রুহুল কবির রিজভী বলেন, সমস্ত অর্থনৈতিক সেক্টর ধ্বংসের পর এবার সরকারের কুনজর পড়েছে বৈদেশিক রপ্তানীর আয়ের সবচেয়ে বড় খাত পোশাক শিল্পের দিকে। সরকার অত্যন্ত সুকৌশলে পোশাক শিল্প ধ্বংসের নীল নকশা বাস্তবায়ন করছে। শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি দমনে হত্যা, নিষ্পেষণ, অপিরণামদর্শী সিদ্ধান্ত এবং প্রতিবেশী দেশের স্বার্থে এই সর্ববৃহৎ শিল্প ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নেয়া হয়েছে। শ্রম অধিকার সুরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র নতুন শ্রমনীতি ঘোষণার পর বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রায় অবধারিত বলে আশংকা করছেন মালিকরা। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি ভার্চুয়ালি এক সংবাদসম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, বুধবার পোশাক খাতে আতংকের বিষয়টি মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসানের কথাতেই স্পষ্ট হয়েছে। তিনি বলেছেন, “নিষেধাজ্ঞা আসলে বিদেশিরা পণ্য নেবে না। ইতিমধ্যে পণ্যের আদেশ দাতারা এমন শর্ত জুড়ে দিয়েছেন ঋণপত্র খোলার সময়। এমনকি পণ্য জাহাজীকরণের পর নিষেধাজ্ঞা আসলেও পণ্য নেবে না তারা।” ইতোমধ্যে এ খাত ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ ব্যবসা হারিয়েছে। পোশাক শিল্পের মালিকদের ঘোর অনিশ্চয়তার মধ্যে উদ্ভট পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বালখিল্য প্রদর্শন করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সরকার বললেই পোশাক রপ্তানির বন্ধ হবে না। নিষেধাজ্ঞা দিলে কিছুই হবে না।
জনগণ বিশ্বাস করে রেডিমেড গার্মেন্টস ব্যবসায় এখন অন্য দেশের হাতে তুলে দিয়ে অবৈধ ক্ষমতায় থাকার গ্যারান্টি চায় অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেও মন্তব্য করেন রিজভী। রিজভী বলেন, নির্বাচনের নামে তামাশা পুরোদমে চলছে।
অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা শুনে ক্ষিপ্ত প্রধানমন্ত্রী, খড়গ হাতে নিয়ে নির্বাচনী মাঠে ‘আদার বনে শিয়াল রাজার মতো’ ছুঠে বেড়াচ্ছেন। তিনিই সব, তাকে ক্ষমতায় থাকতে হবে। সুতরাং যারা সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের কথা বলে তাদের তিনি ব্যক্তিগত দুশমন হিসেবে বিবেচনা করেন। সেজন্য বিরোধী দলের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবির আন্দোলন দমাতে নানা পন্থা অবলম্বন করেছেন, যেগুলি নির্মম পৈশাচিক।
তিনি আরো বলেন, আন্দোলনরত নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের পর রিমান্ড, জার্মানীর ‘কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের’ অতাচারের কাহিনীকেও হার মানাবে। দল পরিবর্তনের জন্য কারান্তরীণ গণতন্ত্রকামী রাজনীতিবিদদের চরম অসম্মানজনকভাবে তাদের সম্মতি আদায়ের জন্য জুলুম করা হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। রিমান্ডে নির্যাতন করে তরুণ নেতাকর্মীদের মিথ্যা স্বাক্ষ্য আদায়ের চেষ্টা চলছে। বিএনপি’র নেতাকর্মীদের নীপীড়ন, নির্যাতন, হেনস্তা এবং হেয় করেও এদের পরাস্ত করতে না পেরে উৎপীড়নের পথ অবলম্বন করছে। সরকার আইনপ্রয়োগকারী র্যাব-পুলিশ ব্যবহার করে রাজনৈতিক দলের নীতি-নৈতিকতা অধঃপতনের দিকে ঠেলে দেয়ার এক সুগভীর নীলনকশা চালিয়ে যাচ্ছে।
এই পাতানো নির্বাচন কেবল বয়কট নয় গণ-প্রতিরোধের মাধ্যমে এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে একটা সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা নিশ্চিত করতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
গত ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, আহত, মামলা ও আসামীর সংখ্যা তুলে ধরেন রিজভী। তিনি জানান, এসময়ে ৪১৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, আহত হয়েছে ১০০ জন এবং মামলা দায়ের করা হয়েছে ১৯টি। এসব মামলায় আসামী করা হয়েছে ২০৪৫ জন নেতাকর্মীকে।