শনিবার, ০৬ জুলাই ২০২৪, ০১:০৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
দাবা খেলতে খেলতেই মারা গেলেন গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়া আসমা আব্বাসীর ইন্তেকাল রোহিঙ্গা সঙ্কট: আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ ও সহায়তা কমছে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় হাতের টানে ঊঠে যাচ্ছে রাস্তার পিচ দেবিদ্বারে ঝূঁকিপূর্ণ সেতুতে চালক ও যাত্রীদের আতংকে পারাপার পাঁচবিবিতে বণিক সমিতির ত্রি-বার্ষিক নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র বিক্রি শুরু গাইবান্ধায় দিনমজুরের বাড়ীঘর ভাংচুর লুটপাট কোটা বাতিলের দাবিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ কালীগঞ্জে মিন্টুর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের মিছিল ফরিদপুরে টানা চতুর্থ দিনের মতো চলছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মবিরতি

সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্চে ঝুঁকিতে রেলসেতু অনুমোদনের আগেই বালু উত্তোলন

এম এ মতিন সিলেট
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১১ জুন, ২০২৪

সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার কুরকুচি খাল ও কুশিয়ারা নদীর মুখে প্রচুর পলি জমে ভারতীয় ঢলে। পলির কারণে এ সময় পানি নামতে পারে না। তখন এই খাল ও নদীসংলগ্ন সড়কটি ভেঙে যায়। গত বছর বন্যায় একই কারণে সড়কটি ভেঙে গিয়েছিল।পলি অপসারণের জন্য গত বছরই সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একটি প্রস্তাবনা পাঠায় সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। সেই প্রস্তাবনা এখনো অনুমোদন পায়নি। ইতোমধ্যে স্থানীয় এক বালু ব্যবসায়ী ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলতে শুরু করেছেন। এতে ঝুঁকিতে পড়েছে উপজেলার চান্দপুর-ইসলামবাজার-মানিকোনা-গোলাপগঞ্জ সড়ক, আশপাশের কবরস্থান ও সড়কের পাশের রেলসেতু। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে দুই উপজেলার লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াতের একমাত্র সড়কটির বিভিন্ন অংশে ইতোমধ্যে ভাঙন দেখা দিয়েছে। যানবাহন ছাড়াও হেঁটে এই সড়ক দিয়ে যাওয়াই এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। যদিও সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, নদীতে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন বৈধ নয়। যেহেতু কুরকুচি খাল ও কুশিয়ারা নদীর পলি অপসারণের প্রস্তাবনা এখনো অনুমোদন পায়নি, তাই এই জায়গা থেকে এখন কোনোভাবেই বালু তোলার সুযোগ নেই। স্থানীয়রা জানান গঙ্গাপুর গ্রামের এক ব্যক্তি বালুর ব্যবসা করেন। তিনি কুশিয়ারা নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলছেন। গত ৪ জুন ফেঞ্চুগঞ্জের ইসলামবাজার এলাকার কুশিয়ারা নদীতে ড্রেজার মেশিন, পাইপসহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদি বসান। তখন স্থানীয় কয়েকজন নদী থেকে বালু তুলতে বাধা দেন। ইমন তাদের জানান, সড়ক সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরাদ্দের কাজ তিনি পেয়েছেন। স্থানীয়রা জানান, প্রায় সাত মাস আগে কুশিয়ারা নদীর মুখে কুরকুচির খাল পারের সড়কটি ভেঙে যায়। গ্রামবাসী তখন প্রায় ১৯ লাখ টাকা চাঁদা তুলে ওই সড়ক মেরামত করেন।