বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩২ অপরাহ্ন

জাপানি বিজ্ঞানীর গবেষণা : জমজমের পানির কোনো তুলনা নেই

ইলিয়াজ হোসেন রানা
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৩

মুসলমানদের সাথে জমজম কূপের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। মক্কায় অবস্থিত এ কূপের পানির অলৌকিকত্ব নিয়ে যে মিথ চালু আছে, তা নিছক ভাবাবেগ বা অনুভূতিতাড়িত বিষয় নয়। এ কূপের পানি, তার উৎস এবং অদ্যাবধি পানির ধারা বহমান থাকা আল্লাহর অশেষ কুদরতের বহিঃপ্রকাশ। পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে আপসহীন মুজাহিদ নবী ইব্রাহিম আ. এর জীবনে যে কয়টি পরীক্ষা আল্লাহ নেন, তার মধ্যে একটি হচ্ছে, আরবের মক্কার বর্তমান জমজম কূপের নিকটবর্তী বিজন মরুভূমিতে স্ত্রী হাজেরা এবং শিশুপুত্র ইসমাইলকে ফেলে আসা। তৃষ্ণায় ব্যাকুল বিবি হাজেরা সাফা-মারওয়া পর্বতের মধ্যে পদচারণার একপর্যায়ে ইসমাইল আ. এর পদাঘাতে পানির যে স্রোতধারা সূচিত হয়, সে স্রোতধারা পৌত্তলিকতাকে শোধন করার স্রোতধারা। এটি কেবল কূপই নয়, এটি দুনিয়ার বুকে চর্চিত শিরক বিদাতের স্মৃতি মুছে দেবার একটি চিরঞ্জীব স্রোতধারা। এ স্রোতধারা ব্যতিক্রম বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। এর পানি পঁচে না, দুর্গন্ধ হয় না, এর স্রোতধারা স্তব্ধ হয় না। যখন দূরদূরান্ত থেকে হাজিরা সেখানে যান, তারা জমজমের পানি পান করেন। হাজার হাজার লিটার পানি উত্তোলিত হলেও অনিঃশেষ এ করুণাধারা। পৃথিবীর অনেক নদী বাক পরিবর্তন করেছে, মৃত হয়েছে, অনেক স্রোতধারা চিরকালের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেছে। ইব্রাহিম আ.-এর পরিবারের জন্য আল্লাহর যে সুধা, জমজমের পানি, তা আজও বহমান ও অপরিবর্তনীয় রয়ে গেছে। একূপ নিয়ে বিস্ময়ের অন্ত নেই। অনেকেই এর অনন্য বৈশিষ্ট্যের কথা স্বীকার করেছেন। কিন্তু জাপানি পানিবিজ্ঞানী মাসারু ইমোটা’র একটি গবেষণায় জমজমের পানির বিশেষত্ব প্রচলিত বৈজ্ঞানিক মানদ-ে ফুটে উঠেছে, তা বিশেষত্বের দাবি রাখে। ‘মেসেজ ফ্রম ওয়াটার’ গ্রন্থে তিনি বলেন, ও I have proven that water, that
peculiar liquid, is capable of thinking, fathoming, feeling, getting excited, and expressing itself. wZwb Av‡iv e‡jb, water could react to positive thoughts and words, and that polluted water could be cleaned through prayer and positive visualization.
