বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন গুগল। যে কোনো কিছু জানতেই সেখানে সার্চ করছেন। তবে গুগলের এই একচেটিয়া সার্চকে অবৈধ বলছেন একজন মার্কিন বিচারক। অনলাইন সার্চে একচেটিয়া আধিপত্য বজায় ও গুগলের বিজ্ঞাপন সংগ্রহের কৌশলকে অবৈধ বলে রায় দিয়েছেন ওই বিচারক। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে জানা যায়, গত সোমবার (৫ আগস্ট) ওয়াশিংটন ডিসির আদালতে অনুষ্ঠিত রায়ে মার্কিন জেলা বিচারক অমিত মেহতা এই রায় দেন।
২০২০ সালে অনলাইন সার্চ মার্কেটের ৯০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে গুগল, এই অভিযোগে মার্কিন বিচারবিভাগ গুগলের বিরুদ্ধে মামলাটি করে। তবে শুধু গুগল নয়, যুক্তরাষ্ট্রের অ্যান্টিট্রাস্ট কর্তৃপক্ষ (ফেডারেল ট্রেড কমিশন) প্রতিযোগিতা আরও বাড়াতে প্রযুক্তি খাতের বড় বড় কোম্পানির বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা করেছে।
এটিকে গুগল এবং এর মালিকদের জন্য অস্তিত্বের হুমকি বলে বর্ণনা করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে গুগল এবং অ্যালফাবেট কী শাস্তির মুখোমুখি হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। জরিমানা বা অন্যান্য প্রতিকার পরের শুনানিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে ধারণা করা হয়, এই রায়ের পর প্রযুক্তি খাতের বৃহৎ এই কোম্পানিটিকে তাদের ব্যবসা নীতিতে পরিবর্তন আনতে হতে পারে।
মার্কিন জেলা বিচারক অমিত মেহতা বলেছেন, স্মার্টফোন ও ব্রাউজারে ‘ডিফল্ট সার্চ ইঞ্জিন’ হওয়া নিশ্চিত করতে গুগল লাখো কোটি ডলার খরচ করে। অমিত মেহতা তার ২৭৭ পাতার উপদেশে আরও বলেন, ‘গুগল একচেটিয়া এবং একচেটিয়াবাদের রক্ষক হিসেবে কাজ করেছে।’
তবে এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে অ্যালফাবেট। অ্যালফাবেটের আয়ের সবচেয়ে বড় উৎসগুলোর একটি গুগল সার্চ ইঞ্জিন। গুগলের সার্চ ইঞ্জিন হলো কোম্পানির জন্য একটি বড় রাজস্ব জেনারেটর, যা তার ফলাফলের পৃষ্ঠাগুলোতে প্রদর্শিত বিজ্ঞাপনের জন্য বিলিয়ন ডলার আয় করে।
অ্যালফাবেটের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই আদেশ এই স্বীকৃতি দিয়েছে যে গুগল গ্রাহকদের জন্য সেরা সার্চ ইঞ্জিন। তবে শেষ পর্যন্ত রায়ে এটা বলা হয়েছে, আমাদের এটির সহজলভ্য করার অনুমতি দেওয়া উচিত নয়।’
গুগলের আইনজীবীরা বলেন, গুগলের সার্চ ইঞ্জিনকে কার্যকর মনে করে বলেই গ্রাহকরা এটির প্রতি আকৃষ্ট হয়। গুগল গ্রাহকদের জন্য তাদের সার্চ ইঞ্জিন আরও ভালো করতে প্রতিনিয়ত বিনিয়োগ করে যাচ্ছে বলেও জানান তারা। গুগলের আইনজীবী জন শ্মিটলিন এ বছরের শুরুতে এক শুনানিতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘গুগল জিতছে; কারণ, এটি সেরা।’
মিস্টার শ্মিডটলিন বিচারের সময় আরও যুক্তি দিয়েছিলেন যে, গুগল এখনো তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হয়, কেবল মাইক্রোসফটের বিং-এর মতো সাধারণ সার্চ ইঞ্জিন সংস্থাগুলো থেকে নয়, বরং আরও বিশেষায়িত সাইট এবং অ্যাপস যা লোকেরা রেস্টুরেন্ট, এয়ারলাইন ফ্লাইট এবং আরও অনেক কিছু খুঁজে পেতে ব্যবহার করে। এর অর্থ গুগল একচেটিয়া অনলাইন সার্চ ইঞ্জিন নয়, বরং তার অসংখ্য প্রতিযোগি আছে বাজারে।
তবে এবারই প্রথম নয়, এর আগে বহুবার গুগল আইনি ঝামেলার মধ্যে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে এর আগে গুগলের বিজ্ঞাপন প্রযুক্তি নিয়েও মামলা হয়েছিল। যে মামলার বিচার কাজ আগামী সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া ইউরোপেও একক আধিপত্য সংক্রান্ত মামলায় গুগলকে কোটি কোটি ডলার জরিমানার মুখে পড়তে হয়েছিল। সূত্র: বিবিসি