বীরমুক্তিযোদ্ধা আখতারউজ্জামান ১৯৮৩ সালে ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় একশত বছরের ইতিহাসে তিনি একমাত্র ছাত্রনেতা, যিনি ছাত্র সংসদ নির্বাচনে দুইবার জিএস এবং একবার ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ১৯৭৯-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য নির্বাচিত হয়ে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত এ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে সপ্তম সংসদের এমপি ও গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণও দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি ১৯৮ গাজীপুর-৫ কালিগঞ্জ এর সংসদ সদস্য। বীরমুক্তিযোদ্ধা আখতারউজ্জামান সাক্ষাৎকারে বলেন, আমরা যখন ছাত্র রাজনীতি করতাম আজ থেকে ২০-৩০ বছর আগে সেই তুলনায় এখন সুযোগ-সুবিধা অনেক বেড়েছে। ইউনিভার্সিটি ও কলেজের সংখ্যা বেড়েছে, সাথে বেড়েছে শিক্ষার্থী। বিশেষ করে তথ্য-প্রযুক্তির বিকাশের কারণে উন্নত দেশে অনেক বেশি ছাত্র রাজনীতি অগ্রসর হয়েছে। যুগের সাথে তাল মেলানোর জন্যই গবেষণা, তথ্য-প্রযুক্তি, শিক্ষায়, ছাত্র রাজনীতি, খেলাধুলা- সংস্কৃতি সব কিছুতে আমাদের আরো এগিয়ে যেতে হবে। আমরা যখন পাকিস্তানের শাসনে ২৩ বছর ছিলাম। তখন ছাত্র রাজনীতির সাথে যারা ছিল তারা দেশপ্রেম নিয়ে, সাহস নিয়ে আন্দোলন করেছিল বলেই সফল হয়েছিল ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ৬ দফার আন্দোলন বিকশিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে কারাগার থেকে মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এই ছাত্রদের জন্যই মুক্তিযুদ্ধে আমরা সফল হয়েছি। এছাড়া, জিয়াউর রহমানের শাসন আমল, এরশাদের শাসন আমল, ১/১১ এর পর দুই বছরের শাসন আমল, এই সময়েও ছাত্ররা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে। তারাই আন্দোলন করে গণতন্ত্রকে জয়ী করেছে। এখন দেশে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ রয়েছে। আমাদের শিক্ষাকে কিভাবে আরো বিকশিত করা যায়। নিজেদের কিভাবে আরো প্রযুক্তিতে দক্ষ করা যায় সে বিষয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। আগামী ৩৫ বছর আমাদের দেশের যুব সমাজ কর্মক্ষম থাকবে। তাই আগামী সময়ের জন্য ছাত্রদের প্রস্তুত হতে হবে। সেখানে টেকনোলজিতে খুব বেশি দক্ষ হতে হবে। সেখানে ছাত্র সংগঠনগুলোর মেনিফেস্টো হওয়া দরকার- তথ্য নির্ভর, প্রযুক্তি নির্ভর। যাতে করে সচেতন ও দক্ষ নাগরিক হতে পারে। সে নিজেই চাকরির বাজার তৈরি করতে পারে। তরুন ও ছাত্র সমাজকে প্রযুক্তির সম্পর্কে জানতে হবে। সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি ও প্রযুক্তি শিক্ষায় নিজেকে উন্নত করতে হবে। কারন পৃথিবী পুরো বদলে যাচ্ছে তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে যেমন- গুগল, মেটা-ফেইসবুক, টুইটার, মাইক্রোসফট ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান। এদের মূলে রয়েছে কিন্তু তথ্য-প্রযুক্তি। আমি তখনো ডাকসুর ভিপি-জিএস হইনি। আমি ছাত্র সংগঠনের তখন সক্রিয় কর্মী। আমাদের অপারেজয় বাংলা ভাঙতে এসেছিল। আমরা সবাই মিলে রুখে দাঁড়িয়েছিলাম। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার ২ বছরের মধ্যেই এমন ঘটনা ঘটেছিল। আমরা ছাত্র রাজনীতি করেছি সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে, এরশাদ বিরোধী ছাত্র আন্দোলন করেছি। তখন আমরা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেছিলাম। প্রথমে রাজনৈতিকভাবে সচেতন হতে হবে। রাজনীতি বলতে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, আমরা ধর্ম নিরপেক্ষ জাতি মানে সব ধর্মকে সম্মান করবো, গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবো। ধনী-গরীবের বৈষম্য কমানোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, “বিশ্ব আজ দুই ভাগে বিভক্ত-শোষক এবং শোষিত; আমি শোষিতের পক্ষে।’’ নতুন প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর এই কথা মনে রাখতে হবে। শুধু নিজের চিন্তা করলে হবে না, সমাজের চিন্তাও করতে হবে। আগে ভালো মানুষ হতে হবে, তাহলেই ভালো কর্মী হতে পারবে। জনগনের জন্য, নিজের জন্য এবং দেশের জন্য একই সাথে সমন্বয় রেখে কাজ করতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তির সাথে নিজেকে দক্ষ করে তুলতে হবে।