‘এখন আর আগের মতো কাম-কাজ নাই! আয়-রোজগারও কম। সবাই ইস্টিলের (স্টিল) জিনিসপত্র ব্যবহার করে, লোহার জিনিস আগের মতো কেউ বানায় না।’ ঠিক এভাবেই কথা গুলো বলছিলেন ভালুকা উপজেলার থানার মোড় এলাকার কামার কারিগর উজ্জল। সামনেই কোরবানির ঈদ, সময় টা কামার পল্লীতে হাঁপর ও হাতুড়ির টুংটাং শব্দে মুখরিত থাকার কথা। কিন্তু বিদেশি দা, ছুরির দাপটে দেশীয় দা, ছুরির চাহিদা কমায় ভালো নেই ময়মনসিংহের ভালুকার কামারপল্লীর কর্মীরা। তারা বলছেন, দেশি দা, ছুরির চাহিদা না থাকায় তাদের ব্যস্ততা কমেছে। তবে যেটুকু দা-ছুরি তৈরি হচ্ছে তারও বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে। এতে বিদেশি পণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাজারে টিকে থাকতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। একসময় বৃহৎ এই ধর্মীয় উৎসবকে সামনে রেখে ভালুকার কামারপল্লীতে দিন-রাত দা, ছুরি, বটিসহ কোরবানির সামগ্রী তৈরিতে ব্যস্ততা থাকতো। তবে, এবার অনেকটাই অলস সময় কাটছে কামারদের। এতে উপজেলার বিভিন্ন স্থানের কামারপল্লী যেন হারিয়েছে তাদের চিরচেনা রূপ। ভালুকা উপজেলার বিভিন্ন এলাকাসহ ময়মনসিংহের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা কোরবানির সামগ্রী কেনার জন্য এখানে আসতো। সারাবছরের লোকসান এই সময়ে কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতো তারা। তবে এবার শুধু দা, বটি, ছুরি শান দেওয়া ছাড়া নতুন হাতিয়ার তৈরির চাহিদা অনেকটা কমে গেছে। কর্মকাররা আরো জানান, কোরবানির সামগ্রী তৈরির কাঁচা মালসহ লোহা, কয়লা ও রেতের দাম বেড়েছে। প্রতি কেজিতে লোহার দাম দ্বিগুণ বেড়ে ৬০ থেকে ৮০ টাকা, প্রতি টিন কয়লা ১০/২০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ টাকায়। এতে উৎপাদন খরচ বাড়লেও কমেছে লাভের পরিমাণ। তেমন চাহিদা না থাকায় বানানো পণ্য তারা সীমিত লাভে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। এখানে ১০০ টাকা থেকে শুরু করে প্রায় হাজার টাকার বিভিন্ন কোরবানির সামগ্রী রয়েছে। মল্লিকবাড়ী বাজারের কারিগর শ্যামল বলেন, ‘আগে এই কর্মের অনেক কদর ছিল। ঈদের আগে কাজের অনেক ব্যস্ততা থাকতো। দিন-রাত কোরবানির জিনিসপত্র তৈরি করেও সময় পেতাম না। এখন আর তেমন কাজ নেই। সবাই স্টিলের তৈরি বিদেশি জিনিসপত্র ব্যবহার করে। অন্য কোনো কাজ পারিও না তাই বাধ্য হয়েই এই কাজ করি। এখন আর এই কর্ম দিয়ে জীবন চলে না।’
সিডস্টোর বাজারের আরেক প্রবীণ কারিগর তপন কর্মকার বলেন, ‘৪০ বছর ধরে এই পেশায় আছি। কোরবানির কাজকর্ম এখন আর আগের মতো নাই। আগের নেওয়া অর্ডারের টুকটাক কাজ এখনো করছি। নতুন কোনো অর্ডার পাইনি। বর্তমানের লোহা ও কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভের পরিমাণ অনেকাংশে কমে গেছে। এই কাজের অবস্থা ভালো না তাই আমাদের বংশের নতুন প্রজন্মও এই শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। সরকার যদি আমাদের কামারদের প্রতি নজর রাখে, তাহলে আমরা এই পেশাকে টিকিয়ে রাখতে পারবো।’