নির্বাচনের পর চাল, আটা, তেল ও সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। সামনে আসছে পবিত্র শবে বরাত ও রমজান মাস। মার্চ মাসের মাঝামাঝি শুরু হচ্ছে রমজান। গত রমজানের পর জুলাই মাসে শুল্কায়নমূল্য বাড়িয়ে তিনগুণ করার পাশাপাশি নতুন করে কয়েক স্তরের শুল্ক আরোপের ফলে খেজুরসহ আমদানি ফলের দাম দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিল। যা এখনও একই অবস্থায় আছে। আমদানি শুল্ক না কমলে আসছে রমজানে দ্বিগুণ-ই থাকবে খেজুরের দাম। এমনটি জানিয়েছেন ফল আমদানিকারকরা। প্রতি কেজি খেজুরে ৭৫ টাকা থেকে মানভেদে ২৭৫ টাকা পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি করতে হচ্ছে বলে জানালেন তারা।
এমন উচ্চ শুল্ক আরোপের ফলে আগের রোজায় ১২০ টাকা কেজি দামে যে ‘ধাবাস’ খেজুর পাওয়া যেতো, এবার সেটা আড়াইশ টাকার বেশি দামে কিনতে হতে পারে বলেও জানিয়েছেন আমদানিকারকরা। একইভাবে মাঝারি ও ভালো মানের খেজুরের দামও একই হারে বাড়বে বলে জানান তারা।
বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, দেশে বছরে ৯০ হাজার মেট্রিক টনের মতো খেজুরের চাহিদা আছে। এর মধ্যে রোজার মাসে প্রায় ৬০ হাজার টন বেচাকেনা হয়। ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তিউনিশিয়া, সৌদি আরব ও মিশরসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ থেকে খেজুর আমদানি হয়।
খেজুর আমদানি অব্যাহত আছে জানিয়ে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক ড. মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, ‘যেসব খেজুর আমদানি করা হয়েছে, সেগুলোর মান যাচাই-বাছাই করে খালাসের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। শুল্কায়ন আরোপের পর চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে খেজুর আমদানি কমেছে। এই অর্থবছরে (২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত) চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে খেজুর আমদানি হয়েছে ৪৪ হাজার ৬৩৪ মেট্রিক টন। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ৮৪ হাজার ১৫১ মেট্রিক টন, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ৮৮ হাজার ৯৬১ মেট্রিক টন এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ৬২ হাজার ২৭৪ মেট্রিক টন।’
আমদানি শুল্ক বাড়ায় গত জুলাই মাস থেকে দ্বিগুণ দামে খেজুর বিক্রি করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম নগরের বিআরটিসি এলাকার ফলমন্ডির ‘অ্যারাবিয়ান ডেটস সুপারশপের’ স্বত্বাধিকারী শহিদুল আলম। তিনি বলেন, ‘দেশে অন্তত ২৫-৩০ ধরনের খেজুর আমদানি করা হয়। আমদানিকারকদের কাছ থেকে কিনে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে পাইকারিতে বিক্রি করি আমরা। এখন প্রত্যেক জাতের খেজুরের দাম দ্বিগুণ। শুল্ক আরোপের আগে গত বছর প্রতি কেজি জাহিদি খেজুর ১১০-১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। শুল্ক আরোপের পর থেকে মানভেদে ২০০-২৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে আজওয়ার কেজি বিক্রি হয়েছিল ৬২০-৬৩০, বর্তমানে এক হাজার ৩০০-৪০০, মরিয়ম ৭০০ থেকে বর্তমানে এক হাজার ৬০০, মাবরুম ৭৫০ থেকে এক হাজার ৭০০, আবার ভালো মানেরটা দুই হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।’
এবার পাঁচ কেজি ওজনের প্যাকেট কেনা পড়ছে আট হাজার থেকে ৯ হাজার টাকা উল্লেখ করে শহিদুল আলম আরও বলেন, ‘আগে খেজুরের চাহিদা ছিল রমজান ঘিরে। করোনার পর থেকে চাহিদা বেড়েছে। এখন সারা বছরই কমবেশি চাহিদা আছে। গত বছরের তুলনায় এবার প্রতি পাঁচ কেজি প্যাকেটের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। কিছু খেজুর দ্বিগুণের বেশি। পাঁচ কেজির প্যাকেট ৫০ টাকা বেশিতে আমরা বিক্রি করে থাকি। খুচরা ব্যবসায়ীরা কেজিতে মানভেদে ২০-৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। এজন্য বেচাকেনাও কমেছে।’
রোজার মাসে প্রায় ৬০ হাজার টন বেচাকেনা হয়
দাম বাড়ার বিষয়ে ফল আমদানিকারক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘গত ১ জুলাই থেকে খেজুরে অতিরিক্ত আমদানি শুল্ক নিচ্ছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে। আগে যেখানে ইরাক থেকে আমদানি করা পলিব্যাগ ভর্তি খেজুরের কেজি প্রতি শুল্ক নেওয়া হতো পাঁচ টাকা, এখন নেওয়া হচ্ছে ৭৫ টাকা। আগে মরিয়ম, মাবরুম, আজওয়াসহ অন্যান্য উন্নতমানের খেজুরের কেজিতে শুল্ক নেওয়া হতো ১০ টাকা, এখন কেজিতে ২৭৫ টাকা পর্যন্ত শুল্ক নেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত শুল্ক নেওয়ায় মানুষের নাগালের বাইরে যাচ্ছে খেজুর। বিষয়টি নিয়ে আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কাস্টমস কর্তৃপক্ষসহ সব কয়টি সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করে আলোচনা করেছি। এখন পর্যন্ত অতিরিক্ত শুল্ক আদায় প্রত্যাহার করা হয়নি। ফলে দ্বিগুণ দামেই বিক্রি করতে হবে।’
উচ্চ শুল্ক আরোপের কারণে আগের রোজায় ১২০ টাকা কেজি দামে যে ধাবাস খেজুর পাওয়া যেতো, এবার সেটা আড়াইশ টাকারও বেশি দামে কিনতে হবে উল্লেখ করে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘মাঝারি ও ভালো মানের খেজুরের দামও একই হারে বাড়বে। কারণ আগের অর্থবছরে যেসব ফলমূল আমদানি করা হয়েছিল সেখানে কোনও রকম শুল্ক ছিল না। শুধু এআইটি ও এটি ছিল। গত বাজেটে ফলমূলকে বিলাসপণ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলের ওপর ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক এবং ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। আরডি, এআইটি এবং এটি মিলিয়ে এখন উচ্চ শুল্ক দিতে হচ্ছে। এজন্য দ্বিগুণ দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’- বাংলা ট্রিবিউন