শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৯:৫৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
ডিইউজে’র সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খানকে গ্রেফতার:বিএফইউজে ও ডিইউজে’র তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ আহতরা যেই দলেরই হোক চিকিৎসার দায়িত্ব নেবে সরকার: প্রধানমন্ত্রী ঢালাওভাবে মামলা-গ্রেপ্তার বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি সুজনের নিরীহ মানুষ হত্যাকারী রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও স্থাপনার নিরাপত্তা  দিতে ব্যর্থ সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোন  অধিকার নেই: মির্জা ফখরুল ছাত্র-জনতার খুনের দায়ে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে: বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ জনরোষ থেকে বাঁচাতে সরকার জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রশিবির ও বিরোধীদলের ওপর দোষ চাপানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে: মাওলানা এটিএম মা’ছুম কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলায় যুক্তরাষ্ট্র নিন্দা:ম্যাথিউ মিলার পবিত্র আশুরার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে সমাজে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় কাজ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর আহবান ব্লাকবেঙ্গল জাতের ছাগল মেহেরপুরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয়ের অন্যতম উৎস দিনাজপুর হাবিপ্রবিতে সাপ নিয়ে গবেষণায় সফল শিক্ষার্থী কামরুন নাহার কনা

রসের মাস জ্যৈষ্ঠের প্রথম দিন আজ

হারুন ইবনে শাহাদাত
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০২৪

আজ ১লা জ্যৈষ্ঠ। রসের মাসের প্রথম দিন। কিন্তু অনেক পত্রিকাই শিরোনাম করবে “মধুমাস শুরু”। বাংলা অভিধানে মধুমাস শব্দের অর্থ হলো, চৈত্রমাস। কিন্তু দেশের পত্রপত্রিকায় জ্যৈষ্ঠ মাস নিয়ে কোন কিছু লিখতে গিয়ে লেখা হয় মিষ্টি ফলের রসে ভরা মধুমাস। এভাবেই জ্যৈষ্ঠ মাসের সাথে মধু মাস বিশেষণটি জড়িয়ে গেছে। অভিধানের সত্য যেন হারিয়ে গেছে। লেখকের মনভূমিতে যে সত্যের উদয় হয়েছে তাকেই সবাই মেনে নিয়েছে। অভিধানের মধুমাস অভিধানেই আছে। কিন্তু লোকমুখে এখন জ্যৈষ্ঠই যেন আসল মধু মাস। যদিও এ কথা কারো অজানা নয়, মধু থাকে ফুলে, ফলে নয়। ফাল্গুন-চৈত্র বসন্ত কাল। এ সময় ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় বাংলার প্রকৃতি। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ গ্রীষ্মকাল। বসন্তের ফুল ফলে পরিণত হয় গ্রীষ্মে এসে। ছয় ঋতুর বাংলাদেশের প্রকৃতির এ রূপের বদল সত্যি বড় বৈচিত্র্যময়। গ্রীষ্মের শেষ মাস জ্যৈষ্ঠ, এ মাসে ফল পেকে রসের ভারে টইটম্বুর হয়।
তাই তো বার বার মনে পড়ছে,
‘ঘটে যা সত্য নহে,
সে সত্য যা রচিবে তুমি,
কবি তব মনভূমি রামের জন্মস্থান,
অযোধ্যার চেয়ে সত্য জেনো।’
কেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ পঙ্ক্তিমালা। কারণ রসের মাস জ্যৈষ্ঠ এ সত্য আজ হারাতে বসেছে। পত্রপত্রিকা আর সাহিত্যদের অভিধান দেখার এবং শেখার অবহেলার কারণে। যা সত্যি দুঃখজনক।
