নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর। বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নেন ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি। ওই সময়ের পর থেকে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত দলটি ক্ষমতায় ছিল টানা ১৫ বছর ৭ মাস। এ সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে তিনটি। সবগুলোই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।
এ দীর্ঘ সময়ে ক্ষমতাসীন থাকা দলটির বিরুদ্ধে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন, বিরোধী মত দমন, সংবিধানকে সংশোধন, ব্যাংকিং ও অর্থনৈতিক খাতে সুশাসনের অভাব, তিনবারের বিতর্কিত নির্বাচন, ব্যাপক মাত্রায় বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-, গুম, মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার ঘটনা ঘটেছে। রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক, প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্রসহ বিভিন্ন বিষয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পদক্ষেপগুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলার পথও রুদ্ধ করা হয়েছিল নিবর্তনমূলক আইনের মাধ্যমে। আওয়ামী লীগকে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখে এসবের সুযোগ তৈরিতে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন সরকারের উচ্চপদস্থ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে বিধি অনুযায়ী নিরপেক্ষ ভূমিকায় থাকার কথা থাকলেও অভিযোগ রয়েছে, উচ্চপর্যায়ের প্রশাসনে দলীয় কর্মীর মতোই ভূমিকা রেখেছেন তারা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৫ বছরের আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ব্যবস্থা স্বৈরতান্ত্রিক বা কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার। ব্যাপক আকার পেয়েছে দুর্নীতি, বাড়তে বাড়তে গোটা ব্যবস্থাকেই গ্রাস করেছে। আইন ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো হয়ে পড়েছে দুর্নীতির সুরক্ষাদাতা। এক পর্যায়ে সরকারসংশ্লিষ্টরাও বুঝে যান, কোনো কারণে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হলে তার মূল্য তাদের জন্য মারাত্মক হবে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘গত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে পুরো ব্যবস্থাকেই দুর্নীতিগ্রস্ত করে ফেলা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের দলীয়করণের মাধ্যমে মানুষের ভোটাধিকার খর্ব করা হলো। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সরকারের প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা হলো। যেটা জনস্বার্থে কাজ করবে সেটাকে সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে রূপান্তর করা হলো। বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে আইনের শাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যত প্রতিষ্ঠান আছে, সবগুলোয় একই চিত্র। সবগুলো ক্ষেত্রে দলীয়করণের মাধ্যমে পেশাগত দেউলিয়াপনাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন, দুদক, পিএসসি, মানবাধিকার কমিশন—যত কমিশন আছে; সবগুলোকে এক ধরনের দুর্নীতিসহায়ক জায়গায় ঠেলে দেয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ভূমিকা পালন করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা পেশাগত দেউলিয়াপনাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ভূমিকা পালন করেছেন। এখানে এ প্রতিবেদনে যে তালিকা দেয়া হচ্ছে তা সম্পূর্ণ না, আংশিক মাত্র। তাদের কারণে পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে ক্ষমতার যে স্তম্ভ, এসব স্তম্ভে জনগণের কোনো অস্তিত্ব থাকেনি। রয়েছে শুধু আমলাতন্ত্র ও কলুষিত এবং দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি। ব্যবসা, আমলাতন্ত্র ও দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি—এ তিন চক্রের মাধ্যমে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে থাকা যাবে, এটাই নিশ্চিত করে ধরে নেয়া হয়েছিল।’
সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর, অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে নানা সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত এসব কর্মকর্তা এক পদেই ছিলেন দীর্ঘদিন। বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতিটি বিভাগকেই তৎকালীন সরকারের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার হাতিয়ারে পরিণত করেছিলেন তারা। এ তালিকায় রয়েছেন সাবেক বিচারপতি থেকে শুরু করে রয়েছেন সাবেক সেনাপ্রধান, সচিব, গভর্নর, ব্যবসায়ী, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ, আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধানদের নামও।
আওয়ামী লীগের শাসনে দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে দলীয়করণ এবং রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা রেখেছিলেন হোসেন তৌফিক ইমাম (এইচটি ইমাম)। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মন্ত্রিপরিষদ সচিব এইচটি ইমাম ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনপ্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা ও ২০১৪ সালে রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পান। তার তত্ত্বাবধানে কোনো রাখঢাক ছাড়াই প্রশাসনের ব্যাপক দলীয়করণ ঘটে। ২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে ছাত্রলীগের এক অনুষ্ঠানে তিনি ছাত্রলীগের কর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘তোমরা লিখিত পরীক্ষায় পাস করে আসো, তারপর আমরা দেখব।’
নির্বাচনে জয়লাভ করতে প্রশাসনকে ব্যবহারের বিষয়টি নিয়ে নিজেই কথা বলেছেন খোলাখুলি। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর ছাত্রলীগের এক সভায় তিনি নির্বাচন সম্পর্কে বলেন, ‘নির্বাচনের সময় বাংলাদেশ পুলিশ ও প্রশাসনের যে ভূমিকা, নির্বাচনের সময় আমি তো প্রত্যেকটি উপজেলায় কথা বলেছি, সব জায়গায় আমাদের যারা রিক্রুটেড, তাদের সঙ্গে কথা বলে, তাদের দিয়ে মোবাইল কোর্ট করিয়ে আমরা নির্বাচন করেছি। তারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, বুক পেতে দিয়েছে।’ বিষয়টি সমালোচনা তৈরি করলে পরে তিনি বক্তব্য বিকৃতির অভিযোগ আনেন।
এভাবে দলীয়কৃত প্রশাসনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের মাধ্যমে। যদিও দেশের নির্বাচনীয় ব্যবস্থায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে সাংবিধানিক রূপ দেয়ার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ নিজেই রেখেছিল প্রধানতম ভূমিকা। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় পেয়ে সরকার গঠন করে দলটি। এরপর সংসদে ২০১১ সালে সংবিধানে প দশ সংশোধনী বিলের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করা হয়। এর সুযোগ করে দিয়েছিল তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের একটি রায়। হাইকোর্টে বৈধ ঘোষণা হওয়া সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীকে ২০১১ সালের মে মাসে ‘অবৈধ ও অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বে । এরই ভিত্তিতে সংবিধানের প ম সংশোধনী বিলের ভিত্তিতে জাতীয় সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের সুযোগ রুদ্ধ করে দেয়া হয়। ফিরে আসে দলীয় সরকারের অধীনে ভোটগ্রহণের প্রথা। এবিএম খায়রুল হক ১৯তম প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন ২০১০ সালে। ৭ মাস ১৮ দিনের দায়িত্ব পালনকালে যেসব রায় দিয়েছিলেন, তার মধ্যে এ রায়টিই পরের ১৪ বছরের শাসনব্যবস্থার গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করে দিয়েছিল বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে (সাবেক) কেন্দ্র করে রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে একটা সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছিল। সিন্ডিকেটটা আইনি, পুলিশি কিংবা রাজনৈতিক প্রক্রিয়া, যা-ই হোক না কেন, সব প্রক্রিয়ায় যেকোনোভাবেই তাকে ক্ষমতায় রেখে যেন সুবিধা নিতে পারে, সেই বন্দোবস্তটা করে ফেলেছিল। সর্বোচ্চ আদালত রায় দেয়ার সময় জাতির ব্যাপারটাও চিন্তা করে। রায়ে একটা দিকনির্দেশনাও থাকে। এ দিকনির্দেশনায় এক ধরনের প্রজ্ঞা থাকে। এবিএম খায়রুল হকের কথা বিশেষভাবে বলতে হয় এ কারণে যে তার রায়ের ক্ষেত্রে এ প্রজ্ঞাটা আমরা দেখিনি। একটা জাতি যেখানে এগোচ্ছে, সেখানে কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট বাতিল করার যে এখনো সময় হয়নি, সে বিষয়টা ওনার রায়ের মধ্যে আমরা দেখিনি। আইনের মধ্যে কিছু প্রজ্ঞাও থাকে, সে বিষয়টা আমরা পাইনি।’
আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসেবে দেখা হতো মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিককে। আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সংস্থায় ঊর্ধ্বতন পদে কাজ করেছেন তিনি। ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এ সময় তিনি সামরিক বাহিনীতে রাজনীতির অনুপ্রবেশ ঘটান ও ব্যাপক দলীয়করণ করেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে অনেক মেধাবী অফিসারের ক্যারিয়ারে প্রতিবন্ধকতা তৈরির অভিযোগ রয়েছে। অনেক গুমের নির্দেশদাতা হিসেবে বিভিন্ন সময় তার নাম আলোচিত হয়েছে। ২০১৯ সালে আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে তারিক আহমেদ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ আনা হয়। এছাড়া আলোচিত গোপন কারাগার ‘আয়নাঘর’ তৈরিতেও তারিক আহমেদ সিদ্দিক মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন বলে দাবি একাধিক সাবেক সেনা কর্মকর্তার। আয়নাঘরের নির্যাতনের ভুক্তভোগীদের অন্যতম লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান (বীর প্রতীক)। গত ৬ আগস্ট তিনি নিজের একাধিকবার গুম হওয়ার ঘটনা তুলে ধরেন। আর এর মূল হোতা হিসেবে দায়ী করেন মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিককে।
বলা হয়, আওয়ামী লীগের ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তোলার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদও। ২০১৮ সালের ২৫ জুন থেকে ২০২১ সালের ২৩ জুন পর্যন্ত সময়ে তিনি সেনাপ্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় নিয়ে আসতে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করেন তিনি। এছাড়া পুলিশের খাতায় অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে তালিকাভুক্ত নিজের ভাইকে অপরাধমূলক কর্মকা-ের জন্য শাস্তি এড়িয়ে রেহাই পেতেও সহায়তা করার অভিযোগ রয়েছে তারা বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ রয়েছে, নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন। অন্যায্যভাবে সামরিক খাতে কন্ট্রাক্ট পাওয়া নিশ্চিত করার জন্য তিনি ও তার ভাইরা একযোগে কাজ করেছেন। সরকারি নিয়োগের বিনিময়ে ঘুসও নিয়েছেন।
প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারকে ক্ষমতায় ফেরার পথ প্রশস্ত করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে গত তিন নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে কাজী রকিব উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালন করে ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এ কমিশনের অধীনেই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় বিরোধী দলবিহীন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দেশে-বিদেশে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল সে নির্বাচন।
বিশ্লেষকদের মতে, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল, এ কমিশন তার পাঁচ বছরের মেয়াদে তা ধ্বংস করে দিয়েছে। এর অধীনে জাতীয় সংসদ, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা, সিটি করপোরেশন ও জেলা পরিষদ নির্বাচন হয়েছে। কমিশন সচিবালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এত বেশি নির্বাচন করার সুযোগ অতীতের কোনো কমিশন পায়নি।
২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন। এ সময়ও জাতীয় সংসদ থেকে স্থানীয় সরকার পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনই ছিল বিতর্কিত। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেয়া নিয়ে বিরোধী দলগুলোর মধ্যে সন্দেহ-সংশয় ছিল। এ কমিশনের অধীনে ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৯ আসন পেয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে একতরফা সুবিধা প্রদান, ভোট কারচুপি, নির্বাচন কমিশনাররা সরকারদলীয় কর্মীর মতো বক্তব্য রাখাসহ বিতর্কিত নানা ঘটনার নজির দেখা যায়। ভোটের আগের দিন-রাতে ব্যালট বক্সে সিল মারা ব্যালট আগে থেকে রাখার অভিযোগ ওঠে সরকারি দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে।
