গাজীপুরের কালীগঞ্জে উপজেলা প্রশাসনের একাধিক অভিযান এবং জেল জরিমানার পরেও কমছে না অবৈধভাবে কৃষি জমি বালি ও মাটি দিয়ে ভরাট। রাতের আধাঁরে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ব্যক্তি মালিকানা থেকে শুরু করে বিভিন্ন হাউজিং কোম্পানী ড্রাম্প ট্রাক ও ভেকু দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করে বালি ভরাট করছে। এবার বিষয়টি গাজীপুর জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের শিমুলিয়া গ্রামের পিতা মো. হান্নান সরকারের ছেলে ভুক্তভোগী বেনজীর সরকার। বেনজীর সরকার বলেন, উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের পিপুলিয়া মৌজার বাংলাদেশ রেলওয়ের রেল লাইনের উত্তর পার্শ্বের কৃষি জমিগুলো থেকে মাটি কেটে বাঁধ নির্মান করে বালি দিয়ে ভরাট করার জন্য বাংলা মার্কসহ বেশ কিছু হাউজিং কোম্পানী দীর্ঘদিন যাবৎ তাদের কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। জমি গুলো বেলাই বিলের সাথে সংযোগ রয়েছে এবং বর্ষাকালে বিলের পানি দিয়ে কৃষি জমির সেচ কাজ করা হয়। কিন্তু হাউজিং কোম্পানি বাঁধ নির্মাণ করার ফলে আমার ও বেশ কিছু জমির মালিকগনের ধানসহ অন্যান্য ফসল পানির অভাবে চাষাবাদ করতে পারবোনা। তিনি আরো বলেন, এ কাজে আমি ন্যায় সংগত বাঁধা প্রদান করি এবং আমাদের কালীগঞ্জ উপজেলার ভূমি সহকারী কমিশনারকে মৌখিকভাবে জানানোর পরও বাঁধ নির্মাণ ও বালি ভরাট কাজ বন্ধের কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। তাই আমি জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। আমি চাই ডিসি সরেজমিনে তদন্তপূর্বক কৃষি জমিতে বাঁধ নির্মাণ ও বালি ভরাট বন্ধ করিয়া আমাদের কৃষি জমিতে চাষাবাদ করার সুযোগ করে দিবে। জানা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের আওতাধীন টঙ্গী-কালীগঞ্জ-ঘোড়াশাল আঞ্চলিক সড়কে পাশে পিপুলিয়া মৌজার আরএস ১১২০, ১১১৯, ১১৫২, ১১৫১, ১১৩৯, ১১৪০, ১১৮৪, ১১৫৮ ও ১০১৮, দাগে কৃষি জমি ও জলাশয় ভরাট করছে উপজেলার তুমিলিয়া ইউনিয়নের চুয়ারিখোলা গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা কাজী নাহিদ ও দক্ষিণ ভাদার্ত্তী গ্রামের বিএনপি হানিফের নেতৃত্বে নাগরী ইউনিয়নের পিপুলিয়ার গ্রামের সুমন, নলছাটা গ্রামের নারায়ণ ও সুমন। সরেজমিনে দেখা গেছে, টঙ্গী-কালীগঞ্জ-ঘোড়াশাল আঞ্চলিক সড়কের পাশে বেলাই বিলে বাঁধ নির্মাণ করে বালি দিয়ে ভরাট করছে বাংলা মার্ক, নর্থ সাউথ, তেপান্তর গ্রুপ। এছাড়াও নাগরী ইউনিয়নের গলান এলাকায় ভাইয়া গ্রুপ, সিআইভিআইসি নামের হাউজিং কোম্পানীগুলো ড্রাম্প ট্রাক ও ভেকু দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করে বালি ভরাট করছে। জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৭ জানুয়ারি উচ্চ আদালতের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এক রিট আবেদনের শুনানি করেন। শুনানিতে বলা হয়, কালীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় খাল-বিল, নদী-পুকুর, কৃষি জমি-জলাশয় ভরাট এবং অবৈধ দখলের উপরকট স্থিতাবস্থা জারি করা হলো। আদালতের ওই নির্দেশ অমান্য করেই বিভিন্ন হাউজিং কোম্পানি কালীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় কৃষি জমি ও জলাশয় ভরাট কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। বাংলা মার্ক এর পরিচালক ইরফান বাপ্পী বলেন, আমাদের কোন হাউজিং কোম্পানির না, আমাদের কোম্পানি হচ্ছে বাংলা মার্ক এগ্রো। কৃষক বা কৃষি নিয়ে আমাদের কাজ। হয়রানী করার জন্য বেনজীর নামের এক লোক বাংলা মার্কের বিরুদ্ধে অহেতুক অভিযোগ করেছে। অথচ তার নামে সেখানে কোন জমি নেই। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস. এম ইমাম রাজী টুলু বলেন, আমি মাস খানেক হয় এ উপজেলায় যোগদান করেছি। কিন্তু যখনই কৃষি জমি থেকে মাটি কাটার খবর পেয়েছি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তখনই অভিযান পরিচালনা করছি এবং জেল-জরিমানা করেছি। নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে ভ্রাম্যমান আদালতের এ ধরণের অভিযান অব্যহত আছে।