সম্প্রতি অতিবৃষ্টি ও বন্যার প্রকোপ বাড়লে আবারও সড়কটির অবশিষ্ট অংশ ভেঙে নদীতে চলে যায়। গত দেড় বছরে সড়কটি সংস্কারের জন্য সরাসরি কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।কয়েকদিন ধরে ওই সড়ক মেরামতের নামে অবাধে বালু তুলে যাচ্ছে বালুখেকো চক্র। খবর পেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ জহুরুল হোসেন ওই ড্রেজার মেশিনটি বন্ধ করে দেন। নির্দেশ দেন এখানে ড্রেজার চালানো যাবে না। কিন্তু অদৃশ্য কারণে পরের দিন থেকেই আবারও ড্রেজার চালিয়ে বালু উত্তোলন শুরু হয়। গত সোমবার পর্যন্ত বালু উত্তোলন কার্যক্রম চলমান ছিল। কুরকুচি খালের মুখ ও কুশিয়ারা নদীর মোহনা থেকে বালু তুলে সেগুলো কবরস্থানের সামনে রাখা হচ্ছে। সহকারী কমিশনার শাহ জহুরুল হোসেন বলেন, ‘৬ জুন অভিযোগ পেয়ে আমি নিজে গিয়ে ড্রেজার মেশিন বন্ধ করে এসেছি। আবারও চালানো হয়েছে কি না জানি না। যদি হয়ে থাকে তাহলে আবারও ব্যবস্থা নেব।’ স্থানীয় ইসলামবাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এখানে বালু ব্যবসার জন্য রাস্তার নাম ব্যবহার করা হচ্ছে। আমরা তো ভয়ে মুখ খুলতে পারি না। ভেঙে যাওয়া রাস্তা আরও ভেঙে মার্কেট, দোকানপাট বিলীন হবে, পাশের কবরস্থান নদীতে চলে যাবে, রেলসেতু দুর্বল হয়ে বড় অঘটন ঘটতে পারে। কবরস্থান বা মার্কেটের ক্ষতি হলে এখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হবার শঙ্কা রয়েছে। এদিকে, কুশিয়ারা নদীর ওপর রেলসেতুটি ঢাকা-সিলেট রেলপথের দ্বিতীয় দীর্ঘতম সেতু। এ সেতুটির দেখভালে বিশেষ নির্দেশনাও রয়েছে। মাইজগাঁও রেলস্টেশন সূত্রে জানা গেছে, রেলসেতুর এক কিলোমিটারের মধ্যে ড্রেজার চালানো বেআইনি। রেলস্টেশন থেকে বলা হয়েছে, এ বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। বালু উত্তোলনকারী ইমন আহমেদ বলেন, ‘ইসলাম বাজার রাস্তা পুরোপুরি ভেঙে গেছে। এই রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলাচল ও মানুষজনের হাঁটার জন্য আমরা নদী থেকে বালু তুলে বস্তায় ভরে সড়কের পাশে ফেলব।’ সড়ক সংস্কারে সরকারি কোনো প্রকল্পের অনুমোদন পেয়েছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে এই কাজ করছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনুমোদন আছে।’ পাউবো ও উপজেলা প্রশাসন এ ধরনের কোনো বরাদ্দ দেয়নি, তারপরও আপনি কেন ড্রেজার দিয়ে নদী থেকে বালু তুলছেন- এমন প্রশ্নে ইমন আহমেদ কোনো উত্তর দিতে পারেননি। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ফেঞ্চুগঞ্জ শাখার উপসহকারী প্রকৌশলী গোলাম বারী বলেন, ‘নদী খননের জন্য আমরা একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছি। এখনো এই প্রকল্পের অনুমোদন হয়নি। এটা এ সপ্তাহের মধ্যে অনুমোদন হয়ে যাবে। স্থানীয় এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও বলছেন- ‘আমাদের প্রকল্প অনুমোদন হবেই। ইসলামপুর বাজার যেহেতু ভেঙে যাচ্ছে তাই তারা কাজ করতে বলেছেন।’ নদীতে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন অবৈধ জানিয়ে গোলাম বারী আরও বলেন, ‘প্রকল্পের জন্য আমাদের বালু প্রয়োজন। বালু তোলার কারণে রেলসেতুর ক্ষতি হোক- সেটা আমরা চাই না। তবে আমরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি, এ মৌসুমে এখান থেকে পলি অপসারণ সম্ভব না। এ কাজ শুষ্ক মৌসুমে করতে হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com