গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার মান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার উম্মে কুলসুম ফেরদৌসী (পুষ্প)। গাজীপুর জেলায় ৫টি উপজেলা ও একটি থানার মধ্যে শ্রেষ্ঠ সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার হিসাবে মনোনীত হয়।প্রাথমিক শিক্ষা হলো একটি শিশুর প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পর্যায়। এখানে কঠোর পরিশ্রম ও মনস্তাত্ত্বিক দিক নির্দেশনা নিয়ে শিশুরা বড় হয়। এখানে শিশুরা নিজেকে তৈরি করার পদক্ষেপ গুলো শিখে। পৃথিবীর অন্য সকল দেশের মতো এতো সুযোগ সুবিধা নেই এই শিশুদের তৈরি করার মতো। এখানে ভৌত অবকাঠামো, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত সমান নয়, দুপুরে টিফিনের ব্যবস্থা নেই, পড়াশোনার জন্য কারিকুলাম যেভাবে আছে তা বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই, বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক দিয়ে শ্রেণি কার্যক্রম চালানো হয় না, টিজি অনুসরণ করতে যে পরিমান সময় ও শিক্ষক প্রয়োজন তা নেই, হাতের লেখা প্র্যাকটিস করানোর জন্য আলাদা কোন শিক্ষক ও সময় নেই এতোসব না থাকা সত্ত্বেও এতো বছর যাবৎ প্রাথমিকের শিক্ষকবৃন্দ নিজেদের বিলিয়ে দিয়ে যুগের পর যুগ এসব শিক্ষার্থী দের সুনাগরিক হিসাবে তৈরি করে যাচ্ছে। কিন্ত তাদের সামাজিক মর্যাদা তেমন নেয়। তাদের সন্তানেরাও সচিব হয়েছেন কিন্ত সেই সব সচিবরা তাদের শিক্ষকদের জন্য কিছু করেন নি কখনো। এই চিন্তাই আসেনি তাদের মাথায়, কিন্তু এখন সময় বদলে গেছে, এখন শিশুর অধিকার ও শিক্ষকের সম্মান সমাজে সবার থেকে বেশি হবে। তাহলে জানি সম্মানিত হবে শিক্ষক। এছাড়া বাকি সব আয়োজন মিথ্যা হবে কারন শিক্ষক সম্মানিত হলে জাতি হবে সমৃদ্ধ। প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার উম্মে কুলসুম ফেরদৌসী (পুষ্প)বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে আমার ভাবনা অনেক, প্রতিটি বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের নিজ নিজ বিষয়ে প্রতি ক্লাসে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। এতে করে কোন শ্রেনিতে কোন শিক্ষার্থী কোন বিষয়ে কতটুকু দূর্বল তার চিত্র শিক্ষকের কাছে সুস্পষ্ট থাকবে এবং তদানুসারে শিক্ষক ব্যবস্থা নিতে পারবেন। এতে তার জবাবদিহিতা সুস্পষ্টিকরনও হবে। সময় বন্টনে দক্ষতা দেখাতে হবে। এই সময়কে ভাগ করে শিক্ষার্থীকে গ্রুপকরে শ্রেণী বিন্যাস করতে হবে। আই কন্টাক্ট সবার সাথে সমান থাকতে হবে। আকৃতির শ্রেণী বিন্যাস এতে খুব বেশি কার্যকর। আমরা যখন প্রশিক্ষণ নিই ও দিই তখন আসন বিন্যাস ট আকৃতির হয়। এতে করে সকল শিক্ষার্থীর প্রতি শিক্ষকের নজর থাকে। প্রতিটি বিষয়ের, প্রতিটি অধ্যায় এনিমেশন করে নাটিকার মতো করে প্রজেক্টেরে প্রদর্শন করতে হবে। এতে করে শিক্ষার্থীরা দেখে দেখে শিখবে। এতে শিখন স্থায়ী হবে। যেহেতু দেখে দেখে শিশুরা সবচেয়ে বেশি শিখে।তাই আরো যে কৌশল গুলো আছে সেগুলো প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিদিন, প্রতি বিষয়ে শিক্ষক ৫ মিমিট সমস্বরে পড়াবেন ও মুখস্থ করাবেন। কারন মুখস্থ করা ছাড়া পড়া স্থায়ী হয়না।এতে করে শিশুরা গুনের নামতা, চারনিয়ম, খুঁটিনাটি সকল বিষয় মুখস্থ করলে গনিতভীতি দূর হবে! বাংলা সাবলীল ভাবে রিডিং পড়ার জন্য অ থেকে চন্দ্রবিন্দু পর্যন্ত মুখস্থ করাতে হবে, সঠিক উচ্চারণে, লিখবে সঠিক প্রবাহে, কার চিহ্ন শিখবে, যুক্ত বর্নের ব্যবহার প্রয়োগ শিখবে। ইংরেজির ক্ষেত্রে সাবলীল রিডিং পড়া পারার জন্য সিলেবল ভেঙে মুখস্থ করানো। এভাবে ভেঙে পড়া শিখলে ইংরেজি রিডিং সহজতর হবে। সাথে সাথে বাংলা ও ইংরেজির কিছু গ্রামারের ব্যবহার শিখাতে হবে। প্রতি বিষয় ভিত্তিক শিক্ষককে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।যদি কোন শিক্ষার্থী পড়তে না পারে, সেই শিক্ষার্থীর পড়ার ব্যবস্থা ক্লাসে করতে হবে। যতো জনবল আছে তার দ্বিগুণ করতে হবে। প্রতিটি শ্রেণির জন্য ২ জন শিক্ষক প্রয়োজন। সকল সুবিধা সবার আগে প্রাথমিক শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত সবাই পাবে। যেহেতু এই প্রাথমিক শিক্ষা শিক্ষার্থীদের তৈরি করে দিলেই মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ পাবে। বয়স নয় বরং মাঠ পর্যায়ে দক্ষতার উপর ভিত্তি করে প্রমোশন জরুরি। এতে করে সকলে ভালো করার প্রতিযোগিতায় নামবে। প্রতিবছর যারা ভালো করবেন তাতে সহকারি প্রাথমিক উপজেলা শিক্ষা অফিসারের প্রাথমিক রিপোর্টের ভিত্তিতে তাদের প্রনোদিত করতে হবে।এতে শিক্ষা ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আসবে বলে আমি মনে করি।