শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৮ পূর্বাহ্ন

কোটা আন্দোলনে ৮১৯ জন নিহত, আহত ২৫ হাজার

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট, ২০২৪

হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির প্রতিবেদন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে কমপক্ষে ৮১৯ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)। এর মধ্যে ৬৩০ জনের নাম জানা গেলেও ১৮৯ জনের নাম জানতে পারেনি তারা। সংগঠনটি বলছে, নিহতদের মধ্যে ৬৯ শতাংশই ৩০ বছরের কম। সংস্থাটির মানবাধিকার পর্যবেক্ষণবিষয়ক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গত মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটি জানায়, নিহতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারা গেছে ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী তরুণ ও যুবক। তাদের সংখ্যা ২৪০ জন। আর শিশু নিহত হয়েছে ৮৩ জন। এছাড়া সারা দেশে আহত হয়েছেন প্রায় ২৫ হাজার মানুষ। এ সময় স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনসহ বিচার প্রক্রিয়া সংস্কার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার আহ্বান জানায় এইচআরএসএস।
সংস্থাটি জানায়, বিভিন্ন গণমাধ্যম, হাসপাতাল, প্রত্যক্ষ্যদর্শী ও ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে তারা প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। গত জুলাই মাসের শুরুতে ঢাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলেও ১৬ তারিখ থেকে তা ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। ওই দিন সহিংসতায় নিহত হন ছয়জন। দিন যত বাড়তে থাকে, তত বাড়তে থাকে সহিংসতা, বাড়তে থাকে নিহতের সংখ্যা।
প্রতিবেদনে এইচআরএসএস বলেছে, ১৬ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত ৩১১ জন এবং ৪ আগস্ট থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত ৫০৮ জন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে সরকার পতনের দিন। ওই দিন নিহত হয়েছেন ২০৫ জন। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, নিহতদের মধ্যে ৩০ বছরের কম বয়সী রয়েছেন ৬৯ শতাংশ।
ঢাকা বিভাগে ৫০০ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৮৫ জন, খুলনা বিভাগে ৭৬ জন, রাজশাহী বিভাগে ৬১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩৯ জন, রংপুর বিভাগে ২৫ জন, সিলেট বিভাগে ২০ জন এবং বরিশাল বিভাগে ১৩ জন মারা গেছেন।
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৬৪৬ জনের মৃত্যুর ধরণ বিশ্লেষণ করতে পেরেছে এইচআরএসএস। তাতে দেখা গেছে, ৪৫৫ জন গুলিতে, ৭৯ জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে, ৭৮ জন পিটুনিতে ও ১০ জন ধারালো অস্ত্রের আঘাতে এবং অন্যান্য কারণে ২৪ জন মারা গেছেন।
৪৩৫ নিহত ব্যক্তির তথ্য বিশ্লেষণ করে এইচআরএসএস বলেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ৩৭৫ জন, আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের হাতে ৩৫ জন এবং গণপিটুনিতে ২৫ জন মারা গেছেন।
নিহত ব্যক্তিদের বয়সও বিশ্লেষণ করেছে সংস্থাটি। নিহত ৪৭০ ব্যক্তির বয়স বিশ্লেষণ করে এইচআরএসএস বলেছে, এর মধ্যে শিশু (১৮ বছরের কমবয়সী) ৮৩ জন (১৮ শতাংশ), তরুণ ও যুবক ২৪০ জন (৫১ শতাংশ), মধ্যবয়সী ১২৬ জন (২৭ শতাংশ) এবং বয়স্ক ব্যক্তি ২১ জন (৪.৫ শতাংশ)।
আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের পেশাও খোঁজা হয়েছে প্রতিবেদনে। ২৯৩ জনের পেশা বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, এর মধ্যে ১৪৪ জন শিক্ষার্থী, ৫৭ জন শ্রমজীবী, ৫১ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ৫ জন সাংবাদিক এবং ৩৫ জন অন্যান্য পেশার মানুষ।
হতাহত, ক্ষয়ক্ষতি:এইচআরএসএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১৬ থেকে ২২ জুলাই শুধু ঢাকা শহরের ৩১টি হাসপাতালে কমপক্ষে ৬ হাজার ৭০৩ ব্যক্তি আন্দোলনে আহত হয়ে চিকিৎসা নেন। হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ তাদের হাত, পা অথবা চোখ হারিয়েছেন। ছয় শতাধিক মানুষ তাদের এক চোখ বা দুই চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। আন্দোলনে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অন্তত ২৭০ জন সাংবাদিক আহত, হুমকি, গ্রেফতার ও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন।
আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ১৭ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে কমপক্ষে ৯৫০টি মামলায় ৬ লাখের বেশি মানুষকে আসামি করা হয়। এসব মামলায় অন্ততপক্ষে ১২ হাজার মানুষ গ্রেফতার হন। শুধু রাজধানীতেই তিন হাজারের বেশি মানুষ গ্রেফতার হন এবং সাড়ে চার লাখের বেশি মানুষকে আসামি করা হয়, প্রায় ৯০ শতাংশই অজ্ঞাতনামা আসামি।
হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির গবেষণা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশের পাশাপাশি জাতিসঙ্ঘের সাথে সমন্বয় করে এসব হত্যাকা-ের সাথে জড়িতদের দ্রুত বিচার করতে হবে।’
মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলেন, ‘সরাসরি হত্যার সাথে জড়িত ও নির্দেশদাতাদের পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে যারা কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময়ের হত্যাকা-কে সমর্থন করেছেন, তাদেরও বিচারের আওতায় আনা উচিত।’ এ ছাড়া সহিংসতায় যেসব নিষিদ্ধ অস্ত্র ব্যবহার করে হত্যা করা হয়েছে, তা কোথা থেকে দেশে এসেছে, সেটিও খুঁজে বের করার তাগিদ দিয়েছেন মানবাধিকারকর্মীরা।
আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে উল্লেখ করে এইচআরএসএসের উপদেষ্টা নূর খান বলেন, ব্যাপক মাত্রায় দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে। বিপুল অর্থ পাচার করা হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নিজ দফতরের কর্মী অবৈধভাবে শতকোটি টাকা অর্জন করলেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আহত ব্যক্তিদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়ার ওপর জোর দেন তিনি। নিহত ব্যক্তিদের ‘জাতীয় বীর’–এর মর্যাদা দেয়ার দাবিও জানান নূর খান।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com