পঞ্চাশোর্ধ উজ্জ্বল দাস ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ৩নং কোলা ইউনিয়নের কামালহাট গ্রামের মৃত রনজিত কুমার দাস ও কমেলা রানী দাসের ছেলে। বৃদ্ধা মা, স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে তার অভাবের সংসার। মাত্র ২ শতাংশ জমির উপর টিনের ছাপড়ার দুটি ঘর তার মাথা গোজার একমাত্র ঠাই। উজ্জ্বল দাস ৫ জনের সংসার চালাতে প্রথমদিকে অন্যের জমিতে কামলা হিসেবে কাজ করতেন। এরপর তিনি শুরু করেন পায়ে চালিত ভ্যান চালানো। দিন দিন শরীরে শক্তি সামর্থ্য কমতে থাকায় পায়ে চালিত ভ্যান গাড়ির পরিবর্তে অনেক কষ্টে ধার দেনা করে তিনি পুরাতন বডির একটি ভ্যান গাড়িতে চারটি ব্যাটারি সংযোজন করে ওই ব্যাটারি চালিত ভ্যান চালিয়ে কোনমতে দুবেলা দুমুঠো খেয়ে পরে দিন কাটাচ্ছিলেন। কিন্তু বিধিবাম! চোরের কুদৃষ্টি পড়ল অসহায় নিঃস্ব উজ্জ্বল দাসের জীবন জীবিকার একমাত্র অবলম্বন ব্যাটারি চালিত সেই ভ্যান গাড়িটির দিকে। সপ্তাহ তিনেক আগে গভীর রাতে চোরচক্রের সদস্যরা উজ্জ্বল দাস এর বাড়ির উঠান থেকে ভ্যান গাড়িটি চুরি করে মাঠের মধ্যে নিয়ে তা থেকে ব্যাটারিগুলো খুলে নিয়ে যায়। আর ফেলে রেখে যায় পুরাতন বডির ভ্যান গাড়িটি।পরের দিন সকালে ভ্যান গাড়িটি বাড়িতে না দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। পরবর্তীতে খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে মাঠের মধ্যে ব্যাটারীবিহীন ভ্যানটি তিনি খুঁজে পান। ব্যাটারী না থাকায় ভ্যানটি এখন অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে তার বাড়িতে। যে কারণে ওই ভ্যান দিয়ে তিনি আর উপার্জন করতে পারছেন না। আগে ভ্যান চালিয়ে প্রতিদিন ৩ শত থেকে ৫ শত টাকা আয় হলেও এখন উজ্জল দাসের আয়ের পথ সম্পূর্ণ বন্ধ। এতটাই অভাবী উজ্জ্বল দাস যে, তার গায়ে দেওয়ার মতো একটি ভালো জামাও নেই, এমনকি পায়ে দেয়ার মত নেই এক জোড়া জুতা। ব্যাটারি চুরি হওয়ার পর কেমন যেনো হয়ে গেছেন উজ্জল দাস। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন, সংসার চালানোর চিন্তা তার চোখে মুখে সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। ১০ টাকা কেজি চাউলের একটি কার্ড ছাড়া আর কোন সরকারি সাহায্য সহযোগিতা তিনি পান না। অবশ্য উজ্জ্বল দাস অন্যের সহযোগিতায় জীবন চালাতে চান না। নিজের পরিশ্রমের টাকায় সংসার চালাতেই তিনি পছন্দ করেন। বর্তমানে তার আয় রোজগার না থাকায় ইতিমধ্যে কলেজ পড়ুয়া একমাত্র মেয়ের লেখাপড়া বন্ধ হয়েছে। একমাত্র ছেলে অন্যের দোকানে থেকে যা আয় করে তাও সংসার খরচের জন্য অতি সামান্য। যে কারণে উজ্জল দাসের পরিবারের সদস্যরা এখন দিন কাটাচ্ছেন অর্ধহারে অনাহারে। অসহায় উজ্জল দাসের সাথে কথা হলে কান্না জড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, আমার ভ্যানের ব্যাটারী চুরি করে নিয়ে গেছে চোরেরা। আমি এখন কিভাবে সংসার চালাবো? দ্রব্যমূল্যের যে দাম সামান্য আয়রোজগার দিয়ে কোনরকম দিন চলতো, সে পথও এখন বন্ধ। সমাজের বৃত্তবান লোকেরা যদি আমার ভ্যান গাড়ির ব্যাটারী কেনার জন্য সহযোগিতা করতেন তাহলে হয়তো কোন রকমে কর্ম করে খেয়ে পরে পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকতে পারতাম। কোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আল আজাদ বলেন,আমার ইউনিয়নের বাসিন্দা উজ্জল দাস পরিশ্রমী একজন মানুষ। জীবন জীবিকার একমাত্র অবলম্বন ভ্যানের ব্যাটারী চুরি হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তিনি। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে সহযোগিতা করেছি। সমাজের বৃত্তবান ব্যক্তিদের নিকট আহ্বান রাখবো অসহায় হতদরিদ্র উজ্জল দাসের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়ানোর জন্য।