নারী মা জাতি আর সেই কারণে ক্ষেত্র বিশেষে বহু তাৎপর্য রয়েছে নারী জাতী নিয়ে। আবার ইসলামের দৃষ্টিতে নারীকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হয়েছে সন্মানের সাথে। সুন্দর ধরণীর বুকে বেঁচে থাকার জন্য নারীর অবদান অনস্বীকার্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে সমগ্র বিশ্বে। আর সেই সূত্র ধরেই নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া শাখাওয়াত হোসেনের জন্ম দিন ও মৃত্যু বার্ষিকি উপলক্ষে পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদে পাঁচটি ক্যাটাগরিতে পাঁচজন সফল নারীকে-২০২৪ অদম্য নারী সম্মাননা (ক্রেষ্ট ও সনদ) প্রদান করা হয়েছে। উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তাদেরকে ওই সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মনিকা আক্তার গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, এবছর নেছারাবাদ উপজেলা থেকে অর্থনৈতিক ভাবে সাফল্য অর্জনকারী সহ সমাজ সেবায় অগ্রণ ভূমিকা পালন করা নারীদের সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। এদিকে উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উদ্যোগে “অদম্য নারী পুরস্কার“ শীর্ষক কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পাচটি ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত ০৫ পাঁচ জনকে অদম্য নারীর তালিকায় আছেন। নেছারাবাদ উপজেলা থেকে পাঁচ জন মনোনীত নারীরা হলেন মোসাঃ খাদিজা আক্তার, রেবেকা সুলতানা সুপ্তি, শেফালী রানী গাইন, মোসাঃ হাফিজা আক্তার ও মারজান ফেরদৌস প্রমুখরা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রায়হান মাহমুদ অদম্য নারী পুরস্কার পদক তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে। শত বাঁধা বিপত্তি উপেক্ষা করে সাফল্য অর্জনের মধ্যে রয়েছে গুয়ারেখা ইউনিয়নের পাটিকেলবাড়ী গ্রামের মোসাঃ খাদিজা বেগম, স্বামী শেখ মোঃ জাকির হোসেন। জন্ম থেকেই দারিদ্র্যের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হয়েছে। দরিদ্রতার কষাঘাতে বাবা অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেয়। ফলে লেখাপড়ার সুযোগ পায়নি।স্বামী ছিল বেকার। ফলে পরবর্তী সময়ে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়ে ক্ষুদ্র ব্যাবসা শুরু করেন। বর্তমান সময়ে নিজের পরিবর্তন হওয়ার পাশাপাশি নারী জাগরণে অগ্রণ ভূমিকা পালন করে পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। দ্বিতীয় চমক ছিল সোহাগদল ইউনিয়নের পূর্ব সোহাগদল গ্রামের বাসিন্দা রেবেকা সুলতানা সুপ্তিও পুরস্কারে ভূষিত হয়। শিক্ষা ও চাকুরির ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী হিসেবে রেবেকা সুলতানা সুপ্তি পুরস্কার অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। তৃতীয় চমক দেখাতে সক্ষম হয়েছে দৈহারী ইউনিয়নের গনকপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সুনীল চন্দ্র গাইনের স্ত্রী শেফালী রানী গাইন। উপজেলায় সফল জননী নারী কোঠায় পুরস্কৃত হয়েছে। চতুর্থ চমক ছিল সুটিয়াকাঠী ইউনিয়নের বাসিন্দা মোঃ ইয়াসিন আরাফাতের স্ত্রী মোসাঃ হাফিজা আক্তার। কঠিন সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয়েছে এ নারীকে। শত নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করেছেন নব রূপে। আর সেই সূত্র ধরেই এবারের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের সন্মানে পুরস্কার নেয় যোগ্যতার মাপকাঠি দিয়ে। ২০১০ সালে বিয়ে হয় একটা বেকার ছেলের সাথে। এক বছর পরে একটা কন্যা সন্তানের মা হয়। এরপর স্বামী ছেড়ে চলে যায়। অধম্য নারী জীবন জীবিকার জন্য সংগ্রাম করে মেয়েকে গার্মেন্টসে চাকরি দেয়। পরবর্তী সময়ে শত সংগ্রাম করে দর্জি দোকান দেয় দোকানের পাশাপাশি কসমেটিকস এবং মনিহারী সামগ্রী বিক্রি শুরু করেন। এভাবেই সে নতুন উদ্যোমে জীবন শুরু করেছেন। আর শেষ চমক দেখাতে সক্ষম হয়েছে স্বরূপকাঠি সদর ইউনিয়নের স্বরূপকাঠি গ্রামের বাসিন্দা মোঃ ইমাম সিকদারের সহধর্মিণী মোসাঃ মারজান ফেরদৌস। সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন নারী নেত্রী। সংসার ধর্মের পাশাপাশি সমাজ সেবায় নিয়োজিত থেকে বিগত সময়ে স্বরূপকাঠি পৌরসভার মধ্যে মহিলা কাউন্সিলর হিসেবে নিজেকে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। দলমত নির্বিশেষে এবারের অদম্য নারী পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে পাঁচ নারী। পাচজন নারীরা যোগ্যতার মাপকাঠি দিয়ে সফলতা অর্জন করে জয়িত। পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে। সমাজে নারীরা অবহেলিত নয়। নারী জাতি আমাদের জন্য আর্শীবাদ। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী অদম্য নারী সন্মাননা পুরস্কারের অনুষ্ঠান ছিল চমৎকার ও পরিপাটি পরিবেশে ভরা।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রায়হান মাহমুদ স্যার সহ সুশীল সমাজের শীর্ষ নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন। ছাত্র সমাজের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিত সমগ্র অনুষ্ঠানকে বেগবান করে তুলে। অনুষ্ঠানে জেলার ও উপজেলার বহু ইলেকট্রনিকস ও প্রিন্ট মিডিয়ার গণমাধ্যম কর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।