কুয়েতের আমিরের মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় শোক
কুয়েতের আমির শেখ নাওয়াফ আল-আহমদ আল-জাবের আল-সাবাহর মৃত্যুতে বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় শোক পালনের জন্য হরতাল কর্মসূচিতে পরিবর্তন এনেছে বিএনপি। আজ সোমবারের (১৮ ডিসেম্বর) পরিবর্তে আগামীকাল মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হরতাল পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
রোববার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুরে এক জরুরি ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী এই কর্মসূচি পরিবর্তনের কথা জানান। এর আগে শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ে ১৮ ডিসেম্বর সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ঘোষণা করেন রুহুল কবির রিজভী। সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং তফসিল বাতিলের দাবিতে গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে দফায় দফায় অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি-জামায়াত ও যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলো। সবশেষ ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় বিএনপির ডাকা ৩৬ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি শেষ হয়।
প্রকৃত বিবৃতিতে সারা দেশে পুলিশের হামলা, গ্রেফতার, জুলুম-নির্যাতন ও একদলীয় নির্বাচনের প্রতিবাদে ১৯ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, গণতন্ত্র হত্যাকারী সরকারের একদলীয় নির্বাচন ও সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং জামায়াতের নিবন্ধন সংক্রান্ত মামলায় ন্যায়ভ্রষ্ট আদেশ, নিম্ন আদালতে বিচারের নামে প্রহসন ও ফরমায়েসি একতরফা তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে এবং জালিম সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকার গঠন, আমিরে জামায়াত ডা: শফিকুর রহমানসহ সকল রাজবন্দী ও ওলামা-মাশায়েখের মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসার দাবিতে আমি জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আগামীকাল ১৯ ডিসেম্বর সোমবার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করছি। ঘোষিত কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে সফল করে আন্দোলনকে চূড়ান্ত লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমি জামায়াতে ইসলামীর সর্বস্তরের নেতা-কর্মী এবং সংগ্রামী দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
অন্য এক বিবৃতিতে মাওলানা এটিএম মা’ছুম বলেন, জনবিচ্ছিন্ন জালিম সরকারের দুঃশাসনে জনগণ অতিষ্ঠ। আওয়ামী দুঃশাসন থেকে মুক্তির জন্য গোটা জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ। ক্ষমতালোভী সরকার গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করেছে। মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। লুটপাট করে অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আজ দেশে নাগরিকদের জীবন ও সম্পদের কোনো নিরাপত্তা নেই। মানুষের ভাত ও ভোটের অধিকার নেই। মানুষকে কথা বলতে দেয়া হচ্ছে না। মানবতা আজ ভূলুণ্ঠিত। এমতাবস্থায় দেশ ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে জামায়াতসহ বিরোধীদলগুলো গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার রক্ষায় নিয়মতান্ত্রিকপন্থায় আন্দোলন করছে। সংগ্রামী দেশবাসী এ আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে সফলতার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে স্বৈরাচারী সরকারের ভীত নড়ে উঠেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিরোধীদলের শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ কঠোর হস্তে দমনের যে হুঙ্কার দিয়েছেন, তা সংবিধান ও গণতন্ত্র বিরোধী। এই ঘোষণা দিয়ে তিনি মূলত জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ পূর্বপরিকল্পিতভাবে একজোট হয়ে রাজধানী ঢাকার মিরপুরে ছাত্রশিবিরের শান্তিপূর্ণ বিজয় র্যালিতে ন্যক্কারজনকভাবে হামলা চালিয়েছে এবং পুলিশ ১১ জন নেতা-কর্মীকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করেছে। এই হামলার মাধ্যমে পুলিশ দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে এবং বিজয় দিবসের মর্যাদাকে ভূলুণ্ঠিত করেছে। পুলিশের এই ঘৃণ্য আচরণ অনাকাঙ্খিত ও অনভিপ্রেত। আমরা এর ধিক্কার জানাই। অপরদিকে গত ৪ দিনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৫৭ জন নেতা-কর্মীকের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমি সরকারের এইসব জুলুম-নির্যাতনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং গ্রেফতারকৃতদের দ্রুত মুক্তি দাবি করছি।