‘ভোটিং ইন আ হাইব্রিড রেজিম: এক্সপ্লেনিং দ্য ২০১৮’ বাংলাদেশী ইলেকশন বইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো, বেসামরিক প্রশাসন এবং ক্ষমতাসীন দল এ নির্বাচনে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছে এবং তারা একে অপরের সহযোগী ছিল। বিরোধী দলের কর্মী ও প্রার্থীদের গ্রেফতার, পুলিশের উপস্থিতিতে বিরোধীদের ওপর সরকারি দলের কর্মীদের হামলা এবং প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষেত্রে দ্বৈত নীতি—এ রকম কৌশলগুলো ব্যবহৃত হয়েছে।’
২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশনের নেতৃত্বে চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। একতরফাভাবে বিএনপিসহ বড় রাজনৈতিক দলগুলো ছাড়াই এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমে মোট ২৮ শতাংশ ভোট পড়ার কথা জানানো হলেও পরে কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই সেটি ৪১ শতাংশ ঘোষণা করা হয়।
দেশের জ্বালানি খাতের বর্তমান দুরবস্থার প্রধান দুই কারিকর ধরা হয় সাবেক দুই আমলা মো. আবুল কালাম আজাদ ও আহমদ কায়কাউসকে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব হিসেবে ২০১৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ পান মো. আবুল কালাম আজাদ। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের বিদ্যুৎ খাতের অব্যবস্থাপনা ও আর্থিক চাপ তৈরির জন্য বিদ্যুৎ সচিব হিসেবে তার ভূমিকাকে অনেকাংশেই দায়ী করা হয়। তার হাত ধরেই দেশের বিদ্যুৎ খাত হয়ে উঠেছে বেসরকারি উদ্যোক্তানির্ভর (আইপিপি)।
জ্বালানি খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাণিজ্যিক ঋণে নির্মিত এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তিতে রাষ্ট্রীয় স্বার্থের পরিবর্তে উদ্যোক্তাদের মুনাফাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে বেশি। এক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, এসব আইপিপির সঙ্গে যোগসাজশমূলক চুক্তির কারণে প্রতি বছর সরকারকে ভর্তুকি হিসেবে ব্যয় করতে হচ্ছে প্রায় ১০০ কোটি ডলার। জ্বালানি সরবরাহ ও চুক্তি নবায়নেও ব্যয়বহুল এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র অগ্রাধিকার পেয়েছে বেশি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুর-৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জয় পান তিনি।
অনুগত আমলা হিসেবে পরিচিত ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসও। তিনি ২০১৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই তিনি প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। প্রশাসনে আধিপত্য বিস্তারের পাশাপাশি তৎকালীন সরকারপ্রধানের আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের তালিকায় প্রথম সারির দিকে নাম লেখান তিনি। আধিপত্যের মাধ্যমে প্রশাসনে ক্ষমতা বিস্তার করতেন এ সচিব। ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ পদে থেকে অব্যাহতি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক পদে নিয়োগ পান তিনি।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগকে টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে প্রতিবেশী একটি দেশের সহায়তা বড় ভূমিকা রেখেছে। আবার নানা চুক্তি ও এজেন্ডায় বিশেষ সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে দেশটির ক্ষেত্রে একপ্রকার নতজানু পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণেরও অভিযোগ রয়েছে। এর শুরু ২০১০ সাল-পরবর্তী সময়ে। সে সময় পররাষ্ট্র সচিবের ভূমিকায় ছিলেন মোহাম্মদ মিজারুল কায়েস। কিন্তু প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে নতজানু পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নে বড় ভূমিকা রাখেন ২০১৩ সালে পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে যোগদান করা মো. শহীদুল হক। তার মেয়াদেই দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বড় সফরগুলো হয়। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এখনো ওই দেশমুখী এজেন্ডা নিয়েই কূটনৈতিক মহলে আলোচনায় নিয়োজিত থাকেন তিনি। ২০১৯ সাল পর্যন্ত পররাষ্ট্র সচিবের ভূমিকায় ছিলেন শহীদুল হক।