রসের মাস জ্যৈষ্ঠ মাসের রসে ভরা প্রধান ফল আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু। ফলের রাজা আম। কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল। বর্তমান সরকার আমগাছকে দিয়েছে জাতীয় গাছের মর্যাদা। আমের কদর আজকের নয়। পারস্যের কবি আমীর খসরু চতুর্দশ শতাব্দীতে আমকে ‘হিন্দুস্থানের সেরা ফল’ রূপে উল্লেখ করেছেন। আধুনিককালে বিখ্যাত উদ্যানবিদ পোপেনো আমকে ‘প্রাচ্যের ফলের রাজা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। সংস্কৃতে আম্র, বাংলায় আম। সংস্কৃতে আরো একটি নাম রয়েছে আমেরথরসাল। তবে রসাল বলতে শুধু আমই নয়, আমগাছটিও বোঝায়। আম অর্থ সাধারণ। সাধারণের ফল আম। আমের আদি নিবাস কোথায় তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও এ জনপদই আমের আদিবাস, এ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা একমত।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৭-এ আলেকজান্ডার সিন্ধু উপত্যকায় আম দেখে এবং খেয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন। এ সময়ই আম ছড়িয়ে পড়ে মালয় উপদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জ এবং মাদাগাস্কারে। ১৩৩১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে আমচাষ হচ্ছে আফ্রিকায়। ১৬ শতাব্দীতে আম পৌঁছে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে। ১৬৯০ সালে ইংল্যান্ডে কাচের ঘরে আমচাষের খবর শোনা যায়। সপ্তদশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে ইয়েমেনে পৌঁছে আম। ঊনবিংশ শতাব্দীতে ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে। ১৮৬৫ খ্রিষ্টাব্দে ইতালিতে আমচাষের খবর জানা যায়।
অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে পর্তুগিজদের হাত ধরে জাহাজে চেপে আম যায় আমেরিকা ও ব্রাজিলে। ১৭৭৪ খ্রিষ্টাব্দে স্পেনীয় ব্যবসায়ীদের বগলদাবা হয়ে আম যায় মেক্সিকো। ১৮৬৫ খ্রিষ্টাব্দে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মাটিতে প্রথম আমের আঁটি থেকে গাছ হয়।
বাহারি নামের প্রায় হাজার জাতের আম রয়েছে আমাদের দেশে। আমাদের দেশে পাওয়া যায় এমন কয়েক প্রজাতির আমের পরিচয় তুলে ধরা হলো। ১. ফজলি : বৃহদাকৃতি সুস্বাদু আম। শাঁস কমলা বর্ণের বা লাল হয়। গাছ বৃহদাকারের। নাবী জাতীয় আম। মধ্য জুলাই-মধ্য সেপ্টেম্বরে পাকে। ২. ল্যাংড়া : পাতলা বাকল ও হালকা বীজবিশিষ্ট জাত। শাঁস হালকা কমলাভ; মিষ্ট, রসাল ও আঁশবিহীন। আম ঋতুর মাঝামাঝিতে (জুনের শেষাংশ থেকে জুলাই) পাকে। ৩. গোপালভোগ : শাঁস গভীর কমলাভ। ওজন ২৫০ গ্রাম থেকে ৩২৫ গ্রাম। এটা আশু জাতীয় এবং জুন মাসে পাকে। ৪. কিষাণভোগ : জুন-মধ্য জুলাইতে পাকে (মধ্য মৌসুমি)। ৫. খীর্সাপাতি : গোপালভোগ অপেক্ষা সামান্য ছোট। মিষ্টি ও ছোট আঁটিবিশিষ্ট। শাঁস হলুদাভ বাদামি। আশু জাত (জুন); থোকা থোকা ফল। ঘরে রাখা চলে। ৬. হিমসাগর : মাঝারি আকারের এ ফল ওজনে ৩৭৫ থেকে ৫০০ গ্রাম হয়। জুন-জুলাই মাসে পাকে। ফল রসালো, মিষ্টি ও আঁশবিহীন এবং আঁটি