মঙ্গলবার, ০১ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৩৮ অপরাহ্ন

বাংলাদেশের সাথে উত্তর-পূর্ব ভারতের বাণিজ্য প্রায় বন্ধ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর, ২০২৪

বাংলাদেশের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব ভারতের বাণিজ্য পথ এখনো কার্যত বন্ধ। ব্যবসায়ীদের দৈনিক ক্ষতির পরিমাণ ১০ কোটি টাকারও বেশি। সম্প্রতি বাংলাদেশের ইলিশ ঢুকেছে পশ্চিমবঙ্গে। কিন্তু তার পরও হাসি ফোটেনি ভারতীয় ব্যবসায়ীদের মুখে। বিশেষত উত্তর-পূর্ব ভারতের ব্যবসায়ীদের দাবি, ৫ অগাস্ট থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সীমান্তে বাণিজ্য প্রায় পুরোপুরি বন্ধ ছিল। ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাণিজ্য শুরু হলেও এখনো দিনে ১০ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হচ্ছে তাদের। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের সাথে এখনো পুরোপুরি যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হয়নি। যে ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে টাকার লেনদেন হতো, সেখানেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। ফলে বাণিজ্য কবে স্বাভাবিক হবে, তা স্পষ্ট নয়।
পশ্চিমবঙ্গ বাদ দিলে বাংলাদেশের সাথে ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য পথ উত্তর-পূর্ব ভারতে। উত্তরপূর্বের আসাম, মেঘালয় এবং ত্রিপুরার সাথে এই বাণিজ্য সম্পর্ক আছে। বাংলাদেশে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে দুই দেশের আমদানি ও রফতানির উপর। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্য প্রায় বন্ধ। এই দুইমাসে বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তাদের। গত ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে বাণিজ্য আবার শুরু হলেও তা আগের মতো হচ্ছে না। ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।
উত্তর-পূর্বের তিন রাজ্যের সাথে বাংলাদেশের ১৩টি স্থলবন্দর এবং চারটি নদীবন্দর আছে। ভারত থেকে বাংলাদেশে চাল, পেঁয়াজ, আদা, শুকনো মরিচ, ফল, কয়লা, পাথর, চুনাপাথর ইত্যাদি রফতানি হয়। আমদানির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সামগ্রী আসে কাঠের ফার্নিচার, প্লাস্টিক, সিমেন্ট, জিআই শিট, ওয়েস্ট কটন, আয়রন রড, মাছ, আচার, বিস্কুটসহ বেশ কয়েকটি পানীয়।
ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের গুয়াহাটি শাখার সাধারণ সম্পাদক অমরেশ রায় জানিয়েছেন, ৫ অগাস্ট থেকে আমদানি এবং রফতানি দুটিই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘প্রথমত, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা রাজনৈতিক কারণে গা ঢাকা দিয়ে আছেন। দ্বিতীয়ত, যেসব ব্যাংকের সহায়তায় আমরা ব্যবসা করছিলাম, সেগুলো এখন বিভিন্ন নতুন নিয়মের অধীনে। ফলে আগের মতো লেনদেন সম্ভব হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক ব্যবসায় টাকা আদান-প্রদান হয় ডলারের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে কিছু ব্যাংক আমাদের সহায়তা করতো। কিন্তু তাদের ক্ষমতা এখন কমিয়ে আনা হয়েছে।’
বস্তুত, দুই দেশের ব্যবসায়ীরাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য চেষ্টা করেছেন এবং ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে কিছু কিছু ট্রাক যেতে শুরু করেছে। তবে এতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে এমনটা বলা যায় না।
