বিশ্বকাপে আফগানিস্তান প্রথম জয়ের স্বাদ পেয়েছিল স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে, ২০১৫ সালে। এরপর আরো ১৪ ম্যাচ খেলেও কোনো জয় পায়নি রাশিদ বাহিনী। অবশেষে আজ ইতিহাস গড়েই দ্বিতীয় জয় তুলে নিল আফগানরা। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকেই হারিয়ে দিলো তারা। আফগানিস্তানের জয় ৬৯ রানে। গত রোববার দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে ৪৯.৫ ওভারে ২৮৪ রানের পুঁজি পায় আফগানরা। যদিও তা হতে পারতো আরো বড়, তবে মিডল অর্ডারের ব্যর্থতায় এতেই থাকতে হয় সন্তুষ্ট। তবে জয়ের জন্য এই সংগ্রহই যথেষ্ট হলো তাদের, ইংলিশরা মোকাবেলাই করতে ব্যর্থ রশিদ-নাবিদের। গুটিয়ে গেল ৪০.৩ ওভারে মাত্র ২১৫ রানে।
অথচ ম্যাচ শুরুর পূর্বে ভাবা হচ্ছিলো উল্টো। ইংল্যান্ডের কাছে পাত্তাই পাবে না আফগানিস্তান আগের দুইবারের মতো। সেই সাথে প্রথম দুই ম্যাচে ভারত-বাংলাদেশের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণের পর, এভাবে ঘুরে দাঁড়ানো তো ছিলো কল্পনার মতো। আত্মবিশ্বাস তো আরো তলানিতে থাকার কথা! অথচ তারাই কিনা লিখে ফেললো রূপকথা! দ্বিতীয় ওভারেই বেয়ারেস্টোকে (২) ফিরিয়ে শুরুটা করেছিলেন ফারুকী, আর সপ্তম ওভারে যখন জো রুটকে ফেরালেন মুজিব; তখনই আফগানরা হয়ে উঠে আত্মবিশ্বাসী। সেখানেই মনে হয়, অসম্ভব হয়তো আজ সম্ভব! ১৭ বলে ১১ রানে ফেরেন রুট। দলের সংগ্রহ তখন ৩৩/২।
পাওয়ার প্লেটা হ্যারি ব্রুককে নিয়ে ডেভিড মালান পাড় করেন আর কোনো বিপদ না দেখেই। তবে বিপদ তখনো কাঁটেনি। মালানকে ১৩তম ওভারে ফিরিয়ে সম্ভাবনা আরো ঘনীভূত করেন নাবি। মালান আউট হন ৩৯ বলে ৩২ রানে। বিপদে ত্রাতা হতে পারেননি ইংলিশ অধিনায়ক। ১৮ বলে ৯ করতেই নাভিন উল হক তার স্ট্যাম্প ভাঙে।
হ্যারি ব্রুককে রেখে দ্রুত ফেরেন লিয়াম লিভিংস্টোন ও স্যাম কারান। রশিদ ফেরান লিভিংস্টোনকে, কারান হন নাবির শিকার। দুজনের ব্যাটেই আসে সমান ১০ রান। ২৭.১ ওভারে মাত্র ১৩৮ রানে ৬ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড।
