ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার রাফাহ শহরে সামরিক অভিযান বন্ধে ইসরায়েলকে দেওয়া আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের আদেশে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন ইসরায়েলের যুদ্ধবাজ ইহুদিবাদী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
বৈঠকে থাকবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ, যুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বেনি গ্যান্টজ এবং সরকারের আইন ও বিচারবিষয়ক উপদেষ্টা। বৈঠকের সংবাদ দিয়ে শুক্রবার আল জাজিরার সাংবাদিক সারা খাইরাত বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের রায়ে স্পষ্টতই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে ইসরায়েল সরকার। আইসিজের রায় ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকারের আইন উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন।’ রাতের খবরে বলা হয়, শীঘ্রই মিটিংয়ে বসতে যাচ্ছেন নেতানিয়াহু। এমনও খবর রয়েছে যে, রাফাহ অভিযান অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের সিদ্ধান্ত আসার পর থেকে ইসরায়েল এই মুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার চেষ্টা করছে। ইসরায়েলি মন্ত্রীদেরও এ বিষয়ে কথা না বলার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যদিও ইতোমধ্যে একাধিক মন্ত্রী এই রায়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
জাজিরার সাংবাদিক সারা খাইরাত বলেন, ‘পরবর্তীতে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হলে তারা আইনগতভাবে ঠিক আছে কি না তা নিশ্চিত করা এবং আইসিজের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আইনগতভাবে সঠিক প্রতিক্রিয়া কীভাবে ব্যক্ত করা যায় সে বিষয়ে বৈঠকে আলাপ করে। স্পষ্টতই, তারা (নেতানিয়াহু সরকার) চিন্তিত এবং উদ্বিগ্ন।’
তিনি বলেন, নেতানিয়াহু ও তার সরকারের মন্ত্রীদের প্রতিক্রিয়ায় বলে দেয়— এই রায়কে তারা কতটা গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছেন। রায়ের পর প্রথম প্রতিক্রিয়া জানান অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ বন্ধ করার অর্থ ইসরায়েলের অস্তিত্ব বন্ধ হয়ে যাবে। ইসরায়েল এতে সম্মত হবে না।’
এছাড়া রায়কে ‘নৈতিক পতন এবং নৈতিক বিপর্যয়’ বলে অভিহিত তীব্র সমালোচনা করেছেন ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার ল্যাপিড।
ধারাবাহিকভাবে নেতানিয়াহুর সমালোচনা করলেও রায়ের নিন্দা জানিয়েছেন দেশটির যুদ্ধকালীন মন্ত্রীসভার আরেক সদস্য বেনি গ্যান্টজ। তিনি বলেছেন, ‘ইসরায়েল রাষ্ট্র তার জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে এবং তার নাগরিকদের নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ – যেখানেই এবং যখনই প্রয়োজন– রাফাসহ।’
রাফায় গণহত্যার অভিপ্রায়ের অভিযোগে গত সপ্তাহে দক্ষিণ আফ্রিকার করা আবেদনের প্রেক্ষিতে শুক্রবার রাফায় অবিলম্বে সামরিক অভিযান বন্ধ এবং সৈন্য প্রত্যাহারে ইসরায়েলকে নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত (আইসিজে)। রায়ে আদালতের নির্দেশিত ব্যবস্থা প্রয়োগে অগ্রগতির বিষয়ে এক মাসের মধ্যে আদালতে রিপোর্ট করতে ইসরায়েলকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারকরা।
আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে ইতোমধ্যেই প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, হামাস, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ, বেলজিয়াম, এইচআরডব্লিউসহ বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। এদিকে গাজা, ইউক্রেনসহ বিভিন্ন জায়গায় মানবিক কর্মীদের সুরক্ষা সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ইসরায়েলি হামলায় গাজায় এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলায় এবং সুদানে মানবাধিকার কর্মী এবং জাতিসংঘের কর্মীদের সুরক্ষার আহ্বান জানিয়ে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। পক্ষে নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে ১৪ সদস্য ভোট দেয়। রাশিয়া ভোটদানে বিরত থাকে।জাতিসংঘের মতে, ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হাতে এর ১৯০ জনেরও বেশি কর্মী নিহত হয়েছে। যা সংস্থাটির প্রায় ৮০ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যা।