বাংলাদেশের সিলেটের ব্যবসায়ী জয়ন্ত চক্রবর্তী ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ‘যেসব ব্যাংক আগে ভারতের ব্যবসায়ীদের লেটার অফ ক্রেডিট (এলসি) দিত, তাদের এখন আর সেই অনুমতি নেই। বর্তমান শাসকদল বলছে, বাংলাদেশ ডলারের পরিমাণ কম, ফলে তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বহু ব্যবসায়ী একসময় আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন, তারা ভয়ে আত্মগোপন করে আছেন। পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে আমরা জানি না। তবে এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দুই দেশের বাণিজ্য।’
ভারতীয় ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, আমদানি ও রফতানির ক্ষেত্রে ভারত সরকারের ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট এবং ফরেন এক্সচেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্টের অধীনে বেশ কিছু কড়া নিয়ম আছে। এর আওতায় কোনো বাইরের দেশে জিনিসপত্র পাঠানোর ছয় মাসের মধ্যে টাকা ফিরে না এলে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে সরকার। এক্ষেত্রে তাদের ব্যবসার লাইসেন্স বাতিল করাসহ তাদের গ্রেফতার পর্যন্ত করা যেতে পারে। বাংলাদেশের ব্যাংক ক্ষমতা হারানোর পর এখন ভারতের অনেক ব্যবসায়ী এই আশঙ্কায় আছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘আমরা জানি না বাংলাদেশের পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে এবং আমরা ইতিমধ্যেই যে টাকা বিনিয়োগ করে বসে আছি তা কবে ফেরত পাবো।’ তার দাবি, উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রায় তিন হাজার ব্যবসায়ী বাংলাদেশে ছোট-বড় ব্যবসা করেন। সময়মতো টাকা ফেরত না এলে এদের প্রায় সকলেই কম-বেশি সমস্যায় পড়বেন। লাইসেন্স হারানোর আশঙ্কাও আছে।
আগরতলার ব্যবসায়ী শংকর রায় জানিয়েছেন, ‘ভারত থেকে চাল, পেঁয়াজসহ বেশ কিছু সামগ্রী অল্প হলেও বাংলাদেশে যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে প্রায় কোনো সামগ্রীই ভারতে আসছে না। আমরা লাগাতার বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ রাখছি তবে তারাও আতঙ্কিত। সেই দেশে স্থায়ী সরকার এলে হয়তো ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বৈঠক করে সমাধান সূত্র বের করা যেতে পারে। তবে তা কবে হবে সে বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি।’
এই পরিস্থিতিতে সমস্যায় পড়েছেন আনুষাঙ্গিক ব্যবসার সাথে জড়িত মানুষেরাও। করিমগঞ্জের সুতারকান্দি এলাকার ট্রাকমালিক ফয়জুল আহমেদ ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, তার অন্তত ১২টি ট্রাক আছে। গত ৫ অগাস্ট থেকে তা সীমান্তের পাশে দাঁড়িয়ে।
ফয়জুলের আক্ষেপ, ‘নিজের পরিবার চালানোর পাশাপাশি ট্রাক চালকদের পরিবারের খরচ আমাকে বহন করতে হচ্ছে। এভাবে আর বেশি দিন চালানো সম্ভব নয়। এক সময় এই ব্যবসা থেকে সরে আসতে হবে, কারণ এই কদিনে বহু টাকা ঋণ হয়ে গেছে।’
সুতারকান্দি এলাকায় প্রায় ৩০০ দিনমজুর প্রতিদিন ট্রাক বোঝাইয়ের কাজ করেন। তাদেরও এখন কোনো কাজ নেই। আসামের গুয়াহাটিতে থাকা বাংলাদেশ অতিরিক্ত হাই কমিশনারের কার্যালয়ের সাথে ডিডাব্লিউ যোগাযোগ করেছিল। সেখান থেকে বলা হয়েছে, ‘৫ অগাস্ট থেকে দুই দেশের ব্যবসায় খানিকটা ভাটা পড়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনই বলা সম্ভব নয়।’ বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের সরকার কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে কিনা, এব্যাপারেও তারা কিছু জানে না।
সূত্র : ডয়চে ভেলে




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com