ভোলার উত্তোলিত গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা হয়েছে। সঞ্চালন লাইন না থাকায় দ্বীপজেলা ভোলা থেকে উত্তোলিত গ্যাস জাতীয় গ্রিডে আনা যাচ্ছিল না। তবে এই গ্যাস সিএনজিতে (সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস) রূপান্তর করে তিতাস গ্যাসের বিতরণ এলাকার শিল্পে সরাসরি সরবরাহ করবে ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং লিমিটেড। এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হলো।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ভোলা থেকে ঢাকায় পাইপলাইনবিহীন গ্যাস সরবরাহ শুরু হলো। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তারা জানান, ভোলা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের এমন একটি দ্বীপ জেলা, যার চারদিকেই পানি। বাপেক্সের তথ্যমতে ভোলায় রয়েছে অপার সম্ভাবনাময় গ্যাসক্ষেত্র। ভোলার শাহাবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রে দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪০ মিলিয়ন কিউবিক ফিট গ্যাস, যা প্রায় ২৫ বছর সরবরাহ করা যাবে। বাপেক্সের গ্যাসক্ষেত্রগুলোতে গ্যাস মজুতের পরিমাণ এক দশমিক ৭৭২ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফিট। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নূরুল আমিন, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্রনাথ সরকার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সিএনজি হয়ে ভোলার গ্যাস আসছে ধামরাইয়ে, কারখানায় অগ্রাধিকার: সিএনজিতে রূপান্তর করে সরবরাহ শুরু হলো ভোলার গ্যাসের। ধামরাইয়ের অবস্থিত গ্রাফিক্স টেক্সটাইল মিলে যাবে প্রথম এই সিএনজি। গ্যাসের চাপ কম পাওয়া শিল্প কারখানাগুলো এই গ্যাসের মাধ্যমে কিছুটা গ্যাসের চাপ বেশি পাবে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্টরা। ৩ হাজার পিএসআই (প্রতি বর্গ ইঞ্চি) চাপে প্রতি সিলিন্ডারে গ্যাস আসবে ৩৫০০ ঘনমিটার।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) হোটেল সোনারগাঁওয়ে ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন পিএলসি’র মাধ্যমে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি ভোলার গ্যাস সিএনজিতে রূপান্তর করা এবং পরিবহন প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ভোলার গ্যাসের একটি অংশ সিলিন্ডারে করে আনা হচ্ছে। পাশাপাশি ভোলা-বরিশাল গ্যাস পাইপলাইন করা হবে। সেখান থেকে খুলনায় গ্যাস সরবরাহ করার প্রাক-সমীক্ষা চলছে। যেখান থেকে খুলনায় একটা ট্রান্সমিশন লাইন চলে যাবে। অর্থাৎ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম এবং পূর্ব অঞ্চল এই গ্যাস সরবরাহ করা যাবে।
অনুষ্ঠানে জ্বালানি সচিব নুরুল আলম বলেন, প্রতিদিন ৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস খুব বেশি না। তবে কেবল শুরু। আরও বাড়াতে হবে। এলএনজি যেমন বড় বড় জাহাজে আনা হয় তেমনি আনার চিন্তা করা হচ্ছে। সচিব বলেন, সিলেটে তেল পেয়েছি, সেটাও ফেলে রাখবো না। সিলেটে আরও তেল পাওয়া যাবে বলে আমরা আশা করছি। সচিব বলেন, সিলেটের কূপ থেকে ১৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাবো বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু সেখান থেকে প্রায় ৬০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। আরও তিনটি কূপ খনন করা গেলে এই উৎপাদন আরও বাড়বে। সেক্ষেত্রে আমদানি কমানো সম্ভব। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, আমাদের প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা আছে প্রায় ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের মতো। আর সরবরাহ হচ্ছে ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের নিচে। এর মধ্যে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে পাই ২১০০ মিলিয়নের মতো, আর আমদানি করা হচ্ছে কমবেশি ৮০০ মিলিয়নের মতো। ২০৪১ সালের পরিকল্পনা অনুযায়ী দুটি এলএনজি টার্মিনাল চালু হবে। ওমান ও কাতাদের সঙ্গে আরও একটি করে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি করেছি। তিনি জানান, বর্ডার পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে গ্যাস আমদানির প্রক্রিয়া চলছে। সরকারের অনুমতি পেলে শিগগিরই চুক্তি করা হবে। পাশাপাশি দেশের মধ্যে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে মহাপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। ৪৬টি কূপ খননের যে কাজ চলমান রয়েছে সেটির লক্ষ্য বাড়িয়ে ৪৮ করা হয়েছে। ওই প্রকল্পে ৯টি কূপ খনন করা হয়েছে তাতে ৭টিতে গ্যাস পেয়েছি। এতে করে ১২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে।
চেয়ারম্যান বলেন, চুক্তি অনুযায়ী প্রথমে ৫ মিলিয়ন ঘনফুট (মিলিয়ন স্ট্যান্ডার্ড কিউবিক ফিট পার ডে বা এমএমসিএফডি) এবং পরে আরও ২০ মিলিয়ন ঘনফুট সিএনজি আসবে। ২০২৪ সালের অক্টোবরের মধ্যে আরও ২০ মিলিয়ন আসার কথা। তিনি জানান, ভোলায় আরও ৫টি কূপ খনন করা হচ্ছে, ২০২৬-২৮ এর মহাপরিকল্পনায় আরও কূপ খনন করা হবে। তাতে উৎপাদন সক্ষমতা আরও বাড়বে বলে আমরা আশা করছি। অন্যদের মধ্যে ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন পিএলসির চেয়ারম্যান এইচএম হাকিম আলী বক্তব্য রাখেন।