আমরা পানির উপর কুরআনের আয়াত পড়ে ফুঁ দিয়ে কোনো কল্যাণ লাভের চেষ্টা করি, যেটি এতদিন নিছক অবৈজ্ঞানিক বলে মনে করা হতো। কিন্তু ‘মেসেজ ফ্রম ওয়াটার’ নিবন্ধে বলা হয়েছে, জমজমের পানির উপর কোনো কিছু পাঠ করলে প্রতিক্রিয়া হয়। সাধারণ পানির উপর পাঠ করলেও প্রতিক্রিয়া ঘটে বলে তিনি জানান। এটি এই বিজ্ঞানীর আবিষ্কারের অন্যতম দিক। তবে এ সূত্র ধরে, আগেই বলে রাখি, আমাদের দেশের অনেক হুজুর বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে অনেক সময় পানি পড়ে দিয়ে আসেন। এটি দীর্ঘদিন ধরে চলছে। এটা যে উপেক্ষাযোগ্য নয়, তা এ গবেষণা থেকে স্পষ্ট হলো। মাসারু ইমোটো স্নোফ্লেক নিয়ে গবেষণা করছিলেন। স্নোফ্লেক হচ্ছে সাদা বর্ণের পাতলা বরফের স্ফটিক, যা বিভিন্ন জ্যামিতিক আকার ধারণ করে ভূপৃষ্ঠে পতিত হয়। এটি পৃথিবীর উপরের স্তরে থাকা মেঘ জমে পতিত বলেই প্রাথমিকভাবে ধরা যেতে পারে। তার কাছে প্রাপ্ত জনশ্রুতি ছিল যে, আকাশ থেকে পড়া স্ফটিক একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। তার প্রশ্ন হচ্ছে, জ্যামিতিক আকার বিশিষ্ট বটে। এর পারমাণবিক গঠনও তো একই।
দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু এবং একটি অক্সিজেন পরমাণু। তাহলে স্নোফ্লেকে কি এমন ব্যতিক্রম আছে? তার দৃষ্টিতে এটি ভিত্তিহীন মনে হয়েছে। তিনি এ ধারণার সত্যাসত্য প্রমাণে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হন। এজন্য তিনি একটি গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে রেগুলেটরযুক্ত একটি ডিপ ফ্রিজার বসান। কারণ, কোনো তরল শিতলীকরণ করা ছাড়া জ্যামিতিক আকার ধারণ করে না। শীতলীকরণ প্রক্রিয়াটি দ্রুত হতে হবে, যাতে পানি স্ফটিকৃত হয়ে আল্লাহ প্রদত্ত নির্ধারিত আকার ধারণ করে। তার বক্তব্য থেকে আকার সম্পর্কিত ধারণা মানুষের ইচ্ছার বাইরে সংঘটিত একটি ঘটনা। মাসারু যে রেগুলেটর সংযুক্ত ডিপ ফ্রিজার স্থাপন করেন, যাতে তাপমাত্রা ছিল (-৭) ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর সাথে একটি ক্যামেরা সংযুক্ত মাইক্রোস্কপও স্থাপন করেন, যাতে স্নোফ্লেক গলে যাওয়ার আগে তার একটি আলোকচিত্র ধারণ করা যায়। গবেষণার সময় তিনি গরম কাপড় পরিধান করে নেন। তিনি বলেন, আমি গবেষণাগারের কল থেকে পানির দুটি নমুনা সংগ্রহ করি। সেটি শীতল করি এবং প্রতিটি নমুনা আমাকে ভিন্ন স্নোফ্লেক বা বরফের পাতলা আকার প্রদান করে। নমুনা দুটি ভিন্ন কূপ থেকে, দুটি ভিন্ন নদী, দুটি ভিন্ন হৃদ থেকে নেয়া। আমি অনেকটা উন্মত্ত হয়ে পড়ি, আমার কাছে এটি ডাইনিবিদ্যা বলে মনে হয়েছিল।
টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত সৌদি এক ছাত্র মাসারুকে বলেন যে, তাদের দেশে একটি রহমতপূর্ণ পানি আছে, যাকে জমজমের পানি বলে, যা নিয়ে গবেষণা করা যেতে পারে। সে আরো জানায় যে, জমজমের পানি ডাইনিবিদ্যা বা জিনের কারসাজিতে কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। সে পরামর্শ দিলো, এ পানি নিয়ে সে তার তত্ত্বের সত্যাসত্য পরীক্ষা করতে পারে। অবশেষে মাসারু ইমোটো জমজমের পানি নিয়ে গবেষণা করতে শুরু করেন। গবেষণা করে মাসারু ইমোটো বলেন, আমি জমজমের পানি স্ফটিকীকরণ করতে সক্ষম