শহীদুল হকের পর মাসুদ বিন মোমেন পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে যোগদান করেন ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন পেশাদার হিসেবে খ্যাত এ কূটনীতিক অত্যন্ত আনুগত্যের সঙ্গে সরকারের পররাষ্ট্র এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছেন। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ সরকারের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের ব্যাপক প্রয়াস চালিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে সরকারের নির্বাচন পরিকল্পনায় প্রতিবেশী দেশটির আনুকূল্য প্রতিষ্ঠায়ও বড় ভূমিকা ছিল তার। আর কোটা সংস্কার আন্দোলন পরিস্থিতিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সরকারের খেয়াল-খুশিমতো উপস্থাপনের দায়িত্বটিও তিনিই পালন করেছেন।
২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর সরকারের মুখ্য সচিব হিসেবে নিয়োগ পান তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মাঠ প্রশাসনে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন এ মুখ্য সচিব। প্রয়াত এইচ টি ইমামের পরই তিনিই মাঠ প্রশাসনের অন্যতম নিয়ন্ত্রক হিসেবে আবির্ভূত হন। আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় নিয়ে আসতে সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখতে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেন তিনি। দ্বাদশ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গত ২৬ জুন তার চুক্তির মেয়াদ আরো এক বছর বাড়ায় সরকার। সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের ওপর দমন-পীড়ন ও হত্যাকা-ে শেখ হাসিনার অন্যতম সহযোগী হিসেবে তিনি নীতিনির্ধারণী ভূমিকা পালন করেন।
সরকারের বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা হিসেবে ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি নিয়োগ পান বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি এবং বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান। নিয়োগের পর তার প্রথম পদক্ষেপ ছিল ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়ন। তার মেয়াদের পুরোটাজুড়েই ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে সরকারের পক্ষে রাখতে সচেষ্ট ছিলেন তিনি। সরকারের আনুকূল্য ছাড়া কোনো পক্ষকেই ব্যবসা সংগঠনগুলোয় যুক্ত হতে না দেয়ার নেপথ্যে ভূমিকা ছিল তার। কভিডের সময় বিদেশ থেকে টিকার জোগান নিশ্চিতে নিজস্ব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো দৃশ্যমান হওয়া সত্ত্বেও। তার মেয়াদের পুরো সময়টায় নিজস্ব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের প্রসারের ক্ষেত্রেও বিশেষ মনোযোগ ছিল তার। বিশেষজ্ঞরা তাকে দেখেন ক্ষমতার আনুকূল্য গ্রহণকারী ও স্বজনতোষী পুঁজিবাদের বড় উদাহরণ হিসেবে।
আর্থিক খাতে বর্তমান বিশৃঙ্খলার জন্য যাদের সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হয়, তাদের অন্যতম পলাতক সাবেক গভর্নর ও অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার। শেখ হাসিনা সরকারের টানা তিন মেয়াদেই অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। ২০১৭ সালে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর থেকে অর্থ সচিব হয়ে চলতি বছরের ৯ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, অর্থ ব্যবস্থার মৌলিক নীতি প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ছিল পুরোপুরি রাজনৈতিক। এ কারণেই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটলে আব্দুর রউফ তালুকদার পালিয়ে যান। বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাসে তিনিই একমাত্র গভর্নর, যিনি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নিরুদ্দেশ হয়েছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে বড় আয়োজন ছিল বিশেষ একটি গোয়েন্দা সংস্থার। সংস্থাটির মহাপরিচালক হিসেবে ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত লে. জেনারেল (অব.) শেখ মামুন খালেদ। তার সময় থেকেই দেশে গুমের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। অভিযোগ রয়েছে, তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের গুম করে আওয়ামী লীগের ২০১৪-এর নির্বাচন জয়ে ভূমিকা রেখেছিলেন। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তথ্য অনুযায়ী এ সময়ে অন্তত শতাধিক ব্যক্তিকে গুম করা হয়েছিল।
