নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, বাংলাদেশে ইতিহাসকে মুক্তভাবে চর্চা করা যায় না। ভারতে মহাত্মা গান্ধীর সমালোচনা হয়, চীনে মাও সে তুংয়ের সমালোচনা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে আইন করে এটা বন্ধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু বললেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম। স্বাধীনতার ঘোষণার জন্য এটাই যথেষ্ট। কিন্তু তাহলে ১৫-২৩ মার্চ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু ইয়াহিয়া খানের সাথে কি আলোচনা করলেন? এই ইতিহাস কি কোথাও লেখা আছে? ২৩ মার্চ বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞাসা করা হলো, আলোচনায় কি অগ্রগতি আছে? তিনি বললেন, অগ্রগতি যদি না হয় তাহলে কথা বলছি কেন? কথা হলো, আলোচনায় অগ্রগতি হলে ২৫ মার্চের গণহত্যা হলো কীভাবে? গত মঙ্গলবার রাজধানীর বিজয়নগরে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের উদ্যোগে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন যুব অধিকার পরিষদের আহবায়ক মুহাম্মদ আতাউল্লাহ। সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব ফরিদুল হক।
মান্না বলেন, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু যার যা আছে তা নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বললেন। তিনি জনগণকে গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে বললেন। কিন্তু শেখ হাসিনা বললেন, ৭ মার্চ রব সাহেবরা বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতার ঘোষণার জন্য পীড়াপীড়ি করছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তাতে সায় দেয়নি। ওনার কথা ধরে নিলে ৭ মার্চের ভাষণ স্বাধীনতার ঘোষণা হয় কীভাবে?
তিনি বলেন, খন্দকার মোসতাক বঙ্গবন্ধুর খুনীদের সঙ্গে জড়িত। ঠিক আছে। কিন্তু ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে কুমিল্লার দাউদকান্দি আসনে নির্বাচিত প্রার্থীর ব্যালট বাক্স ঢাকায় এনে মোস্তাককে জয়ী ঘোষণা করা হলো। এগুলো ইতিহাস। কিন্তু এর চর্চা হয় না। কিন্তু সেই সময়েও একজন মানুষ ছিলেন মওলানা ভাসানী। তিনি বাধার মুখেও আন্দোলন চালিয়ে গেছেন। যেখানেই বাধা পেয়েছেন নিপীড়িতদের নিয়ে বসে পড়েছেন।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, শাসনকে ধরে রাখতে ক্ষমতাসীনরা জাতির মধ্যে বিদ্বেষ ছড়িয়েছেন। যার ফলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পথ সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। অথচ বর্তমান ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। বর্তমান যে অবস্থা তাতে কি আমরা আন্তর্জাতিক পরাশক্তির শক্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রে পরিণত হবো, যেমনটা হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষেত্রে। আমি মনে করি, বর্তমানে যে সংকট চলছে সেখানে মওলানা ভাসানী হলেন আমাদের পথপ্রদর্শক। তাকে অনুসরণ করে আমাদের জাতিগতভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। অন্য কারো থেকে এটা পাওয়া যাবে না।
তিনি আরও বলেন, ভাসানী কংগ্রেসের নেতা ছিলেন। কিন্তু তিনি দেখলেন, যখনই নিপীড়িত মানুষের জন্য আন্দোলন করতে চাচ্ছেন তখন কংগ্রেস বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কারণ, তখন নিপীড়ক ছিলো উচ্চবর্ণের হিন্দু। ভাসানী বুঝলেন কংগ্রেস দিয়ে হবে না। তখন তিনি নতুন দল গঠন করার পরিকল্পনা করলেন।
ডাকসুর সদ্য সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, যারা যখনই ক্ষমতায় ছিলো তারা তাদের অখ্যাত নেতাদের রাষ্ট্রীয় অর্থে দিবস পালন করে। অথচ ভাসানীকে নিয়ে তারা কিছুই করে না। কারণ ভাসানীকে তারা ভয় পায়। আমরা লক্ষ্য করেছি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিজেদের স্বার্থে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ব্যবহার করে। কিন্তু জনগণের জন্য সেই চেতনার বাস্তবায়ন হয় না। তারা নিজেদের স্বার্থে গুম খুনের রাজত্ব কায়েম করছে। মানুষ আজ ভীত সন্ত্রস্ত। মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই, অধিকার তো পরের বিষয়। তিনি বলেন, এই সংকটকালীন মুহূর্তে আমাদের প্রয়োজন ছিলো ভাসানীর মতো একজন নেতা। তিনি আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তরুণ প্রজন্মের কাছে আমরা ভাসানীর আদর্শ তুলে ধরতে চাই। ভাসানীর জীবনকে তুলে ধরতে চাই। যাতে তারা বর্তমানে মানুষের যে দুসময় চলছে তার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে। আমরা মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিতে চাই।
নূর আরও বলেন, বর্তমানে দেশে এক সংকট চলছে। জনরোষ ক্ষমতাসীনদের দিকে তাক করে আছে। যেকোনো সময় বিস্ফোরণ ঘটবে। এদেশের মানুষ এখন বুঝে গেছে যে, নির্বাচনের মাধ্যমে এই সরকার পরিবর্তন হবে না। কারণ, এই অথর্ব নির্বাচন কমিশনার নির্বাচন ব্যবস্থা পুরোপুরি শেষ করে দিয়েছে। উনি মুক্তিযোদ্ধা এজন্য আমি সম্মান জানাই কিন্তু ওনার কর্মকা-ে আমরা লজ্জিত। আগের রাতেই উনি নির্বাচনের ফলাফল প্রস্তত করে রাখেন। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্র, আইন, সংবিধান সংষ্কার করে জনগণের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আর এই কাজে ভাসানী আমাদের আদর্শ।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ব্যারিস্টার সিহাব উদ্দীন বলেন, ভাসানী এই দেশের স্বপ্নদ্রষ্টা। তিনি কাগমারি সম্মেলনে পাকিস্তানিদের সালামাইকুম বলে স্বাধীনতার ঘোষণার হুমকি দিয়েছিলেন। ১৯৭০ সালে তিনি ভোটের বাক্সে লাথি মার, বাংলাদেশ স্বাধীন কর বলে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। দেশের সব গণ আন্দোলনে ভাসানী ছিলেন নেতৃত্বে। অথচ আমাদের দূর্ভাগ্য আমরা ভাসানীর মতো নেতাদের সম্মান দিতে পারিনি।
বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ভাসানী ছিলেন আমাদের মুক্তির দিশারি। মুজিবনগর সরকারে তিনি উপদেষ্টা ছিলেন। অথচ ভারত তাকে নজরবন্দী করে রাখে। আমাদের দেশের মানুষ ৯ মাস জীবন দিয়ে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা আনলো। সেখানে সব দল ছিলো। কিন্তু সরকার গঠন করলো একটি দল। ভারত আমাদের নিয়মিত সীমান্তে হত্যা করে আমরা প্রতিবাদ করার সাহস দেখাতে পারি না। অথচ নেপাল সীমান্তে হত্যার পর ভারত মন্ত্রী পাঠিয়ে ক্ষমা চায়। এই হলো আমাদের বর্তমান অবস্থা। আজ যদি ভাসানী থাকতেন তিনি ঠিকই গণ আন্দোলন গড়ে তুলতেন। এছাড়াও বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক রাশেদ খাঁন, শ্রমিক অধিকার পরিষদের আহবায়ক আবদুর রহমান, রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য রাখাল রাহাসহ অনেকেই বক্তব্য রাখেন।