কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়ায় প্রধানমন্ত্রীর মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত ‘শেখ ফজিলাতুন্নেছা দাখিল মাদ্রাসা’ নিয়ে চলছে তুঘলকী কান্ড। এই প্রতিষ্ঠান থেকে ২০১৮ সালের ৩০জুন স্বেচ্ছায় ইস্তফা প্রদান করেন সাবেক সুপার মো. আমিনুল ইসলাম। তার বিরুদ্ধে ৩২ লাখ টাকা হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও তিনি ২০০৪ সাল থেকে একই উপজেলার মধ্যকাশিপুর দাখিল মাদ্রাসায় সহকারি মৌলভী পদে যোগদান করে বেতনভাতাদি উত্তোলন করে আসছেন। তার ইনডেক্স নং-২০০৬৫৫২৮। ২০২০ সালের ১৪ জানুয়ারি শেখ ফজিলাতুন্নেছা দাখিল মাদ্রাসাটি জাতীয়করণ ঘোষণা করা হয়। সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন মো. শাহনুর আলম। কিন্তু জাতীয়করণ ঘোষণার পর সাবেক সুপার আমিনুল ইসলাম কিছু দাঙ্গাবাজ লোকজন নিয়ে মাদ্রাসায় ঢুকে জোড়পূর্ব সুপারের চেয়ারে বসে পরেন এবং সমস্ত কাগজপত্র হাতিয়ে নেন। রোববার কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘শেখ ফজিলাতুন্নেছা দাখিল মাদ্রাসা’ সুপার মো. শাহানুর আলম এসব তথ্য জানান। লিখিত অভিযোগে জানাযায়, ‘শেখ ফজিলাতুন্নেছা দাখিল মাদ্রাসা’ মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও তার পিতা আব্দুর রহমানের সাথে যোগসাজস করে ব্যাকডেটে নিজে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে অবৈধ পন্থায় পূনরায় সুপার পদে নিয়োগ নেন। এসময় নতুন করে পূর্বের শিক্ষকদের পদে গোপনে নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ ও যোদানপত্র দিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন। মাদ্রাসা শুরুর সময় প্রকৃত শিক্ষকগণের কাছেও মাদ্রাসা উন্নয়নের জন্য ইতিপূর্বে তিনি ৩২লক্ষ ৩৮হাজার টাকা নিয়েছিলেন। এখন প্রকৃত শিক্ষদেরকেও তিনি ভয়ভীতি দেখিয়ে মাদ্রাসায় প্রবেশে বাঁধা প্রদান করছেন। ফলে পূর্বের নিয়োগকৃত শিক্ষক কর্মচারীরা তাদের কাছ থেকে নেয়া ৩২লাখ ৩৮ হাজার টাকা ফেরতদেয়ার দাবি জানিয়েছেন। এনিয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার এবং জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার জবরদখলকারী আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুটি রিপোর্ট মহাপরিচালক মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডে প্রেরণ করা হয়। এখন পর্যন্ত কোন সমাধান না হওয়ায় বর্তমান সুপার ও শিক্ষকগণ মাদ্রাসায় ঢুকতে না পেরে রবিবার সকালে কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবে সৈয়দ শামসুল হক মিলনায়তনে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শোনান মাদ্রাসার সুপার মো. শাহানুর আলম। সাংবাদিক সম্মেলনে স্বেচ্ছাচারী ও জবরদখলকারী আমিনুল ইসলামের শাস্তি ও মাদ্রাসাটিতে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানানো হয়। অভিযুক্ত সুপার মো. আমিনুল ইসলাম গত ২০১৮সালের জুন সুপার পদ থেকে ইস্তফা দেয়ার কথা স্বীকার করে জানান, পরে ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটলে আবারো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলে- আমি পুনরায় ঐ বছরের ২৪ জুলাই সুপার পদে যোগদান করি। এ পর্যন্ত ঐ পদে বহাল আছি। নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে টাকার লেনদেন ব্যবস্থাপনা কমিটি করেছে। আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। ইস্তফা দেয়ার ২৪ দিনের মাথায় সুপারছনিক গতিতে কিভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হল জানতে চাইলে-তিনি বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে পরামর্শ দেন। মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুর রহমান ও তার পিতা স্বীকার করেন। তবে কোন প্রকার অনিয়ম দুর্নীতির সাথে পিতা-পুত্রের যোগসাজস নেই। তিনি আরো জানান,মধ্যকাশিপুর দাখিল মাদ্রাসায় সহকারি মৌলভী পদে যোগদান করেন ২০০৪ সালে এবং বেতনভাতাদি উত্তোলন করে আসছেন। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে সর্বশেষ বেতন-ভাতা উত্তোলন করেন। এরপর থেকে আর কোন সরকারি সুযোগ-সুবিধা গ্রহন করেননি। জেলা শিক্ষা অফিসার শামছুল আলম জানান, কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরী করা অবস্থায় অন্য প্রতিষ্ঠানে যোগদান করতে গেলে পূর্ববর্তী প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র বাধ্যতামুলক। এ ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। এ সংক্রান্ত অনেক অভিযোগ। অভিযোগের ভিত্তিতে মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের রংপুর অঞ্চলের উপ-পরিচালক আক্তারুজ্জামান ও কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পৃথক ভাবে তদন্ত করা হয়েছে। বিষয়টি এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দেখছে।