আশ-পাশের বাড়ি গুলোতে বিদ্যুতের আলো থাকলেও দুলালের বাড়ি থাকে অন্ধকার। সন্ধ্যার পর ওই বাড়ির সকল কাজ চলে কুপি বাতি বা মোমবাতির মিটমিটে আলোয়। পৌরশহরে তার বাড়ি হলেও বিদ্যুতের আলো থেকে বঞ্চিত তিনি। দুলাল চন্দ্র সরকার(৭৫) নেত্রকোনার দুর্গাপুর পৌরসভার সাধুপাড়া এলাকার বাসিন্দা। পেশায় তিনি একজন দর্জি। দুলাল চন্দ্র সরকারের অভিযোগ, প্রতিবেশী বাঁধা দেওয়ার কারণে নিজ বাড়িতে বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না। কবে জ্বলবে তার ঘরে বিদ্যুতের আলো জানা নেই। তবে মৃত্যুর আগে নিজ ঘরে বিদ্যুতের আলো দেখে যেতে চান তিনি। জানা গেছে, ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে নিজ বসত ঘরে বিদ্যুত পেতে আবেদন করেন দুলাল চন্দ্র সরকার। আবেদনের পর পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের লোকজন বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে আসলেও প্রতিবেশীর বাঁধায় ফেরত চলে যায় তারা। এরপর প্রতিবেশীর বাঁধা নিরসনের কথা জানিয়েছেন ২০২১ সালের ০৯ আগস্ট ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার বরাবর একটি আবেদন করেন দুলাল। সেই আবেদনের পরও সংযোগ দিতে পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের লোকজন পূনরায় তার বাড়িতে আসলেও ঘটে একই ঘটনা। বিদ্যুৎ সংযোগ না দিয়েই ফেরত চলে যেতে হয় বিদ্যুৎ অফিসের লোকজনের। নিরুপায় হয়ে ২০২১ সালের ২২ আগস্ট একটি খুঁটির মাধ্যমে বিদ্যুৎ পেতে আবেদন করেন দুলাল। এরপরও বিদ্যুৎ না পেয়ে তিনি খুঁটির পূর্বের আবেদনটির দৃষ্টি আকর্ষণ করে ২০২২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর লিখিতভাবে জানান। তবে আবেদনটি বাতিল হয়। কোনোভাবেই কিছু হয়নি যার কারণে সাড়ে ৩ বছর এভাবেই পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত বিদ্যুতের আলো দেখেননি তিনি। দুলাল সরকার জানান, স্ত্রী ও এক মেয়ে নিয়ে অভাব-অনটনের সংসার ছিল তার। মেয়ে রোড লাইটের আলোতে পড়াশুনা করে এম এ পাশ করেছে। ৪ বছর আগে তিনি মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। দর্জির কাজ করে সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হয় তাকে। দীর্ঘদিনের উপার্জনের টাকায় ছোট একটা ঘর বানিয়ে অসুস্থ স্ত্রী নিয়েই বর্তমানে বসবাস করছেন তিনি। তার ঘরে বিদ্যুৎ নাই। জীবনের সব টুকু সময়ই কাটিয়েছেন অন্ধকারে। শেষ সময়ে এসে কেবল নিজের ঘরে বিদ্যুৎ পাওয়ার আশায় কাটছে দিনগুলো। তিনি বলেন, সবার ঘরে বাতি জ্বলে আমার ঘর অন্ধকার।
আমি কয়েকবার আবেদন করেছি। বার বার বিদ্যুৎ অফিসে গিয়েছি, অনেক নেতাদের কাছে বললেও বিষয়টি সমাধান করে দেননি। আমার অনুরোধ মৃত্যুর আগে যেন, আমার ঘরে বিদ্যুতের আলো দেখে যেতে পারি। বাঁধার বিষয়ে প্রতিবেশী রিপন সরকারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, বাড়ির উপর দিয়ে দুলাল বিদ্যুতের তাঁর নিতে চাচ্ছে। ভবিষ্যতে তিনি বাড়ি করবেন তখন সমস্যা হবে। বাড়ি-ঘরের উপর দিয়ে বিদ্যুতের তাঁর নেওয়ার নিয়ম নেই বলে জানান তিনি। এ ব্যাপারে দুর্গাপুর জোনাল অফিসের ডিজিএম মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ওই বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য ৩-৪ বার লোক পাঠিয়েছিলাম কিন্তু সেখানকার লোকজনের বাঁধার জন্য সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি।
যেহেতু উনি একটি খুঁটির নিদিষ্ট সীমানার ভিতরে আছেন সেখানে আরেকটি খুঁটি দেওয়া যায়না। তাই বাঁধা নিরসন করা সম্ভব হলেই আমরা বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে দিতে পারবো। এ ব্যাপারে দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম. রকিবুল হাসান বলেন, বিষয়টি জানা ছিলো না। আপনি জানিয়েছেন, আমি যতদ্রুত সম্ভব কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।