির্মাণ হয়নি জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের কাঠারবিল টু লংকারচর – সানন্দবাড়ী সড়কের গয়ারডোবা ব্রিজটি। ২০০৬ সালে নির্মিত ফুটওভারব্রিজটি নির্মাণ ক্রটির কারণে ২০১৩ সালের শুরুর দিকে রেলিং ও পাটাতলে ভাঙন ধরে। বর্তমানে ব্রিজটি চলাচলের প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে ওই ব্রিজের ওপর দিয়ে প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে পথচারীসহ শতশত যানবাহন। যে কোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। স্থানীয়দের দাবি, ভাঙ্গাচোরা ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজটি অপসারণ করে ওই স্থানে সড়কের উপযোগী ব্রিজ নির্মাণের। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের অর্থায়নে ৩৫ লাখ ২৫ হাজার ৫৯৭ টাকা ব্যয়ে ২০০৬ সালে কাঠারবিল টু লংকারচর-সানন্দবাড়ী সড়কের গয়ারডোবা খালের ওপর ১৪৪ মিটার ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হয়। ব্রিজটির ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ছিল মেসার্স কাদের এন্টার প্রাইজ।
নির্মাণের সময় ব্রিজের দু’পাশে সরু কাঁচা সড়ক ছিল। সে কারণে যানবাহন চলাচলের বিষয়টি বিবেচনা না করে মূলত খালের দুপাড়ের মানুষের যোগাযোগের জন্য ফুট ওভারব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। ২০১৭ সালে কাঠারবিল থেকে ওই ব্রিজ হয়ে সানন্দবাড়ী পর্যন্ত মধ্যমমাত্রার যানবাহন চলাচলের জন্য পাকা সড়ক নির্মাণ করা হয়। এতে বেড়ে যায় ওই ব্রিজের ব্যবহার। সে সময় কাঠার বিল থেকে ওই ব্রিজ হয়ে সানন্দবাড়ী পর্যন্ত ভারী যানবাহন ব্যতিত অন্যান্য যানবাহন চলাচল শুরু হয়। ব্রিজটি নির্মাণের পূর্বে গয়ারডোবা খালের দুপাড়ে মানুষের মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ছিলনা। পথচারী ও পণ্য পারাপার ডিঙ্গি নৌকার ওপর নির্ভরশীল ছিল। যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হতো এ অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের। কিন্ত ওই খালের ওপর ফুট ওভাব্রিজ নির্মিত হওয়ায় এবং দুপাশে পাকা সড়ক হওয়ায় এতদাঞ্চালের মানুষের দৈনন্দিন উপজেলা জেলা সদরে যাতায়াতসহ সহজতর হয় কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য পরিবহন। দুর্ভোগের হাত থেকে বেঁচে যায় এ অঞ্চলের স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা পড়ুয়া বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী। তথাপীও ফুট ওভারব্রিজটির প্রশস্ততা এতোই কম যে মুখোমুখি দুটি অটোবাইক, ইজিবাইক, অটোরিক্সা ভ্যান ক্রসিং করতে পারে না। দশ বছর আগে থেকে অর্থাৎ ২০১৩ সাল থেকে ব্রিজটির রেলিং ভাঙতে শুরু করে। ২০১৫ সাল থেকে ভাঙতে শুরু করে ব্রিজের পাটাতন। চলাচলে ক্রমেই বাড়তে থাকে ঝুঁকির মাত্রা। বিকল্প সড়ক না থাকায় তখন থেকে ঝুঁকি নিয়ে ব্রিজটির ওপর দিয়ে প্রতিদিন পথচারীসহ চলাচল করছে শতশত যানবাহন। ভাঙনের শুরু থেকে স্থানীয়রা ওই স্থানে সড়কের উপযোগী ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানালে আশার বাণী শুনিয়ে আসছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ। বর্তমানে ব্রিজটি চলাচলের প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। যে কোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। লংকারচর গ্রামের শিক্ষক ফয়জুর রহমান জানান, দুইপাশে প্রশস্ত সংযোগ সড়ক হওয়ায় ব্রিজের ব্যবহার কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ১০ বছর থেকে ব্রিজটির জীর্ণদশা। মুখোমুখি অটোবাইক, ইজিবাইক, অটোরিক্সা, ভ্যান ক্রসিং করতে পারে না। ব্রিজটি নির্মাণে কর্তৃপক্ষের আশার বাণী শোনা গেলেও কার্যত তা বাস্তবায়ন হয়নি। দশ বছরেও ব্রিজটি পুননির্মাণ না হওয়ায় দুর্ঘটনার শঙ্কায় রয়েছেন চলাচলকারী যানবাহন চালক ও স্থানীয়রা। কাঠারবিল সাপমারী গ্রামের আব্দুল করিমের ভাষ্য, গয়ারডোবা খালের ওপর নির্মিত ব্রিজটি দীর্ঘদিন থেকে রেলিং ও পাটাতন ভেঙে চলাচলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ব্রিজের ওপর ওঠলে প্রাণ কাঁপে। কখন যে ভাঙা রেলিংয়ের পাশ দিয়ে যানবাহন ব্রিজের নিচে পড়ে যায় কিংবা ব্রিজের পাটাতন ভেঙে যায়। ব্রিজের ওপর দিয়ে চলাচলের সময় ঝুঁকির আশঙ্কা থেকে যায়। অটোবাইক চালক রহিম মিয়া জানান, ব্রিজটির রেলিং ও পাটাতন ভেঙে যাওয়া ব্রিজটি চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে।
ব্রিজের ওপর অটোবাইক ওঠলে ভয়ে ভয়ে চলতে হয়। যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরণের দুর্ঘটনা। তবুও বিকল্প সড়ক না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে ব্রিজটির ওপর দিয়ে আমাদের যাতায়াত করতে হচ্ছে। কথা হয় চরআমখাওয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল করিম লাভলুর সাথে। তিনি জানান, গয়ারডোবা খালের ওপর নির্মিত ব্রিজটি অপ্রশস্ত ও ভাঙাচোরা। তবুও ব্রিজটির ওপর দিয়ে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলছে পথচারী ও শতশত যানবাহন। কখন যে ঘটে যায় বড় ধরণের দুর্ঘটনা সে নিয়ে চলাচলকারীদের মধ্যে শঙ্কা রয়েছে। ভাঙাচোরা ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজটি অপসারণ করে ওই স্থানে সড়কের উপযোগী ব্রিজ নির্মাণের দাবি তার। এ বিষয়ে চরআমখাওয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জানান, এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবী প্রশস্ত একটি ব্রিজ নির্মাণ হলে এলাকার মানুষের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হবে। এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মো. তোফায়েল আহমেদ জানান, গয়ারডোবা খালের ওপর নির্মিত ব্রিজটির রেলিং ও পাটাতন দীর্ঘদিন থেকে ভাঙাচোরা। আমি এ উপজেলায় যোগদানের পর ওই স্থানে ব্রিজ পুননির্মাণের বিষয়টি জানতে পারি। সে কারণে ব্রিজের ওই স্থানে সড়কের উপযোগী নতুন নির্মাণের জন্য প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। প্রস্তাবনা অনুমোদন হলে ওই স্থানে নতুন ব্রিজ নির্মাণ করা হবে।