গ্রিক চিকিৎসক ও অ্যানাটমিস্টরা প্রথম মানসিক ভারসাম্যহীনদের ওপর গবেষণা করেন এবং মানসিক রোগ চিহ্নিত করেন। তবে মুসলিমরাই মানসিক রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রথম বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে। অষ্টম খ্রিস্টাব্দে বাগদাদে পৃথিবীর প্রথম মানসিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়। যেখানে অন্যান্য রোগের মতো মানসিক রোগের নিয়মিত চিকিৎসাসেবা দেওয়া হতো এবং তা ছিল সম্পূর্ণ বিজ্ঞানভিত্তিক। কোনো মন্ত্রতন্ত্র বা ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে নয় বা মাথার খুলিতে অস্ত্রোপচার করেও নয়। মানসিক চিকিৎসায় যেসব পদ্ধতি অবলম্বন করা হতো, তার বেশির ভাগই আধুনিক যুগের মনোচিকিৎসকরা ব্যবহার করে থাকেন। যেমন : ওষুধ প্রয়োগ, হিলিং বাথ, অকুপেশনাল থেরাপি, মোটিভেশনাল ডিসকাশন ইত্যাদি।
হাসপাতাল বা বিমারিস্তান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুসলিম চিকিৎসকরা মানসিক রোগের চিকিৎসার পদ্ধতি ও মানসিক রোগীদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে অভাবনীয় অবদান রাখেন। তাঁরা বোঝাতে সক্ষম হন, মানসিক রোগ অন্যান্য শারীরিক সমস্যার মতোই একটি সমস্যা এবং তার বিজ্ঞানভিত্তিক নিয়মতান্ত্রিক চিকিৎসা প্রয়োজন। অবশ্য ইসলাম শুধু মনোরোগ নয়, সমগ্র চিকিৎসাশাস্ত্রকে কুসংস্কার মুক্ত করে বিজ্ঞানমনস্ক করে তুলেছে। ইসলামের আগে কোনো ধর্ম ঘোষণা করেনি ‘সব রোগের আরোগ্য আছে, যখন সঠিক ওষুধ প্রয়োগ করা হয়, আল্লাহর ইচ্ছা রোগের আরোগ্য হয়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২২০৪) মুসলিম চিকিৎসাবিজ্ঞানী ইবনে সিনা মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
বিভিন্ন ধরনের মনোরোগের চিকিৎসায় তিনি প্রথম নকশা বা কাঠামো তৈরি করেন এবং এ ক্ষেত্রে অ্যারিস্টটলসহ গ্রিক দার্শনিকদের সূত্র ও মতামতের বিশ্লেষণ করেন। সেগুলোর উন্নয়নে ভূমিকা রাখেন। এ ছাড়া তিনি মানব মস্তিষ্কের একটি নকশা তৈরি করেছিলেন, যা পরবর্তী সময়ে মস্তিষ্কের কোষ বিভাজন এবং সেগুলোর কাজ নির্ণয়ে সহায়ক হয়েছিল। মুসলিম বিজ্ঞানী আল রাজি বাগদাদে স্থাপিত মানসিক হাসপাতালের মনোচিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি তাঁর ‘আল মানসুরি’ ও ‘আল হাভি’ বইয়ে একাধিক মানসিক রোগের বিবরণ ও তার চিকিৎসাপদ্ধতি তুলে ধরেছেন।
তাঁর ‘দ্য বুক অব মেডিসিন’-এর ব্যাক ফ্লাপে লেখা আছে, তিনি রোগ নিরাময়ে ‘সাইকোলজি অব সেলফ-এজটিম’ (আত্মসম্মানের মনোবিজ্ঞান) তত্ত্ব ব্যবহারের জন্য পরিচিত। মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসা ও মনোবিজ্ঞানের প্রাথমিক বিকাশ মুসলিমদের মাধ্যমেই হয়েছিল।
ঐতিহাসিক দলিলপত্রে মুসলিম বিজ্ঞানী ও মনোবিদদের কাজের যে বিবরণ পাওয়া যায়, তাদের প্রকৃত কাজ ও অবদানের পরিমাণ আরো অনেক বেশি। একসময় মানসিক রোগী, যাদের বিশেষ যতেœর প্রয়োজন ছিল, পরিবার ও সমাজ তাদের পরিত্যাগ করত বা ‘শয়তান’ তাড়ানোর নামে অকথ্য নির্যাতন চালানো হতো, কিন্তু মুসলিমরা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে যখন তাদের বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসার ব্যবস্থার করল, তখন সমাজে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এলো। এভাবেই আধুনিক মনোবিজ্ঞানের যাত্রা শুরু হলো। জটিল মনোরোগের চিকিৎসাপদ্ধতি ও ওষুধ আবিষ্কৃত হলো। আজকের ঐতিহাসিকরা মুসলিম বিজ্ঞানীদের প্রাপ্য সম্মান ও স্বীকৃতি দিক বা না দিক, মুসলিমরা তাঁদের অবদানের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ইনশাআল্লাহ! সূত্র : মুসলিম মেমো