একপাশ আগলে ব্যাট করতে থাকা ব্রুককে তুলে নেন মুজিব। ফেরার আগে ৬১ বলে ৬৬ রান করেন তিনি। ১৬৯ রানে ৮ উইকেট পতনের রপর খানিকটা প্রতিরোধ গড়ে তুলেন আদিল রাশিদ ও মার্ক উড। তাদের ২৯ রানের জুটি কেবল ব্যবধান কমায়। ২০ রান করেন রাশিদ, ১৮ রান আসে উডের ব্যাটে। ১৫ রানে অপরাজিত ছিলেন টপলি। মুজিবুর রহমান ও রাশিদ খান, উভয়েই নেন ৩টি করে উইকেট। জোড়া উইকেট পেয়েছেন নাবি। এর আগে নিজেদের ইনিংসের শুরুতে ইংল্যান্ডকে ভড়কে দিয়েছিল আফগানিস্তান। ব্যাট হাতে ভয় ধরিয়ে দেয় বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের মনে। মন দেয় আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে। ইংলিশদের পদ্ধতি যেন তাদের ওপরই প্রয়োগ করে।
উদ্বোধনী জুটিতে ভয়ংকর হয়ে উঠে আফগানরা। পাওয়ার প্লেতেই যোগ করে ৭৯ রান। যেখানে বড় অবদান গুরবাজের, মাত্র ৩৩ বলে তুলে নেন ফিফটি। দ্রুত ছুঁয়ে ফেলেন তিন অংকের ঘরও। ভয়ংকর হয়ে ওঠা এই যুগলবন্দী ভাঙেন আদিল রাশিদ। ফেরান ইবরাহীম জাদরানকে। ততক্ষণে অবশ্য ১৬.৩ ওভারে ১১৪ রান চলে আসে। ইবরাহীম আউট হন ৪৮ বলে ২৮ রানে। পরের ওভারে এসে রহমত শাহকেও (৩) ফেরান রাশিদ। তাতে ইংলিশরাও ম্যাচে ফেরে। পরের গল্পটা যেন পুরনো চিত্রনাট্যের মতোই। দুর্দান্ত শুরুর পর আরো একবার চোখের পলকে ভেঙে পড়ে আফগানিস্তানের মিডল অর্ডার। ১২২ রানেই ৩ আর ১৯০ রানে হারায় ৬ উইকেট। এই সময়ে ফেরেন বিধ্বংসী হয়ে উঠা গুরবাজও। তার দুর্দান্ত ইনিংসটা চাপে পড়ে রান আউটে। বাটলারের থ্রোতে যখন ফেরেন, নামের পাশে তখন ৫৭ বলে ৮০ রান। শতক না পেলেও তার ইনিংসটা চোখে লেগে থাকবে। ওকস-কারানদের পাত্তা না দিয়ে যেভাবে সাজান ইনিংস, ইংল্যান্ড দলও তা নিশ্চয়ই অনেকদিন মনে রাখবে।
আফগান অধিনায়ক হাশমতুল্লাহ শাহিদিও ব্যর্থ ছিলেন, ফেরেন ৩৬ বলে ১৪ রানে। দারুণ ছন্দে থাকা আজমতুল্লাহ ওমরজাইও ইনিংস টানতে পারেননি, ১৯ রান আসে তার ব্যাটে। মোহাম্মদ নাবি আজও ব্যাট হাতে রাখতে পারেননি কার্যকরিতা, মাত্র ৯ রানে আউট হন। ৩৬.১ ওভারে ১৯০ রানে ৬ উইকেট হারায় আফগানরা।
ইকরাম আলি ও রাশিদ খান চেষ্টা করেন ইনিংসটা টেনে নিতে। তবে এবারো বাধা হয়ে দাঁড়ান আদিল রাশিদ। দু’জনের ৪৩ রানের জুটি ভাঙেন তিনি। রশিদকে ফেরান রাশিদ, ২২ বলে ৩৩ রান আসে আফগান রশিদের ব্যাটে। এইদিন নিজের ব্যাটিং প্রতিভা জানান দেন মুজিবুর রহমানও। ইকরামের সাথে মিলে মাত্র ২৫ বলে ৪৪ রান যোগ করেন। ৬২ বলে ৫৮ রান করেন ইকরাম। মুজিব ফেরেন ১৬ বলে ২৮ রান করে। শেষ পর্যন্ত ১ বল বাকি থাকতেই ২৮৪ রানে অলআউট হয় আফগানিস্তান। ইংল্যান্ডের হয়ে ৩ উইকেট নেন আদিল রাশিদ, জোড়া উইকেট ঝুলিতে ভরেন মার্ক উড।