হইনি, এমনকি এটিকে ১০০০ ভাগে বিভক্ত করেও না, যাকে ডায়লিউটিং বলে। অর্থাৎ তিনি এক ঘনসেন্টিমিটার পানিকে এক লিটারে পরিণত করেন। আর ঠিক তখনই তিনি বিশেষ কিছু প্রত্যক্ষ করেন। জমজমের পানি ১০০০ ভাগে ডায়লিউট করার ফলে পানিতে একটি বিশেষ অথচ একক বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল আকৃতিবিশিষ্ট ক্রিস্টাল বা স্ফটিক খুঁজে পান। এ দুটি ক্রিস্টাল একটি আরেকটির উপরে অবস্থান করলো, কিন্তু এটিই তাদের কাছে এক অনন্য বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ক্রিস্টাল। মুসলমান ওই ছাত্রকে জিজ্ঞাসা করা হলো দুটি ক্রিস্টাল কেন? তখন তিনি মাসারু ইমোটো বলেন, এর কারণ জমজম দুটি শব্দ নিয়ে গঠিত। মাসারু ইমোটা বলেন, আমার মুসলমান সহযোগী উক্ত পানির ওপর কোরআনের আয়াত পাঠ করে ফুঁ দিতে বলেন। সে একটি টেপ রেকর্ডার আনে এবং তেলাওয়াত করার জন্য সুইচ অন করে দেয়, আর ঠিক তখনই সর্বোত্তম একটি ক্রিস্টাল বা স্ফটিক পাওয়া যায়। তখন সে আল্লাহর ৯৯টি নাম বা আসমাউল হুসনা পাঠ করে। প্রতিটি নাম পাঠ করলে ক্রিস্টাল একটি নিজস্ব আকৃতি ধারণ করে। প্রায় ১৫ বছর আগে মাসারু ইমোটো এ গবেষণা সম্পন্ন করার পর পাঁচ খ-ের ‘মেসেজ ফ্রম ওয়াটার’ বা পানির বার্তা শিরোনামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন। উক্ত গ্রন্থের সারগর্ভে তিনি বলেন, আমি প্রমাণ করেছি যে, এ অদ্ভুত পানি চিন্তা করতে, উপলব্ধি করতে, উদ্দীপ্ত হতে এবং নিজেকে প্রকাশ করার সামর্থ্য রাখে। তিনি আরো বলেন, এক ফোঁটা জমজমের পানির মধ্যে যে পরিমাণ খনিজ উপাদান রয়েছে, তা অন্য কোনো পানির মধ্যে পাওয়া যায় না। জমজমের পানির গুণগতমান কোনভাবেই পরিবর্তন হয় না। এই বিজ্ঞানী মুসলমানদের পানি খাওয়ার পূর্বে ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম’ উচ্চারণ করে পানি পান করেন। তিনি প্রমাণ করতে সামর্থ হন যে, খাওয়ার আগে বা পরে বিসমিল্লাহ পাঠ করলে সাধারণ পানির গুণগত মানও পরিবর্তন হয়ে যায়, বিভিন্ন রোগের নিরাময়ে কাজে লাগে।
জমজম কূপের পানি ভূমিতল হতে ১০.৬ ফুট নিচে, অথচ প্রতি সেকেন্ডে ৮০০০ লিটার পানি যদি ২৪ ঘণ্টা ধরে উত্তোলন করা যায়, তবে এর পানির স্তর প্রায় ৪৪ ফুট নিচে নেমে যায়। অপরদিকে পানি উত্তোলন করা বন্ধ করা হলে ১১ মিনিটেরমধ্যে পুনরায় জমজমের পানির স্তর ১৩ ফুট উপরে উঠে যায়। প্রতি সেকেন্ডে ৮০০০ লিটার মানে, ৮০০০দ্ধ৬০ = ৪৮০,০০০ লিটার/মিনিট। ৪৮০,০০০ লিটার/মিনিট মানে, ৪৮০,০০০দ্ধ৬০= ২৮,৮০০,০০০লিটার/ঘণ্টা, এবং ২৮,৮০০,০০০দ্ধ২৪=৬৯১,২০০,০০০ মিলিয়ন লিটার/দিন। অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টায় ৬৯১ মিলিয়ন লিটার পানি উত্তোলন করার পর মাত্র ১১ মিনিটের মধ্যে পুনরায় গায়েবি মদদে সে পানির ঘাটতি পূরণ হয়। এখানে দুটি মু’জিজা। একটি হচ্ছে এটি তাৎক্ষণিক পানি দ্বারা পরিপূর্ণ হয় এবং সেখানে আল্লাহ অসাধারণ ক্ষমতাধর একটি একুয়াফায়ার সংযুক্ত রেখেছেন, যাতে পানি বেরিয়ে যায় না, যদি এখান থেকে পানি বের হতে পারতো, তাহলে জমজমের পানিতে পৃথিবী তলিয়ে যেতো। লেখক: প্রভাষক, সরকারি ইস্পাহানী ডিগ্রি কলেজ, কেরাণীগঞ্জ, ঢাকা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com