কোটা সংস্কার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধকে স্মরণ করলো ফ্রিল্যান্সারদের অনলাইন মার্কেটপ্লেস ফাইভার। বুধবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টার দিকে ফাইভারের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে মুগ্ধর মৃত্যুতে আবেগঘন পোস্ট দেওয়া হয়। ফাইভার লিখেছে, দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে জানাচ্ছি যে, ফাইভার পরিবারের একজন সদস্যের অকাল মৃত্যুর খবর জানতে পেরেছি আমরা। ফ্রিল্যান্সার মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ গত সপ্তাহে মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি বাবা-মা ও দুই ভাই রেখে গেছেন। মুগ্ধর ফ্রিল্যান্সিং দক্ষতার প্রশংসা করে পোস্টে বলা হয়েছে, মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ ছিলেন একজন ট্যালেন্টেড মার্কেটার (মেধাবী বিপণনকারী)। তিনি এসইও এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন কাজে দক্ষতার মাধ্যমে ফাইভার প্ল্যাটফর্মে ব্যবসা গড়ে তুলেছিলেন।
তার চেয়েও বড় বিষয় হলো তিনি একজন ভ্রমণপ্রেমী, মেধাবী ফুটবলার এবং বাংলাদেশ স্কাউটসের সদস্য হিসেবে প্রকৃত মানবতাবাদী মানুষ ছিলেন। আমরা মীর মুগ্ধের শূন্যতা অনুভব করবো। তার পরিবার এবং বন্ধুদের প্রতি আমাদের সমবেদনা ও প্রার্থনা রইলো- যোগ করে ফাইভার। গত ১৮ জুলাই রাজধানীর উত্তরা এলাকায় কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের ডাকা কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন মীর মুগ্ধ। তার বাসাও ওই এলাকায়। গুলিবিদ্ধ হওয়ার কিছুক্ষণ আগেও একটি ভিডিও ক্লিপে মুগ্ধকে ছাত্রদের মধ্যে পানি বিতরণ করতে দেখা যায়। দৌড়ে দৌড়ে বলছিলেন, ‘কারও পানি লাগবে ভাই? পানি লাগলে নেন।’
মীর মুগ্ধ একজন দক্ষ ফ্রিল্যান্সার ছিলেন। তিনি অনলাইন মার্কেটপ্লেস ফাইভারে সক্রিয় ছিলেন। ফাইভারে তার অ্যাকাউন্টে কাজে খুশি হয়ে এক হাজার ৮৮ জন ক্লায়েন্ট রিভিউ দিয়েছেন। তার ওভার অল রেটিং ৫। সেলার কমিউনিকেশন লেভেল রেটিংও ৫। রিকমেন্ড টু অ্যা ফ্রেন্ড এবং সার্ভিস অ্যাজ ডেসক্রাইব রেটিংও দেখা যাচ্ছে ৫।
তার ফাইভার অ্যাকাউন্টের একটি স্ক্রিনশট সামাজিক যোাগযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা যায়, জার্মানির একজন ক্লায়েন্টের মন্তব্য সবার ওপরে। মুগ্ধর কাজে খুশি হয়ে সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘তার কাজে খুবই সন্তুষ্ট। তিনি খুব দ্রুততম সময়ে কাজ করেন এবং যে কোনো সমস্যায় সাহায্য করেন। সত্যিই তার কাছ থেকে কাজ করিয়ে নেওয়ার জন্য সুপারিশ করছি। ধন্যবাদ।’
মুগ্ধ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) থেকে গণিত বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করে গত মার্চে ঢাকায় আসেন। এরপর বিইউপিতে এমবিএতে ভর্তি হন। স্বপ্ন ছিল উচ্চশিক্ষা নিতে একদিন দেশের বাইরে যাবেন। সেই প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষে গত ১৮ জুলাই উত্তরায় গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান মেধাবী এ শিক্ষার্থী।