মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০২৪, ০৩:১২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::

কেমন ছিল মহানবী (সা.)-এর কোরবানি

শরিফ আহমাদ
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন, ২০২৪

কোরবানি করা মহান আল্লাহর নির্দেশ। পৃথিবীতে কোরবানির সূচনা হয়েছে আদম (আ.)-এর দুই সন্তান হাবিল-কাবিলের মাধ্যমে। ইবরাহিম (আ.) ও ইসমাঈল (আ.)-এর কোরবানির অবিস্মরণীয় ঘটনাকে কেন্দ্র করে উম্মতে মুহাম্মদির ওপর কোরবানি ওয়াজিব করা হয়েছে। কোরআন-হাদিসে কোরবানির গুরুত্ব, বিধান ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে ।
কোরবানিসংক্রান্ত কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করা হলো: কোরবানি করা ওয়াজিব: মুহাম্মাদ ইবনে সিরিন (রহ.) বলেন, আমি ইবনে ওমর (রা.)-এর কাছে কোরবানি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম যে তা ওয়াজিব কি না? তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) কোরবানি করেছেন এবং তার পরে মুসলমানরাও কোরবানি করেছেন এবং এই বিধান অব্যাহতভাবে প্রবর্তিত হয়েছে। (তিরমিজি,হাদিস : ১৫০৬; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩১২৪)
প্রতিবছর কোরবানি আবশ্যক:মিখনাফ ইবনে সুলাইম (রহ.) বলেন, আমরা আরাফাতের ময়দানে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে অবস্থানরত ছিলাম। তখন তিনি বলেন, হে জনগণ! প্রত্যেক পরিবারের পক্ষ থেকে প্রতিবছর একটি কোরবানি ও একটি আতিরা আছে। তোমরা কি জান আতিরা কী? তা হলো যাকে তোমরা ‘রাজাবিয়া’ বলো। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩১২৫)
কোরবানি আল্লাহর প্রিয়: আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, কোরবানির দিন রক্ত প্রবাহিত করা (জবাই করা) অপেক্ষা আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় মানুষের কোনো আমল হয় না। কিয়ামতের দিন এর শিং, লোম, পায়ের খুর সবসহ উপস্থিত হবে।‌ এর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই আল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদা পৌঁছে যায়। সুতরাং স্বচ্ছন্দ হৃদয়ে তোমরা তা করবে। (তিরমিজি, হাদিস : ১৪৯৩; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৪৯৩)
মহানবী (সা.)-এর কোরবানি: জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে কোরবানির ঈদে প্রত্যক্ষ করেছি। তিনি খুতবা প্রদান শেষ করে মিম্বার থেকে নেমে এলেন। একটি মেষ আনা হলো। রাসুল (সা.) নিজের হাতে সেটিকে জবাই করেন। বলেন, ‘বিসমিল্লহি আল্লাহু আকবার’। এটি হলো আমার পক্ষ থেকে এবং আমার উম্মতের মধ্যে যারা কোরবানি দিতে পারেনি তাদের পক্ষ থেকে। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৫০১; তিরমিজি, হাদিস : ১৫২১)
সর্বোচ্চ সাতজন শরিক: জাবির (রা.) বলেন, আমরা হজের ইহরাম বেঁধে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে রওনা হলাম। তিনি আমাদের প্রতিটি উট বা গরু সাতজনে মিলে কোরবানি করার নির্দেশ দিলেন। (মুসলিম, হাদিস : ৩০৫৬)
কোরবানির অযোগ্য পশু:উবাইদ ইবনে ফাইরুজ (রহ.) বলেন, আমি বারা ইবনে আজিব (রা.)-কে বললাম, রাসুলুল্লাহ (সা.) যে ধরনের পশু কোরবানি করতে অপছন্দ অথবা নিষেধ করেছেন সে সম্পর্কে আমাদের বলুন। তখন তিনি বলেন, রাসুল (সা.) তাঁর হাতের ইশারায় বলেন, এরূপ আর আমার হাত তাঁর হাতের চেয়ে ক্ষুদ্র। চার ধরনের পশু দিয়ে কোরবানি করলে তা যথেষ্ট হবে না। অন্ধ পশু, যার অন্ধত্ব সুস্পষ্ট; রুগ্ণ পশু, যার রোগ সুস্পষ্ট; পঙ্গু পশু, যার পঙ্গুত্ব সুস্পষ্ট এবং কৃশকায় দুর্বল পশু, যার হাড়ের মজ্জা শুকিয়ে গেছে। উবাইদ (রহ.) বলেন, আমি ত্রুটিযুক্ত কানবিশিষ্ট পশু কোরবানি করা অপছন্দ করি। বারা (রা.) বলেন, যে ধরনের পশু তুমি নিজে অপছন্দ করো তা পরিহার করো এবং অন্যদের জন্য তা হারাম কোরো না। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩১৪৪)
