সরকারবিরোধী চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে ৭২ ঘণ্টার অবরোধ ডেকেছে বিএনপি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও সমমনা দলগুলো। আজ ৩১শে অক্টোবর এবং ১ ও ২রা নভেম্বর সারা দেশে সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি। গত রোববার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহল কবির রিজভী এই কর্মসূচি ঘোষাণা দিয়েছেন। গতকাল সোমবার জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, গত ২৮ অক্টোবর রাজধানী ঢাকায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপিসহ সরকার বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল মহাসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশের কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহযোগিতার পরিবর্তে নেতাকর্মীদের সমাবেশে আসার পথে পথে বাধা প্রদান করে। সমাবেশে আগত নেতাকর্মীদের গাড়ি থেকে নামিয়ে তল্লাশি করে এবং বাস, লঞ্চ, ট্রেন থেকে নামার পর গণহারে গ্রেপ্তার করে। বিরোধীদলের শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা করে এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী টিয়ারগ্যাস, গুলি ও বেধড়ক লাঠিচার্জ করে মহাসমাবেশ প- করে দেয়। পুলিশের টিয়ারগ্যাস এবং গুলির আঘাতে সাংবাদিক ও বিএনপির নেতাকর্মীসহ ৪ জন নিহত এবং কয়েক হাজার নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। মহাসমাবেশ ও হরতালকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিনে সারা দেশে জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধীদলের প্রায় দুই হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে ।
তিনি বলেন, সরকারের পদত্যাগ, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার লক্ষ্যে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, আমীরে জামায়াত ডাঃ শফিকুর রহমান-সহ গ্রেপ্তারকৃত সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও আলেম-ওলামার মুক্তি, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতিরোধ ২৮শে অক্টোবর বিরোধীদলের মহাসমাবেশে হামলা, সাংবাদিক ও নেতাকর্মীদের হত্যা এবং সরকারের লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীদের বিভিন্ন স্থানে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রতিবাদে আজ ৩১শে অক্টোবর এবং ১ ও ২রা নভেম্বর সারা দেশে সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করছি।
১২ দলীয় জোট:
বিরোধী দলের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনকে নিষ্ঠুরভাবে দমন করে আবারও ২০১৪ সালের মতো ভোটারবিহীন নির্বাচন করে অবৈধ সরকার ক্ষমতা ধরে রাখতে চাইছে বলে মন্তব্য করেছেন ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা। তারা অবিলম্বে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ দাবি করেন এবং বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানান। সোমবার এক বিবৃতিতে ১২ দলের শীর্ষ নেতারা বলেন, জনগণ সরকারের এই দুরভিসন্ধি বাস্তবায়ন হতে দেবে না।
বরং দাবি আদায়ের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। বিএনপি ও ১২দলীয় জোটসহ সকল বিরোধী দলের ২৮শে অক্টোবরের মহাসমাবেশে পুলিশি হামলা, গুলি, লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল নিক্ষেপ, বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অগণিত নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার নির্যাতনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদে জানাচ্ছি।
তারা বলেন, ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক জাতীয় দলের চেয়ারম্যান এডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদাসহ অন্যান্য নেতাদের নানাভাবে হয়রানি ও অপদস্থ করা হচ্ছে।
এই নিষ্ঠুরতা বন্ধ করে গ্রেপ্তারকৃত সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি ও যুগপৎ আন্দোলনে শরিক সকল দলের নেতাকর্মীদের অযথা হয়রানি বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি। গ্রেপ্তার নির্যাতন করে জনগণের ভোটের দাবি আদায়ের আন্দোলনকে দমন করা যাবে না। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত চলমান আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। নেতৃবৃন্দ দেশবাসীকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আজ ৩১ অক্টোবর, ১ এবং ২রা নভেম্বরে তিনদিন অবরোধ কর্মসূচি সফল করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন, ১২ দলীয় জোট প্রধান সাবেক মন্ত্রী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান এডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বি এম এল) এর চেয়ারম্যান এডভোকেট শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) এর সভাপতি ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান, ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ফারুক রহমান, ইসলামিক ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল করিম, ইসলামিক পার্টির মহাসচিব আবুল কাশেম, বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টির সভাপতি ড. সৈয়দ জাভেদ মোহাম্মদ সালেহউদ্দিন প্রমুখ। অবরোধে ঢাকাসহ সারাদেশে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন চলবে; খন্দকার এনায়েত উল্যাহ: বিএনপি-জামায়াতের ডাকা টানা তিন দিনের অবরোধে ঢাকাসহ সারাদেশে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন চালু থাকবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। সোমবার (৩০ অক্টোবর) বিকেলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান তিনি। এর আগে দুপুরে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মালিক-শ্রমিকদের যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান। সভায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গা, মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী, বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবু রায়হান, ঢাকা জেলা যানবাহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্বাস উদ্দিন এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বিএনপি-জামায়াতের ডাকা মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবারের অবরোধ উপেক্ষা করে ঢাকাসহ সারাদেশে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন চলাচল অব্যাহত থাকবে বলে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়। সে মোতাবেক মঙ্গলবার থেকে টানা তিনদিন ঢাকাসহ সারাদেশে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য সারাদেশের পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের অনুরোধ জানানো হয়। সভায় পরিবহন নেতারা বলেন, বিএনপি-জামায়াত সমাবেশ ও হরতাল কর্মসূচির নামে ঢাকাসহ সারাদেশে ১৩টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে ধ্বংস করেছে এবং শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর করেছে।
এছাড়া ঢাকায় অছিম পরিবহনের গাড়িতে থাকা নাঈম নামে একজন শ্রমিককেও পুড়িয়ে হত্যা করেছে। আন্দোলনের নামে গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ কোনোভাবেই বরদাস্ত করা যায় না। নেতারা এ ধরনের ধ্বংসাত্মক ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের জরুরিভাবে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানসহ ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানান।
এছাড়া সামনের অবরোধের দিনগুলোতে গাড়ি চলাচল যেন কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত না হয় সেজন্য রাজধানীসহ জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিরাপত্তা ব্যাবস্থা জোরদার করতে সংশ্লিষ্ট পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধ জানান তারা।