ক্ষুদ্রকায়। ত্বক মাঝারি পুরু। মিষ্টতা ও সংরক্ষণশীলতার দিক থেকে অপূর্ব বলা চলে। ৭. কোহিতুর : মাঝারি আকারের এ ফল প্রায় ২৫০ গ্রাম ওজনের হয়। রাজশাহীর আম। শঁাঁস রসালো, সুমিষ্ট, কোমল; জুন-জুলাই (মধ্য-মৌসুমি)। ৮. মোহনভোগ : ২৭৫-৬২৫ গ্রাম হয়। গোলাকার ধরনের ফল। মাঝারি-নাবী জাত। ৯. গোলাপ খাস : ২৫০ থেকে ৩৭৫ গ্রাম ওজন। আশু জাত; মে-জুন মাসে পাকে। ১০. সামার বাহিশত চৌসা : মাঝারি আকারের, কাঁধ সমান, ঠোঁট স্পষ্ট; শাঁস হলুদ ও খুব মিষ্টি; নাবী জাত, জুলাই-আগস্টে পাকে। ১১. আশ্বিনা : সবচেয়ে নাবী জাত; মৌসুম জুলাই-আগস্ট।
অন্যান্য দেশি জাতের অন্যতম সটিয়ার করা (আশু), সূর্যপুরী, মাধ্যমিকা, কুয়া পাহাড়ি (নাবী), বোম্বাই (নাবী), মোহনভোগ (মাধ্যমিক), লতা-বোম্বাই (গাছ ক্ষুদ্রাকার, ফলও ক্ষুদ্রাকার, মধ্য-মৌসুমি)। বারি কর্তৃক মুক্তায়িত আম-জাতগুলো হচ্ছে – আশুজাতীয় বারি আম-১ (মহানন্দা) মধ্য-মৌসুমি, বারি আম-২ (আম্রপালি) যা কিছুটা নাবী, বারি আম-৩ এবং নাবী জাতীয় বারি আম-৪।
আম খাওয়ার বিভিন্ন পদ্ধতি আমাদের অনেক আগে থেকেই জানা। কাঁচা আমে কাঁচা মরিচ, আচার, চাটনি, আমদুধ, আমসত্ত্ব আর গাভির দুধ।
জ্যৈষ্ঠ মাসের একটি ফল কাঁঠাল। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আকারের মজার ফল এটি। কাঁঠাল শুধু জাতীয় ফল নয়, গরিবের ফল নামেও পরিচিত। কাঁঠাল কাঁচা অবস্থায় সবজিরূপেও মজা করে খায় এদেশের মানুষ। পাকা আম দুধ দিয়ে খেতে খুব মজা। কাঁঠাল দুধ ভাত ছাড়াও খাওয়া যায়। শুকনা বীজ সেঁকে, সিদ্ধ করে কিংবা সবজিরূপে তরকারি হিসেবে খাওয়া হয়।
জামের কথা আসলেই মনে পড়ে পল্লী কবি জসীমউদ্দিনের কবিতা, ‘পাকা জামের মধুর রসে রঙিন করি মুখ’। জাম সাধারণভাবে দুই প্রকার – ১. কালো জাম; ২. বুনো জাম। কালো জাম বড় আকারের এবং বুনো জাম ক্ষুদ্র। কুমিল্লা, নোয়াখালী, সিলেট, দিনাজপুর ও পাবনা এলাকায় জাম বেশি পাওয়া যায়।
এ মাসের আরেকটি রসানো ফল লিচু। দিনাজপুরের মাছুমপুর লিচুর জন্য বিখ্যাত। মাদ্রাজী ও বোম্বাই লিচু প্রায় সারা দেশে পাওয়া যায়। জ্যৈষ্ঠ মাসের রকমারি ফলের মধ্যে আরো রয়েছে তরমুজ, বাঙ্গি, জামরুল প্রভৃতি।
মহান আল্লাহ তায়ালার অপূর্ব নিয়ামত ফল। মানুষ সাধারণত রান্না করে খাবার খায়। কিন্তু ফল এমন একটি নিয়ামত যা রান্না করতে হয় না। খাওয়ার পর পানি খাওয়ারও প্রয়োজন নেই। কারণ অধিকাংশ ফলেই পরিমিত পরিমাণ পানি আছে। প্রবাদ আছে, ‘ফল খেয়ে পানি খায়, মরণ বলে আয় আয়’। অর্থাৎ ফল খাওয়ার সাথে সাথেই পানি না পান করলেই উপকার বেশি।
ফলমূলের এ মওসুমে আমরা প্রচুর ফল খাব। তবে সাবধান কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ফলে বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য মেশায় দ্রুত পাকানো ও চমক বাড়ানোর জন্য। এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের থেকে দূরে থাকতে হবে। যারা এমন অন্যায় করছে তাদেরকে সাবধান করতে হবে। সাবধান না হলে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে সহযোগিতা করা প্রত্যেক সচেতন নাগরিকের পবিত্র দায়িত্ব।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com