২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সময়কালে বিশেষ ওই সংস্থার মহাপরিচালক ছিলেন মেজর জেনারেল (অব.) আকবর হোসেন। তার বিরুদ্ধেও বিরোধী নেতাকর্মীদের গুমের অভিযোগ রয়েছে। ২০১৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে একতরফাভাবে জয়লাভ ও বাংলাদেশে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের তথ্য অনুযায়ী তার মেয়াদকালে অন্তত আড়াই শতাধিক ব্যক্তি গুম হয়েছেন।
২০১৭ থেকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ওই গোয়েন্দা সংস্থার মহাপরিচালক ছিলেন মেজর জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আবেদীন। তিনি দায়িত্বে থাকা অবস্থায়ই ২০১৮ সালের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং ওই বছরই সবচেয়ে বেশি গুমের ঘটনা ঘটে। ওই বছর ৯৮ জনকে গুম করা হয়, যা ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল—দেড় দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। এছাড়া তার মেয়াদকালে দেড় শতাধিক ব্যক্তি গুম হন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অধীন প্রতিষ্ঠান জাতীয় টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (এনটিএমসি) যাত্রা শুরু করে ২০১৩ সালের ৩১ জানুয়ারি। ২০১৭ সালের ৬ মার্চ থেকে মেজর জেনারেল (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) জিয়াউল আহসান এনটিএমসির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ে তিনি সরকারের হয়ে নাগরিকদের ফোনকল ও ইন্টারনেটে বিভিন্ন যোগাযোগ অ্যাপে আড়িপাতা এবং ইন্টারনেট ব্যবস্থা ও ইন্টারনেট অপারেটর নিয়ন্ত্রণের কাজ করেন। এ সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে হেনস্তা, গ্রেফতার, গুম-খুনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হতো বিরোধীদলীয় মতকে।
২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত পুলিশের আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এ কে এম শহীদুল হক। এ আইজিপির সময়কালে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের ঘটনা অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় ছিল সর্বোচ্চ। বিরোধী দলের ওপরেও নিপীড়ন, ধরপাকড় ছিল নিত্যদিনের ঘটনা।
বাংলাদেশ পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ তিন পদে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করেছেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। এ সাবেক আইজিপিকে স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘সবচেয়ে প্রভাবশালী আইজিপি’ হিসেবে বিবেচনা করেন অনেকেই। পুরো বাহিনীকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করেন তিনি। গত এক দশকে বিরোধী দল দমনে অতিউৎসাহী পদক্ষেপ বারবার সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। এ সাবেক আইজিপির বিরুদ্ধে বহু বিরোধী রাজনৈতিককে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। র্যাবের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালনকালে ক্রসফায়ারে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী হত্যার ঘটনা বেশি ঘটে। পুলিশের শীর্ষ পদে থাকা অবস্থায় মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় পড়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন তিনি।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘এদের অনেকেই ছিলেন প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। দলীয় আনুগত্য রেখে বা দলীয় স্বার্থে কাজ করা শুধু তাদের আচরণবিধিই নয়; তাদের চাকরি ও দায়িত্বের সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে সাংঘর্ষিক। তারা স্বপ্রণোদিত হয়েই সরকারের দমন-পীড়নের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছেন। শুধু তা-ই নয়, তারা অন্যদেরও কাজ করতে বাধ্য করেছেন—যেমন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তারা নৈতিকতা বিবর্জিত হয়ে ব্যক্তিস্বার্থে এসব করেছে। সরকারের অন্যায় আদেশ তারা মানতে বাধ্য না। তারা জনগণের স্বার্থে কাজ করতে পারতেন চাইলে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই স্বপ্রণোদিত হয়ে নিজেরা সুযোগ-সুবিধা নেয়ার জন্য কাজ করে গেছেন। তাদের অধস্তনরা যদি আনুগত্য অনুযায়ী কাজ না করত, তাহলে তাদের টিকে থাকা সম্ভব ছিল না।’-উৎস: দৈসিক বণিকবার্তা