মানিকগঞ্জের ঝিটকা এলাকার হাজারি গুড়ের খ্যাতি দেশ-বিদেশে। বহুকাল আগে থেকে এ অ লে খেজুর গাছ থেকে রস আহরণ করেন গাছিরা। এবারও শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মানিকগঞ্জের অনেক এলাকায় খেজুর গাছ ও গাছির সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। কিছু গাছি তাদের পেশা ধরে রেখেছেন। তারা খেজুর রস সংগ্রহের জন্য গাছ প্রস্তুত করছেন। দা ও বাটাল নিয়ে কোমরে দড়ি বেঁধে নিপুণ হাতে গাছ চাঁচা-ছোলা ও নলি বসানোর কাজ করছেন গাছিরা। কয়েকদিন পরেই গাছে বাঁধা হবে হাড়ি। এর পর চলবে রস সংগ্রহ। সেই রস থেকেই খেজুরের গুড় পাটালি ও হাজারি গুড় তৈরি করা হবে।
হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকার খেজুর গাছ ও হাজারি গুড় আমাদের দেশের কৃষিভিত্তিক লোকায়ত সম্পদ। ব্রিটিশ শাসনামলে এই গুড়ের সুনাম এশিয়া থেকে ইউরোপ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। এখনো এই গুড়ের কদর দেশ-বিদেশে রয়েছে। ঝিটকা কলাহাটা গ্রামের গাছি মো. মোস্তফা বলেছেন, অনেক বছর আগে থেকে আমি খেজুর গাছ ঝোড়া ও গুড় তৈরির কাজ করি। আর ১০ থেকে ১৫ দিন পর খেজুর রস এবং গুড় পাওয়া যাবে।
তিনি আরও বলেন, এখন খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় রস ও গুড়ের দাম বেশি। তারপরও এসবের চাহিদা কমেনি। গাছি আব্দুল শেখ বলেন, শীত এসে পড়েছে। এ আবহাওয়া খেজুর গাছ প্রস্তুতের উপযুক্ত সময়। খেজুর রস আহরণের জন্য গত দুই দিনে আটটি গাছ প্রস্তুত করেছি। আরও ১৫টি গাছ ৪-৫ দিনে প্রস্তুত করব। ঝিটকা শিকদারপাড়া গ্রামের গাছি মো. মিজান খন্দকার বলেন, ‘কৃষিকাজের ফাঁকে শীত মৌসুমে খেজুর গাছ কাটি। প্রতি বছরই আমরা গুড় বানাই। তবে, আগের মতো এখন আর গাছ নেই। রসও তেমন হয় না। নিজস্ব গাছ কম থাকায় বিভিন্ন জনের কাছ থেকে প্রতিটি গাছ ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায় করে কিনে নিয়ে কাটি। লাল গুড়ের পাশাপাশি হাজারি গুড় বানাই। এ বছর শতাধিক গাছ প্রস্তুত করেছি। পাঁচ দিন পর থেকেই রস নামতে পারে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. তৌহিদুজ্জামান বলেন, ‘কালের বিবর্তনে আমাদের দেশে খেজুর গাছ কমছে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বেশি বেশি খেজুর গাছ রোপণ করা প্রয়োজন। এজন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এতে খেজুর গুড়ের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে এবং গাছিরাও লাভবান হবে। উপজেলা কৃষি অফিস এ বিষয়ে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা গ্রহণ করছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) মো. শাহরিয়ার রহমান বলেন, ‘মানিকগঞ্জের ঐতিহ্য হাজারি গুড়। এই গুড় মানিজগঞ্জ জেলার ব্র্যান্ড। কিন্তু, কিছু অসাধু গাছি বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে ভেজাল গুড় তৈরি করছেন, যা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিবছরই ভেজাল রোধে অভিযান চালানো হয়। এ বছরও ভেজাল রোধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, খেজুর গাছ অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। এজন্য এ বছর আমরা উপজেলায় ৫ লাখ খেজুর গাছের চারা রোপণ করার উদ্যোগ নিয়েছি। খেজুর গাছের চারা সচরাচর পাওয়া যায় না। তাই, আমরা যশোরে চারা অর্ডার দিয়েছি। অলরেডি আমার বাসার সামনে একটা খেজুরের বাগান করা হয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে সারা উপজেলায় চারা রোপণ করা হবে।- রাইজিংবিডি.কম