দুটি পাইপ বালু তুলতে তুলতে মাটির নিচে যায়। একটি পাইপ তলদেশের শুকনো বেলেমাটি পানি দিয়ে ভেজাতে থাকে এবং অন্য পাইপটি ভেজা মাটি চুষতে থাকে। ভূগর্ভস্থ এই চুষে নেওয়া পানি মেশানো মাটি পাইপের মাধ্যমে তোলা হয়। আপাতদৃষ্টিতে দেখা যায়, জমির উপরিভাগে কোনো ক্ষতি হয়নি। শ্যালো ইঞ্জিন দুটো চালু করতেই বিকট শব্দদূষণে মুহূর্তে চারপাশের পরিবেশ অশান্ত হয়ে ওঠে। গাছ-লতাপাতার আড়ালের পাখিরা উড়ে পালায়। পানিতে থাকা মাছ, স্ট্রোক করে। মোট কথা প্রণিকুল অস্থির হয়ে ওঠে। শুরু হয় বালু উত্তোলন। বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার বিভিন্ন জলাশয়ের জমির ১০ ফুট তলদেশেই বালু পাওয়া যায়। এই সুবাদে একদল আইন ভঙ্গকারী ও সুভিধা ভোগিরা ৬০ ফুট তলদেশ হতেও বালু উত্তোলন করে চলছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ড্রেজার মেশিন মালিক জানান, জমির নিচের বালু কেটে ওপরে ওঠানো যন্ত্রের স্থানীয় নাম আত্মঘাতী। আর নদী বা খালের নিচের বালু উত্তোলন যন্ত্রের নাম লোড,এবং আনলোড। অপর সূত্রটি জানায়, এই উপজেলায় বালু কাটার শতাধিক যন্ত্র আছে। প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে বালু উত্তোলন চলছে। অনেকে জরিমানা দিচ্ছেন; অনেকে প্রভাবশালী মহলের ছত্র ছায়ায় ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন এইতো। স্থানীয় এক উন্নয়নকর্মী বলেন, ‘মাটির নিচের বালু তোলার ফলে চিতলমারীর অবস্থা হচ্ছে ওপরে ফিটফাট ভেতরে সদরঘাট। এমনিতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিতে রয়েছি। ভূ-তল শূন্য করে দিলে ধ্বংস ডেকে আনতে বেশি সময় লাগবে না। এটা বন্ধ করা জরুরী।’ বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০-এর ধারা ৫-এর ১ উপধারা অনুযায়ী, পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোনো মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ বালু বা মাটি তোলা যাবে না। ধারা ৪-এর (খ) অনুযায়ী, সেতু, কালভার্ট, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্ব¡পূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু তোলা নিষিদ্ধ। আইন অমান্যকারী দুই বছরের কারান্ড ও সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।