মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের একটি এগ্রো খামারে ৫০০ টাকা কেজি ওজনে বিক্রি হচ্ছে গরু। আসন্ন ঈদুল আজহা ঘিরে উপজেলায় কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ১১ হাজার ৮৪৫টি গবাদিপশু। গতকাল সরজমিন শ্রীমঙ্গল ইউনিয়নের হাইল হাওর সংলগ্ন জেটি রোডে অবস্থিত শ্রীমঙ্গল এগ্রো খামারে গিয়ে দেখা যায় ৪ কেয়ার জায়গাজুড়ে তৈরি করা বিশাল গবাদি পশুর খামারে রয়েছে ফ্রিজিয়ান জাতের ৩ শতাধিক গরু। এরমধ্যে এবারের কোরবানির জন্য বিক্রিযোগ্য ছোট-বড় মোট সাতাশটি ষাঁড় রয়েছে। যেগুলোর মূল্য দেড় লাখ থেকে শুরু করে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত। খামারের গরুগুলোর মধ্যে এক টনেরও বেশি ওজনের একটি ষাঁড় ছাড়া বাকিগুলো গরুগুলো ওজনে বিক্রি করা হচ্ছে। কেজিপ্রতি দাম চাওয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা। খামারে সর্বনি¤œ ৩০০ থেকে সর্বোচ্চ ১১০০ কেজি ওজনের গরু রয়েছে।
তবে মাঝারি ওজনের গরুর চাহিদা অনেক বেশি। ইতোমধ্যে খামারের কয়েকটি গরু ওজনে বিক্রি হয়েছে বলে জানান খামারের সুপার ভাইজার সাগর আহমেদ। শ্রীমঙ্গল এগ্রো খামারের বিশেষ আকর্ষণের মধ্যে রয়েছে এক টনেরও বেশি ওজনের একটি ষাঁড়। উচ্চতা প্রায় ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি এবং লম্বা প্রায় সাড়ে ৯ ফুট। ষাঁড়টির মূল্য ১২ লাখ টাকা দাম চাচ্ছেন খামার কর্তৃপক্ষ। এখন পর্যন্ত ক্রেতা কর্তৃক এই ষাঁড়ের সর্বোচ্চ দাম ওঠেছে সাড়ে ৮ লাখ টাকা। তবে ১০ লাখ টাকা হলে বিক্রি করা হবে বলে জানান খামার কর্তৃপক্ষ। তারা আরও জানান, ষাঁড়টিকে সম্পূর্ণ ভেজালমুক্ত দেশীয় খাবার দিয়ে বড় করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের ডাল, ঘাস, ভাতের মাড় ছাড়া কোনো ফিড বা ওষুধ খাওয়ানো হয়নি। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কর্ণ চন্দ্র মল্লিক ষাঁড়টি লালন-পালনে সবসময় পরামর্শ দিয়ে আসছেন। বড় ষাঁড়টি দেখতে প্রতিদিনই লোকজন ভিড় করছেন খামারে। দরদাম করছেন অনেকেই। কেউ কেউ ছবিও তুলছেন বলে শ্রীমঙ্গল এগ্রো কর্তৃপক্ষ জানান। ওজনে গরু বিক্রির কারণ হিসেবে শ্রীমঙ্গল এগ্রো খমারের সুপারভাইজার মোঃ সাগর আহমেদ জানান, গরুর ওজন মাপা হয় ডিজিটাল পাল্লায়, যা ডিজিটাল স্কেল নামে পরিচিত। আমাদের পক্ষ থেকে ঈদের একদিন আগে পর্যন্ত ক্রেতা চাইলে আমরা বিক্রয় হওয়া গরুটি আমাদের যতেœ রাখবো এবং ক্রেতাদের বাসায় পৌঁছে দেবো ইনশা আল্লাহ। এমনকি গরুর খাওয়ানোও আমাদের দায়িত্বে। এছাড়া ক্রেতারা যেদিন গরু নিবেন ওইদিন আবার ওজন হবে তার দাম রাখা হবে। পূর্বের ওজন থেকে কম হলে ক্রেতাদের কাকাছ থথেকে সেটার দাম কম রাখা হবে। এই সুযোগ-সুবিধাটুকুও আমরা দিয়ে থাকি। এছাড়া শুধু কোরবানির ঈদেই গরু কিনে থাকেন এমন অনেক মানুষ রয়েছেন। ফলে গরুর দাম নির্ধারণের কোনো ধারণা থাকে না তাদের। পাশাপাশি গরুর সরকারি কোনো বিক্রয় মূল্য নেই। এই অবস্থায় বাজারে গরু কিনতে গিয়ে অনেকেই প্রতারিত হন। তাই শ্রীমঙ্গল এগ্রো খামারে গরু ওজন করেই বিক্রি করা হচ্ছে। গরুর দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি মাত্র ৫০০ টাকা। পছন্দের গরুটি স্কেলে পরিমাপ করেই দাম নির্ধারণ করছেন ক্রেতারা। প্রতারিত হওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে ঈদকে ঘিরে ইতোমধ্যেই শ্রীমঙ্গল উপজেলার সবচেয়ে বড় গবাদিপশুর বাজার সাগরদিঘী রোড, সিন্দুরখান বাজার, কালাপুর বাজারসহ বিভিন্ন খোলা মাঠে শুরু হয়েছে কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয়। শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ছোট-বড় ৬০৭টি খামারে মোট ১১ হাজার ৮৪৫টি গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে। শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কর্ণ চন্দ্র মল্লিক জানান, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় এবার কোরবানির লক্ষ্যমাত্রা ১১ হাজার ৫৬৫টি গবাদিপশু। উপজেলায় ছোট-বড় ৬০৭টি খামারে মোট ১১ হাজার ৮৪৫টি গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে। এরমধ্যে গরু রয়েছে ৮ হাজার ৮১২টি, মহিষ ১২৬টি, ছাগল ২৫০৪টি, ভেড়া ৪০৩টি। উপজেলায় মোট চাহিদা রয়েছে ১১ হাজার ৫৬৫টি গবাদিপশু। আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য গবাদিপশুর কোনো ঘাটতি নেই। চাহিদার চেয়ে ২৮০টি গবাদিপশু বেশি রয়েছে।