শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে গত ১৮ই জুলাই পুলিশের গুলিতে রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের ছাত্র ফারহান ফাইয়াজ হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ৫৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার ফারহানের বাবা শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা বরাবর এ অভিযোগ দাখিল করেন। এ নিয়ে ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ১২টি অভিযোগ দেয়া হলো।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, জাহাঙ্গীর কবির নানক, শেখ ফজলে শামস পরশ, ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ওয়ালী আসিফ ইনান, পুলিশ কর্মকর্তা বিপ্লব কুমারসহ ৫৪ জন। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
নিহত ফারহান ফাইয়াজের বোন সায়মা ইসলাম ফারিন বলেন, আমি আদালতে এসেছি আমার ভাইয়ার হত্যার যেন বিচার হয়। এই বিচার যেন ঝুলে না থাকে। ভাইয়া আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়ার পর আমি আর সাধারণ জীবনযাপনে ফিরতে পারিনি। প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি ক্ষণে ভাইয়ার স্মৃতি ভেসে ওঠে। ভাইয়ের জন্য আমার মন সারাক্ষণ কাঁদে। এখন পর্যন্ত আমার পড়ালেখা শুরু করতে পারিনি।
আসামিদের পরিকল্পনায় ও নির্দেশে অন্য আসামিরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সমূলে বা আংশিক নির্মূল করার উদ্দেশ্যে দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে সাধারণ নিরীহ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতাকে হত্যা, নির্যাতন, আটক, গুম করার অংশ হিসেবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী মোহাম্মদ ফারহানুল ইসলাম ভূঁইয়া ওরফে ফারহান ফাইয়াজকে গুলি করে হত্যা করার মাধ্যমে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করার অভিযোগ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় কো-অর্ডিনেটর বরাবর এ অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩-এর ৮ ধারা অনুযায়ী আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, গত ১৮ই জুলাই রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকায় সকাল থেকেই ২৭ নম্বর এলাকায় রাপা প্লাজার সামনে মূল সড়কের কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।
যেখানে ধানমণ্ডি এলাকার কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মোহাম্মদ ফারহানুল ইসলাম ভূঁইয়া ওরফে ফারহান ফাইয়াজও অংশ নেন। সকাল থেকেই কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। দফায় দফায় সংঘর্ষ শুরু হয়। সেই সংঘর্ষে ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের এইচএসসি ২৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ফারহানুল ইসলাম ভূঁইয়া ওরফে ফারহান ফাইয়াজ দুপুরে গুলিবিদ্ধ হন। ফারহানের বন্ধুরা গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে লালমাটিয়ায় অবস্থিত সিটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ২৩ থেকে ৫৪ ক্রমিক নম্বর আসামিরা ১৮ই জুলাই দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে সরাসরি কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং গুলিবর্ষণ করেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে মোহাম্মদ ফারহানুল ইসলাম ভূঁইয়া ওরফে ফারহান ফাইয়াজ সেদিন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।