কক্সবাজারে পাহাড় ধ্বসে শহর ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গত তিন দিনে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার ২১ জুন ভোর রাত ৩টার দিকে পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাদশা ঘোনা এলাকায় পাহাড় ধ্বসে আনোয়ার হোসেন ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মাইমুনা আক্তারের মৃত্যু হয়েছে। কক্সবাজার পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হেলাল উদ্দিন কবির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। জানাযায়, বৃহস্পতিবার রাতভর বৃষ্টি হলে ভোর রাতে হঠাৎ করে পাহাড় ধ্বসে পড়ে। খবর পেয়ে স্থানীয়রা মাটি সরিয়ে তাদের উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। সাত মাস আগে এ দম্পতির বিয়ে হয়েছিল। এ দম্পতির মৃত্যুতে ওই এলাকার মানুষ ও স্বজনদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। প্রসঙ্গত কয়েকদিন ধরে থেমে থেমে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছিল। এর আগে গত মঙ্গল ও বুধবার উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৃথক ভূমিধ্বসে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে দুইজন স্থানীয় ও আটজন রোহিঙ্গা বলে জানা গেছে। কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৃথক পাঁচটি স্থানে পাহাড় ধ্বসে আরো ১০জনের মৃত্যু হয়েছে। শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান বুধবার সকালে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে সকালের মধ্যে ১, ৮, ৯, ১০ ও ১৪ নম্বর ক্যাম্পে পাহাড় ধসের এসব ঘটনা ঘটে।উদ্ধার কাজ চলছে। এ পর্যন্ত ১০জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে।” এর মধ্যে ১ নম্বর ক্যাম্পে একজন,৮ নম্বর ক্যাম্পে একজন, ৯ নম্বর ক্যাম্পে তিনজন, ১০ নম্বর ক্যাম্পে চারজন এবং ১৪ নম্বর ক্যাম্পে একজনের মৃত্যু হয়েছে ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এপিবিএন-৮ এর অধিনায়ক আমির জাফর বলেন, “নিহতদের মধ্যে দুইজন বাংলাদেশি নাগরিক; বাকি আটজন রোহিঙ্গা।” ১০ নম্বর ক্যাম্পে নিহতরা হলেন-ব্লক ১০ এর আবুল কালামের ছেলে আবু মেহের(২৫), লাল মিয়ার ছেলে আবুল কালাম(৫৭), মতিউর রহমানের মেয়ে সলিমা খাতুন(৪২) এবং শরিফ হোসেনের মেয়ে জয়নব বিবি(১৯)। ৯ নম্বর ক্যাম্পে নিহতরা হলেন-চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার কেরানীহাট এলাকার আলী জহুরের ছেলে মো. হোসেন আহমেদ(৫০), ওই ক্যাম্পের আই-৪ ব্লকের আলী জোহারের মেয়ে আনোয়ারা বেগম(১৮) এবং আই-৯ ব্লাকের মো. জামালের ছেলে মো. সালমান(৩)। ৮ নম্বর ক্যাম্পে নিহতরা হলেন বি-৮২ ব্লকের মো. হারেজের ছেলে মো. হারেজ(৪)। ১৪ নম্বর ক্যাম্পে উখিয়ার থাইংখালী এলাকার শাহ আলমের ছেলে আব্দুল করিম(১২) মারা গেছে। আর ১ নম্বর ক্যাম্পে নিহত হয়েছেন-এফ/৫ ব্লকের সুলতান আহমদের মেয়ে পুতনী বেগম(৩৪)। শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান বলেন, বুধবার সকাল ৬টায় ১০ নম্বর ক্যাম্পের ব্লক সি-৩ এ পাহাড় ধ্বসে চারজন মাটিচাপা পড়েন। পরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের দুটি ইউনিট চারজনের মরদেহ উদ্ধার করে। রাত ৩টায় ৯ নম্বর ক্যাম্পের আই-৪ এ পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। সেখান থেকে দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ভোর ৪টার দিকে ৮ ও ১৪ নম্বর ক্যাম্পে পাহাড় ধসে আরও দুজন মারা যান। মিজানুর রহমান আরো বলেন, নিহতদের মধ্যে দু’জন স্থানীয় বাসিন্দা। এর মধ্যে ৯ নম্বর ক্যাম্পে নিহত চট্টগ্রামের সাতকানিয়া এলাকার হোসেন আহমেদ নানা কারণে ক্যাম্পে অবস্থান করতেন। আর ১৪ নম্বর ক্যাম্পে মারা যায় আব্দুল করিমের বাড়ির আশ্রয় কেন্দ্রের পাশেই নিহত হয়।