কোরবানি করার সময়:বারা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, আমাদের এই দিনে আমরা সর্বপ্রথম যে কাজটি করব, তা হলো নামাজ আদায় করব। এরপর ফিরে এসে আমরা কোরবানি করব। যে ব্যক্তি এভাবে তা আদায় করল সে আমাদের নীতি অনুসরণ করল। আর যে ব্যক্তি আগেই জবাই করল, তা এমন গোশতরূপে গণ্য, যা সে তার পরিবার-পরিজনের জন্য আগাম ব্যবস্থা করল। এটা কিছুতেই কোরবানি বলে গণ্য নয়। তখন আবু বুরদা ইবনে নিয়ার (রা.) দাঁড়ালেন, আর তিনি (নামাজের) আগেই জবাই করেছিলেন। তিনি বলেন, আমার কাছে একটি বকরির বাচ্চা আছে। নবী করিম (সা.) বলেন, তা-ই জবেহ করো। তবে তোমার পরে আর কারো পক্ষে তা যথেষ্ট হবে না। (বুখারি, হাদিস : ৫১৪৭ )
কোরবানি না করার পরিণাম: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি না করে সে যেন আমাদের ঈদের মাঠের কাছেও না আসে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩১২৩ )
কোরবানি করার সওয়াব: জায়িদ ইবনে আরকাম (রা.) বলেন, সাহাবিরা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.) এই কোরবানি কী? তিনি বলেন, তোমাদের পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নত। তাঁরা আবার জিজ্ঞাসা করেন, হে আল্লাহর রাসুল! এতে আমাদের জন্য কি (সওয়াব) আছে? তিনি বলেন, প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি রয়েছে।‌ তাঁরা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! লোমশ পশুদের পরিবর্তে কী হবে (এদের পশম তো অনেক বেশি)? তিনি বলেন, লোমশ পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়েও একটি করে নেকি আছে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩১২৭ )
কোরবানির বিশেষ প্রতিদান: আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, হে ফাতেমা! তুমি তোমার কোরবানির জন্তুর নিকট যাও। কেননা তোমার কোরবানির জন্তু জবেহ করার পর রক্তের ফোঁটা মাটিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তোমার যাবতীয় গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। ফাতেমা (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! এটা কি শুধু আমরা যারা আহলে বাইত তাদের জন্য, না সব মুসলিমের জন্য? রাসুলুল্লাহ (সা.) জবাব দিলেন, এটা আমাদের জন্য এবং এটা সব মুসলমানের জন্য। কথাটি তিনি দুইবার বলেন। (মুস্তাদরাক হাকেম, হাদিস : ৭৫২৪)
কোরবানি করার নিয়ম: শাদ্দাদ ইবনে আওস (রহ.) বলেন, রাসুল (সা.) থেকে আমি দুটি কথা স্মরণ রেখেছি। তিনি বলেছেন, আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক বিষয়ে তোমাদের ওপর ইহসান (যথাসাধ্য সুন্দররূপে সম্পাদন করা) অত্যাবশ্যক করেছেন। সুতরাং তোমরা যখন কাউকে হত্যা করবে, তখন উত্তম পন্থার সঙ্গে হত্যা করবে।‌ আর যখন জবেহ করবে, তখন উত্তম পন্থার সঙ্গে জবেহ করবে। তোমাদের প্রত্যেকে যেন তার ছুরি ধার করে নেয় এবং তার জবেহকৃত জন্তুকে শাস্তি প্রদান না করে (অহেতুক কষ্ট না দেয়)। (মুসলিম, হাদিস : ৪৮৯৭)
কোরবানি করার দোয়া:জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) বলেন, কোরবানির দিন নবীজি (সা.) দুটি শিংবিশিষ্ট সাদা ও কালো রং মিশ্রিত দুম্বা কোরবানির উদ্দেশ্যে কিবলামুখী করে শোয়ান এবং এই দোয়া পাঠ করেন—‘ইন্নি ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফা ও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকিন। ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়ায়া ও মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। লা শারিকালাহু ওয়া বিজালিকা উমিরতু ওয়া আনা আওওয়ালুল মুসলিমীন। আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা আন মুহাম্মাদিন ওয়া উম্মাতিহি।’ এরপর তিনি ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে দুম্বাকে জবাই করেন।‌ (আবু দাউদ, হাদিস : ২৭৮৬ )
কোরবানির গোশতের বিধান: সুলাইমান ইবনে বুরায়দা, তার পিতা বুরায়দা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, আমি তোমাদের তিন দিনের পরও কোরবানির গোশত খেতে নিষেধ করেছিলাম, যেন সচ্ছল ব্যক্তিরা অসামর্থ্য ব্যক্তিদের উদারভাবে তা দিতে পারে। এখন তোমরা যা ইচ্ছা খাও। অন্যকেও খাওয়াও এবং স য়ও করে রাখতে পারো। (তিরমিজি, হাদিস : ১৫১০)




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com