২০৫০ সাল পর্যন্ত শ্রমখাতের ঘাটতি মেটাতে প্রতি বছর অন্তত দুই লাখ ৮০ হাজার অভিবাসী কর্মী প্রয়োজন ইউরোপের দেশ ইতালির। ২০২৩ সালের অভিবাসন নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদনের প্রকাশের ঠিক আগে এই তথ্য জানিয়েছে গবেষণা সংস্থা আইডিওএস সেন্টার অব স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ। সংস্থাটি বলছে, ইতালির বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকায় দেশটির শ্রমবাজারে কর্মীর ঘাটতি দেখা দেবে। এই ঘাটতি পূরণে বিদেশি শ্রমিকের দরকার ইতালির। সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ইতালিতে বয়স্ক লোকের সংখ্যা বাড়তে থাকার কারণে শ্রম বাজারে যে ঘাটতি তৈরি হবে, তা পূরণে আগামী ২০৫০ সাল পর্যন্ত বছরে দুই লাখ ৮০ হাজার বিদেশি শ্রমিকের প্রয়োজন হবে দেশটির।
সংস্থাটির দাবি, বিদেশি কর্মীদের বিষয়ে সরকারের পরিচালিত নীতির কারণে গত ১২ বছর ধরে বিদেশি শ্রমিকদের দেশটিতে আসার পথ রুদ্ধ ছিল। জাতীয় অর্থনীতিতে শ্রমিকের ঘাটতি তৈরি হওয়ার পেছনে এটি ছিল একটি বড় কারণ। এর ফলে দেশটির জনমিতির যে স্থিতাবস্থা তার উপরেও প্রভাব পড়েছে বলে দাবি সংস্থাটির। তবে ২০০৪-২০০৬ সালের মধ্যে বিদেশি নাগরিকদের ইতালির শ্রমবাজারে কাজ করার সুযোগ দিতে নীতি প্রণয়ন করে ইতালি সরকার। এই নীতির প্রশংসা করেছে আইডিওএস। নতুন এই নীতি অনুযায়ী, ইতালি সরকার ২০২৩ সালে এক লাখ ৩৬ হাজার, ২০২৪ সালে এক লাখ ৫১ হাজার এবং ২০২৫ সালে এক লাখ ৬৫ হাজার বিদেশিকে নিয়মিতভাবে অভিবাসনের সুযোগ দেবে।
অভিবাসীদের ইতালির সমাজে একীভূত করার পরিকল্পনা নিতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়মিতভাবে ইতালিতে আসার সুযোগ দিতে সরকারের নীতিমালার সমালোচনা করেছে সংস্থাটি। বলা হয়েছে, ১৯৯৮ সালে প্রণীত অভিবাসন আইনের মুল বিষয়টি সুরাহা করেনি সরকারের নীতিমালা। সেই নীতিমালায় বলা হয়েছিল, অভ্যন্তরীণ চাহিদার উপর নির্ভর করেই বিদেশিদের কাজের সুযোগ দেয়া হবে। বিদ্যমান নীতি অনুযায়ী, বিদেশি নিয়োগদাতাকে অবশ্যই শ্রমিকের নাম জানতে হবে। আর সংস্থাটি বলছে, এই নীতি বিষয়টিকে জটিল করে তুলছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ইতালির প্রতি চারজনের তিনজন বিদেশি শ্রমিক ছোট এবং মাঝারি সাইজের কোম্পানি বা গৃহস্থালির কাজের জন্য পরিবারগুলো নিয়োগ দিয়ে থাকে। এমন প্রেক্ষাপটে নিয়োগ হয় যে পারস্পরিক বিশ্বাসই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সংস্থাটি জানায়, বিদেশি শ্রমিকদের অনেকেই কম বেতনে, ক্লান্তিকর কাজে নিয়োজিত, যা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর৷ আর প্রতি তিনজনে দুইজন বিদেশি শ্রমিক ইতালিয়ানদের তুলনায় কম দক্ষ, আইডিওএস সেন্টার অব স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চের প্রেসিডেন্ট লুসা ডি সিউলোর মতে, স্থানীয়দের বয়স বেড়ে যাওয়া, তরুণদের এবং অধিক যোগ্যদের দেশ ছেড়ে যাওয়ার কারণে চাকরির বাজারে ঘাটতি তৈরি হয়েছে এবং সেই সঙ্গে দেশের উৎপাদন খাতে প্রভাব পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে বিদ্যমান ‘দুষ্টচক্রের মতো অপ্রচলিত আইনকে’ দূরে সরিয়ে অভ্যন্তরীণ চাহিদা অনুযাযী বিদেশি শ্রমিকদের বাজারে প্রবেশ করতে একটি কৌশল তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।- খবর ইনফোমাইগ্রেন্টসের