শীতের জীর্ণতা সরিয়ে ফুলে ফুলে সেজে ওঠেছে প্রকৃতি। পলাশ, শিমুল, কৃষ্ণচূড়া গাছে লেগেছে আগুন রঙের খেলা। মুকুলে মুকুলে ছেয়ে গেছে আমগাছ। যান্ত্রিকতার কোলাহলমুখর নগরে, অতি কর্মব্যস্থ জীবনে যতোই নিস্প্রাণ, হিসেবী, প্রকৃতি-বিচ্ছিন্ন হন না কেন, বসন্তের এ দিনে মন গেয়ে ওঠবেই ‘বসন্ত বাতাসে..সই গো বসন্ত বাতাসে, বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে। বুধবার (১লা) ফাল্গুন বসন্ত উৎসব ১৪৩০ উপলক্ষে বরিশাল সরকারী মহিলা কলেজের বকুলতলায় এবার স্বারসতি পূজা আর্চনার অনুষ্ঠান আয়োজন করায় তার পরিবর্তে কলেজ কর্তৃপক্ষ কলেজ প্রাঙ্গনের পিছনের মাঠে ঐতিহ্যবাহী বসন্ত উৎসব-১৪৩০ চলমান রাখতে আয়োজন করেছে বসন্ত উৎসব ও বিভিন্ন শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীরা আয়োজন করেছে পিঠা উৎসব। বসন্ত উৎসব মাঠে বিভিন্ন ধরনের পিঠার স্টলগুলোতে শিক্ষার্থী সহ অভিভাবকদের বিভিন্ন নামের পিঠা খাওয়া সহ বাসা বাড়িতে কিনে নেয়ার জন্য উপছে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অদম্য বাংলার সামনে আসলে শুধু মনে হয় চারপাশেও শোনা যাচ্ছে এ ধরনের বসন্তের বিভিন্ন গানের সুর। ঋতুরাজ বসন্তকে স্বাগত জানাতে সরকারী মহিলা কলেজের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা আয়োজিত দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা পালিত হচ্ছে। বাসন্তি উৎসব বর্ণিল করতে নানা রংয়ের পোষাক ছাড়াও ফুল দিয়ে সেঁজেগুজে অনুষ্ঠানে এসেছিলেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা সেলফি তুলে, গ্রুপ ফটোসেশন করা কেহ কেহ মাঠে বসে মডেলিং চভির পোজ দিয়ে উদযাপন করেন বাসন্তি উৎসব। বছরের এই দিনটির জন্য অপেক্ষায় থাকেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সাংস্কৃতিক নৃত্য পরিবেশনায় মুগ্ধ তারা। সরকারী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ সহ বিভিন্ন শিক্ষকরা বলেন বসন্ত মন উদার করে, হাসতে শেখায়, গাইতে শেখায়, মানুষকে ভালবাসতে শেখায়। আজকের শিক্ষার্থীরা যদি মানুষকে ভালবাসতে না পারে, তাদের মন যদি উদার না হয়, তাহলে তাদের এই প্রয়াস ব্যর্থ। আর যদি এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা মানুষকে ভালবাসতে শেখে তাহলে, তাদের আয়োজন স্বার্থক হবে। এদিকে বুধবার বিকেলে নগরের জগদ্বীশ সারস্বত স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে বসন্ত বরণ উৎসবের আয়োজন করে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘উদীচী এবং বরিশাল নাটক’। বসন্ত বরণ উপলক্ষে নগরের ফুলের দোকানগুলোতে উপচে পড়া ভীড় দেখা গেছে। এছাড়াও নগরীর পথ-প্রান্তরে বাসন্তী হলুদের আভরণে অন্য রঙগুলোও যেন বসন্তের উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছে। নববধূ থেকে শুরু করে অনেক গৃহিণীরাও বসন্ত বরণে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। এসব অনুষ্ঠানের কোথাও কোথাও গান বাজছে, বাসন্তি রং শাড়ি পরেকোনো বধূয়া চলে যায়। পাঞ্জাবি, ফতুয়া পরা ছেলেরাও যোগ দিয়েছেন বসন্ত বরণের বিভিন্ন আয়োজনে। অপরদিকে বাঙালীর প্রাণের উৎসব বসন্ত বরণ নির্বিঘœ এবং শান্তিপূর্ণ করতে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে বরিশাল মেট্রোপলিটন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।