দরিদ্র পরিবারের ছেলে হয়ে বিশ্বকাপের মতো বড় মে খেলার স্বপ্ন কখনোই দেখেননি ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ সিরাজ। কিন্তু এখন সেটা বাস্তব, দলের হয়ে পেস আক্রমণের অন্যতম কান্ডারি হিসেবে তিনি ভারতকে অল্প সময়ে অনেক কিছুই দিয়েছেন। ২৯ বছর বয়সী এই ফাস্ট বোলারের গুরুত্বপূর্ণ দুই উইকেট শিকারে চির প্রতিদ্বন্দ্বি পাকিস্তানের বিপক্ষে গতকাল বিশ্বকাপের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ম্যাচটিকে একপেশে বানিয়ে ভারত ৭ উইকেটের বিশাল জয় তুলে নেয়।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ ক্রিকেট এরেনা আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের বিশাল মে সিরাজ নিজেকে মোটেই ছোট করেনি। ২০ রানে আগের ম্যাচের সে ুরিয়ান পাকিস্তানী ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিককে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলার পর বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটার পাক অধিনায়ক বাবর আজমকে ফিরিয়েছেন ৫০ রানে। ২ উইকেটে ১৫৫ রানের থেকে হঠাৎ করেই ৪২.৫ ওভারে পাকিস্তান ১৯১ রানে অলআউট হয়ে যায়।
সিরাজের বাবা মোহাম্মদ গাউস ২০২০ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি পেশায় অটোরিকশাচালক ছিলেন। ছেলের স্বপ্ন পূরণে সবসময় পাশে ছিলেন বাবা। ২০১৯ সালে ওয়ানডেতে ও পরের বছর টেস্টে ভারতীয় দলের হয়ে অভিষেক হয় সিরাজের। মূলত ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে খেলার মাধ্যমে নিজেকে লাইমলাইটে আনেন সিরাজ। হায়দরাবাদের ছেলে সিরাজ বলেছেন, ‘সত্যি বলতে কি আমি কখনোই বিশ্বকাপে খেলার কথা চিন্তা করিনি। কারণ আমি খুবই নি¤œবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি। যে কারণে এত বড় স্বপ্ন দেখার কোনো অবকাশ ছিল না। এখন আমি বিশ্বকাপে খেলছি। মনে করি, আমার জীবনে এর থেকে বড় অর্জন আর কিছু হতে পারে না। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার ম্যাচ নিয়ে সবসময়ই আলাদা একটি আবহ তৈরি হয়। আজ আমিও সেটা অনুভব করতে পেরেছি।’ এর আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে ৭৬ রান খরচেও সিরাজ কোনো উইকেট দখল করতে পারেননি। কিন্তু শনিবার ঠিকই পাকিস্তানের বিপক্ষে জ্বলে উঠেছেন। বিশ্বকাপের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটিতে আগের ম্যাচের পারফরমেন্স কোনো প্রভাব ফেলেনি বলে স্বীকার করেছেন সিরাজ, ‘প্রতিটি দলেরই পরবর্তী ম্যাচের আগে বিশ্রামের সুযোগ আছে। আর সেই সময়ের মধ্যে নিজেদের পারফরমেন্স নিয়ে চিন্তা করার ও সঠিক কৌশল খুঁজে বেরা করার সময় পাওয়া যায়। একটি বাজে দিন মানেই আমি বাজে পারফর্মার না। আজকের ম্যাচে বিশেষ করে শফিকের উইকেটটি নেয়ার পরিকল্পনা ছিল, তাতে আমি সফল হয়েছি। আমি আমার আত্মবিশ্বাস ধরে রেখে বোলিং করেছি, আগের ম্যাচের পারফরমেন্স নিয়ে মোটেই বিচলিত ছিলাম না।’ সিরাজ ছাড়াও জসপ্রিত বুমরাহ, কুলদ্বীপ যাদব, রবিন্দ্র জাদেজা ও হার্দিক পান্ডিয়া প্রত্যেকেই দু’টি করে উইকেট দখল করেছে। সিরাজ বলেন, ‘আমাদের বোলিং বিভাগ বিশ্বকাপে খুবই ভালো করছে। এমন নয় যে শুধুমাত্র একজন বোলার পারফর্ম করছে। প্রত্যেকেই নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করছে। কোনো ম্যাচে উইকেটের দেখা না পেলে সেই বোলারের চেষ্টা ছিল যতটা সম্ভব রান আটকে রাখা। এবাবেই দলের সাফল্য এসেছে।’ এ পর্যন্ত তিন ম্যাচে শতভাগ জয় নিয়ে ১০ দলের টুর্নামেন্টের টেবিলের শীর্ষে অবস্থান করছে ভারত।
সিরাজ বলেন, ‘এটা বিশ্বকাপের ম্যাচ। শুধুমাত্র ভারত-পাকিস্তান নয়, প্রতিটি ম্যাচই এখানে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা নির্দিষ্ট দিনে ওই ম্যাচটির উপর গুরুত্ব দিতে চাই। নিজেদের পরিচিত পরিবেশে বিশ্বকাপ জয়ে এর চেয়ে ভালো সুযোগ আর হতে পারে না।’