অনেকেই দিন তারিখ ঠিকভাবে মনে রাখতে পারেন না। ক্যালেন্ডারে দাগ দিয়ে, স্মার্টফোনে টাইম সেট করেও অনেক সময় প্রিয় মানুষের জন্মদিন, বিবাহ বার্ষিকী ভুলে গিয়ে বিপদে পড়েন। অনেক কথাও শুনতে হয় এজন্য। প্রতিবছর ২ জুলাই পালিত হয় সবকিছু ভুলে যাওয়া দিবস। দিনটির উদ্ভাবক ছিলেন ইন্ডিয়ানার গে অ্যান্ডারসন নামের এক ব্যক্তি। যিনি তার পরিবারে পরিচিত ছিলেন ভুলোমনা মানুষ হিসেবেই। তিনি তার মেয়ের জন্ম তারিখ কখনোই মনে রাখতে পারতেন না। এমনকি বিবাহ বার্ষিকীর তারিখ ভুলে যাওয়ার জন্য স্ত্রীর সঙ্গে মনোমালিন্য হত। এজন্য তিনি এই দিনটির উদ্ভাবন করেন। আপনিও কি সবকিছু ভুলে যান? কখনো কখনো ভুলো যাওয়ার সমস্যা সাধারণ হতে পারে। তবে ক্রমেই ভুলে যাওয়ার সমস্যা কিন্তু বিভিন্ন রোগের কারণও হতে পারে।
ভুলে যাওয়া কঠিন রোগেরও লক্ষণ নয় তো? মানসিক চাপ, অসুস্থতা বিভিন্ন কারণে মস্তিষ্কে চাপ পড়তে পারে, ফলে দেখা দিতে পারে ভুলে যাওয়ার সমস্যা। আবার এটি হতে পারে ডিমেনশিয়ার লক্ষণ। বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞান বিষয়ক পত্রিকা ল্যানসেটে প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক গবেষণা অনুসারে, ২০১৯ সালে বিশ্বজুড়ে এই রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা যেখানে প্রায় ৫ কোটি ৭০ লাখের কাছাকাছি, সেখানে ২০৫০ সালে এই সংখ্যা বেড়ে হতে পারে ১৫ কোটি।
আরব ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতেও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে এই রোগের প্রকোপ। কারও কারও আশঙ্কা ডিমেনশিয়া আক্রান্ত রোগীর প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।
অ্যালঝাইমার্স অ্যান্ড রিলেটেড ডিসঅর্ডারস সোসাইটি অব ইন্ডিয়ার ২০২০ সালের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতবর্ষে ষাটোর্ধ্ব প্রায় ৫৩ লাখ মানুষ ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত। পরিসংখ্যানে জানা গেছে, বাংলাদেশে ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের প্রতি ১২ জনের মধ্যে অন্তত একজন ডিমেনশিয়ার রোগী আছেন।
ডিমনেশিয়া কি? সামগ্রিকভাবে স্মৃতিশক্তি লোপ, ভাবনা চিন্তার অসুবিধা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার অক্ষমতা ইত্যাদি একাধিক সমস্যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় ডিমেনশিয়া বলা হয়। সবচেয়ে বহুল ও দূরারোগ্য ডিমেনশিয়ার উদাহরণ হলো অ্যালঝাইমার্স। পুরো বিশ্বজুড়েই বাড়ছে এই রোগের প্রকোপ।
ডিমেনশিয়া কেন হয়? বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সবার ডিমেনশিয়া হয়ে থাকে এমনটা নয়। বিভিন্ন রোগের কারণে হতে পারে এ সমস্যা। এসব রোগ মস্তিষ্কের ভিন্ন ভিন্ন অংশকে প্রভাবিত করে। আমরা সবাই মাঝে মাঝে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে ভুলে যাই, যেমন- কোথায় আমাদের চাবি রেখে এসেছি। এর মানে এই নয় যে, সবার ডিমেনশিয়া আছে। এই রোগের লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে খারাপ হতে থাকে। ফলে দৈনন্দিন জীবন বাঁধাগ্রস্ত হয়ে থাকে।গবেষণার তথ্যমতে, ইউকেতে প্রতিদিন প্রায় ৬০০ জনের ডিমেনশিয়া দেখা দেয়। ইউকেতে পুরুষদের চেয়ে নারীদের মধ্যে ডিমেনশিয়ার হার বেশি।
৬৫ বছরের বেশি বয়স্কদের ক্ষেত্রে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বেশি, তবে এটি তরুণদেরও প্রভাবিত করতে পারে। অন্যদের তুলনায় ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল কিংবা বিষণ্নতায় ভোগে এমন মানুষের ডিমেনশিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। এ ছাড়াও যাদের স্ট্রোক হয়েছে তোদের ক্ষেত্রে বয়সকালে এমন হতে পারে।
ডিমেনশিয়ার লক্ষণ কী কী? >> সাম্প্রতিক ঘটনা, নাম ও চেহারা ভুলে যাওয়া।
>> প্রায়শই একই কথা বারবার বলা
>> জিনিসপত্র ভুল স্থানে রাখা।
>> মনযোগ ধরে রাখা বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ কঠিন হয়ে উঠা।
>> দিনের তারিখ বা সময় সম্পর্কে নিশ্চিত না হওয়া।
>> হারিয়ে যাওয়ার প্রবণতা, বিশেষ করে নতুন নতুন স্থানে।
>> সঠিক শব্দ ব্যবহার বা অন্যদের কথা বুঝতে অসুবিধা হওয়া।
>> অনুভূতিতে পরিবর্তন, যেমন সহজে বিমর্ষ ও মর্মাহত হয়ে পড়া বা কোনো কিছুর প্রতি আগ্রহ হারানো ইত্যাদি।
ডিমেনশিয়া খারাপের দিকে যেতে থাকলে রোগীর জন্য স্পষ্ট করে কথাও বলতে পারেন না। এমনকি প্রয়োজন বা অনুভূতি সম্পর্কে জানানোও কষ্টকর হয়ে পড়ে। অন্যের সাহায্য ছাড়া চলাচল করাও কঠিন হয়ে পড়ে।
৬০-৬৫ বছরের বয়সীদের মধ্যে ডিমেনশিয়া বেশি দেখা গেলেও সম্প্রতি ৫০ এর কোঠায় থাকা ব্যক্তিদের মধ্যেও বাড়ছে এ রোগের প্রবণতা। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য সুস্থ জীবনযাপন ও সঠিক খাদ্যাভ্যাসই হতে পারে এই রোগের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। তাই নিজের বা প্রিয়জনের মধ্যে এই রোগের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত পরামর্শ নিন বিশেষজ্ঞদের। সূত্র: আলঝাইমার্স রিসার্চ ইউকে/মায়োক্লিনিক