ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ পৌর শহরের কাঁচা বাজার সরকারি নির্ধারিত জায়গায় না বসিয়ে মহাসড়কে বসায় যানযটে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন পথচারী এবং বিভিন্ন যানে চলাচলকারী যাত্রীরা। বিষয়টি নিয়ে মাসিক আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে বারবার আলোচনা হলেও বাস্তবায়নে নেই কোন কঠোর ব্যবস্থা। দেখা যায়, ময়মনসিংহ- কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের উপর দিয়ে ঈশ্বরগঞ্জ পৌর বাজার। সেই বাজারে প্রতি শুক্রবার ও সোমবার বসে সাপ্তাহিক হাট। এছাড়াও প্রতিদিনই মহাসড়কের দুপাশ দখল করে শাক-সবজি ও ফলমূল নিয়ে বসেন বিক্রেতারা। যদিও মাছ বাজারের পাশেই সরকারি নির্ধারিত একটি জায়গা কাঁচা বাজারের জন্য রয়েছে।জায়গাটি অনেকেই দখল করে বিভিন্ন দোকান বরাদ্দ দিয়েছে। অথচ সেখানে হওয়ার কথা কাঁচা বাজার। তবে সেই জায়গায় কাঁচা বাজার না বসিয়ে শুধু টানিয়ে দেওয়া হয়েছে কাঁচা বাজারের একটি সাইবোর্ড। আর এদিকে মহা সড়কে কাঁচা বাজার বসায় ক্রেতারা সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে ঝুঁকি নিয়ে কিনছেন পণ্য। এতে একদিকে যেমন যানবাহন চলতে না পারায় সড়কে তৈরি হচ্ছে তীব্র যানযট। অন্যদিকে বাড়ছে দূর্ঘটনার শঙ্কা। সেই সাথে দূর্ভোগ পোহাতে হয় এ অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ। গত সোমবার হাটের দিন সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ময়মনসিংহ- কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই পাশে কাঁচাবাজার ও অস্থায়ী বিভিন্ন দোকান বসেছে। দোকানিরা বিভিন্ন প্রকার সবজি, মসলা, পান ও দেশি ফলের পসরা নিয়ে বসেছেন। মহাসড়কের দুপাশে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা, সিএনজি, বাস দাঁড়িয়ে থেকে যাত্রী ওঠানামার কারণে চলাচলকারী বাহন ও যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এদিকে মহাসড়ক দখল করেও কাঁচা বাজারের জায়গা না পেয়ে বাজার চলে যায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায়। সেখানে কাঁচামাল বিক্রি করা হয়। সেই রাস্তাতেও তীব্র যানযট দেখা যায়। অথচ এই রাস্তাটি উপজেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। এই রাস্তা দিয়ে যেতে হয় ঈশ্বরগঞ্জ থানা, উপজেলা ভূমি অফিস, ঈশ্বরগঞ্জ, গৌরীপুর ও নান্দাইল সিনিয়র সহকারি জজ আদালত। এছাড়াও রয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস ও ঈশ্বরগঞ্জ বিশ্বেশ্বরী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়। যে কারনে ওই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি থেকে কাঁচা বাজার সরিয়ে নেওয়ার জোর দাবি জানান সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ। পথচারি আব্দুল হেকিম বলেন, আমি নিয়মিত এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করি, সাপ্তাহিক হাটের দুইদিন রাস্তার উপর অস্থায়ী দোকান বসে। যে কারণে সকাল থেকে যানজট লেগে থাকে। হাটের এই দুই দিন ছাড়া অন্যান্য দিনেও যানজট দেখা যায়। যে কারনে কষ্টে থাকেন পথচারীরা। কাঁচা বাজারের জন্য নির্ধারিত জায়গায় হাট বসাতে স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। বিষয়টি নিয়ে পথচারী আব্দুর রশিদ বলেন, হাটের দুইদিন সড়কের দুই পাশে কাঁচাবাজার ও অটোরিকশা দাঁড়িয়ে থাকার কারণে পথচারীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। সকাল থেকেই রাত পর্যন্ত বাজারে যানজট লেগেই থাকে। এবিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ পৌর বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী সুরুজ মিয়া বলেন, কাঁচাবাজার আগে নতুন বাজারে বসতো তখন সড়কে যানজট থাকতো না। আমাদের নির্দিষ্ট কাঁচাবাজার থাকা সত্ত্বেও লোকজন সড়কে দোকানপাট নিয়ে কেন বসে, আমার ঠিক জানা নাই। তবে মহাসড়কের পাশে বাজার বসানো বিধি মোতাবেক নয়। ঈশ্বরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ওবায়দুর রহমান বলেন, পৌর বাজার ও মহাসড়কে যানজট নিরসনে সর্বপ্রথম কাজ হলো মহাসড়ক থেকে বাজার সরাতে হবে তারপর অটো-সিএনজি গুলো বাজার থেকে একটু দূরে সরিয়ে দিতে হবে। তাহলে যানযট নিরসন সম্ভব হবে। তবে বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রশাসন একটি উদ্যোগ নিলে আমরা তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো। ঈশ্বরগঞ্জ সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও পৌর প্রশাসক ইকবাল হোসাইন বলেন, দোকানপাট বসার কারণে মহাসড়কে তীব্র যানজট তৈরি হয়। সরকারি নির্ধারিত জায়গাটিতে একটু কাগজ জটিলতা রয়েছে। এই জায়গাটা নিয়ে একজন ব্যাক্তি নিজ মালিকানা দাবি করছে। পরে বিষয়টি নিয়ে আমি উনাকে বলেছি তার কাগজ নিয়ে আসতে। এই মুহূর্তে আমরা চেষ্টা করছি কাঁচা বাজারটা কিভাবে মহাসড়ক থেকে অন্য কোথাও নিয়ে বিষয়টি সমাধান করা যায়। আশাকরি দ্রুত সময়য়ের মাঝে একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সারমিনা সাত্তার বলেন, বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে বারবার আলোচনা হয়েছে। এখানে যারা কাঁচামাল ব্যবসা করেন তারা আসলেই গরীব মানুষ। তাদের জন্য অন্য জায়গায় একটা পুনর্বাসন করে এখান থেকে সরাতে হবে। এ ব্যাপারে আলোচনা করে যানজট নিরসনে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে একটু সময় লাগবে।